সর্পবিদ আর তক্ষকের কথোপকথন যেন একটা গুলিয়ে যাওয়া শব্দ- তাই মনে হচ্ছে না পাঠকের কাছে? এগোল মেটাতে দেখতেই হবে সৌমিত্র বসুর নতুন নাটক 'সাপ কথা'-
মানে ওদিক থেকে খাব, এদিক থেকেও খাব" শুনে কি মনে হচ্ছে, বর্তমানের কোনও রাজনৈতিক নেতার ভাইরাল হয়ে যাওয়া গোপন সংলাপ? এটা সৌমিত্র বসুর নতুন নাটক 'সাপ কথা' র সর্পবিদ এবং তক্ষকের কথপোকথন। সব গুলিয়ে যাচ্ছে? না, এই নাটক গুলিয়ে দেবার চেষ্টা করেনি, চেষ্টা করেছে ঘুমিয়ে পড়া সমাজকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে জাগাতে। গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা আর টাকার যে নোংরা খেলা চলছে, সে বিষয়ে চোখ মেলে তাকাতে।
বর্তমানের গনতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র খেলাকে তুলে ধরতে বেছে নেওয়া হয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। কাহিনী শুরু হয়েছে রাজা পরীক্ষিতের হরিণ শিকার আর ঋষি শৃঙ্গীর অভিশাপে। যে অভিশাপে রাজার আয়ু মাত্র সাতদিন। এই সাতদিনে মহারানীর ষড়যন্ত্র, রাজাকে জীবিতমৃত করে রাখার চেষ্টা প্রাচীন ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিলেও তক্ষক আর সর্পবিদের সংলাপ মনে করিয়ে দেয় বর্তমান দিনের অর্থললুপ দলবদলু রাজনৈতিক নেতাদের।
নাটকের শুরু এক নাটককারকে দিয়ে যিনি তাঁর পৌরাণিক নাটকের স্ক্রিপ্ট খুঁজে পাচ্ছেন না। সেই স্ক্রিপ্ট খুঁজে পেয়েছে যে নাট্যদল তারা পৌরাণিক বিষাদের নাটকটিকে করতে চেয়েছে হাসির নাটক কারণ আজকের পৃথিবী তো চায় সমস্যা ভুলে হাসতে। কিন্তু আসল নাটক কার সৌমিত্র বসু ব্রেখট আঙ্গিক মিশিয়ে কি উপস্থিত করতে চেয়েছেন? ট্র্যাজেডি না স্যাটায়ার?
অত্যন্ত সামান্য উপকরণে সাজানো স্টেজ, পোশাকের বাহুল্য নেই, আলোর ব্যবহার যতটুকু প্রয়োজন কিন্তু তার মধ্যেও ফুটে উঠেছে পৌরাণিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ। সময় মেশিনে না বসেও কি করে এই সময় সারণী এত সহজে এপার ওপার করা যায় সে বোধহয় এমন নাটককাররাই পারেন।
চোখে পরে সর্পবিদ, তক্ষক, রাজা, রানীর সাবলীল প্রশংসাযোগ্য অভিনয়। ছোট ছোট চরিত্র ও তাদের সংলাপ নাড়া দেয় সমাজকে -তোমরা দুই পার্টি পাঙ্গা নেবে আর আমি একবার বাঁচব একবার মরব! প্রতীকী গাছ সাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবি। যাঁরা জীবিত হয়েও জড়।
আজকের দিনে জেগে ওঠার জন্য এমন নাটকের বোধয় খুব প্রয়োজন ছিল।