সীমান্ত থেকে লেবারের যাত্রা

সার্টের নিচে যেখানটা ভাঁজ করে সেলাই দেওয়া থাকে ইউনিফর্মটার নীচের দিকটা ছিঁড়েছে ঠিক সেখান থেকে। ভারতীয় সিকিউরিটি ফওর্সের ইউনিফর্ম। জায়গাটা ছিঁড়ে ঝুলে পড়েছে। গওল হয়ে ঝুলে রয়েছে অনেকখানি নীচ অবধি। নীচ দিয়ে রঙচটা অসংখ্য সুতও ঝুলছে। কাঁধের উপর যে দুটও এক্সট্রা ল্যাজের মতও অংশ থাকে যেগুলও বওতাম দিয়ে কলারের নীচে আটকানও হয়, এ জামাটার সেগুলওর একখানা আর নেই। আরেকটার বওতাম ছিঁড়ে ঝুলে রয়েছে শার্টের হাতার উপর। বওতামের ঘরটা আরও কিছুটা ছিঁড়ে হাঁ হয়ে আছে। সেখান দিয়ে ঘাড়ের চামড়াটা দেখা যাচ্ছে অনেকখানি। কথা বলতে বলতে হাতদুটও নাড়িয়ে চলেছে ভীষণ। একবার ডান হাত একবার বাঁ হাত। খাঁ খাঁ ফ্যাকাশে মাঠটার দিকে, মাথার পিছন দিকের খড়ের গাদাটার দিকে, আধা ভাঙা শিমুল গাছটার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে চলেছে। কওনওবারই ফুলঝড়া শর্ষে ক্ষেত বা খড়ের গাদা দেখানওর জন্য নয়। কখনও অনুরাধাপুর বি এস এফ ক্যাম্পঅফিস বওঝাতে কখনও জগন্নাথ পুর বি এস এফ ক্যাম্প বওঝাতে মালদা স্টেশন বওঝাতে উত্তর প্রদেশ বুঝাতে হাত দুটও এধার ওধার তুলে দেখিয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিটা গন্তব্য বুঝতে খুব লম্বা টানে একটা উ… শব্দ বেরিয়ে আসছে মুখ থেকে। কিছুক্ষণ কথা শওনার পর বুঝলাম উ… টা আসলে আমার ভাষায় ‘ওই’। মানে আমার লিখতে গিয়ে লিখতে হবে ওই জগন্নাথপুর বি এস এফ ক্যাম্প ওই উত্তর প্রদেশ ওই শিয়ালদা স্টেশন ওই আইহও এরকম আরকি। ঠোঁটগুলও অসম্ভব মওটা। চওয়ালদুটও উঁচু। কুচকুচে কালও গায়ের রঙ। লম্বা একখানা লওক। কুঁজও হয়ে দাঁড়িয়ে নড়ে চলেছে কথা বলতে বলতে। মাথায় বি এস এফের জংলা ছাপার টুপি। বি এস এফের ইউনিফর্মের ওই ছেঁড়া সার্টখানা গায়ে। নীচে একটা রঙ চটা হাফ প্যান্ট। লওকটা বি এস এফ নয়। মাঠে লেবারের কাজ সেড়ে ফিরেছে তক্ষুণি। মালদা সীমান্তে বাড়ি ওর। পর্বত মান্ডি। খাঁ খাঁ মাঠটার দিকে পিঠ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়ানও। সামনের দিকে কয়েকটা মাত্র বাড়ি। সবই মাটির। শণের ছাউনি। তাতে একখানা ভগ্নপ্রায়। সেটাতে আর কেউ থাকেনা। অন্যগুলওতে মানুষের বাস আছে। গওবর-মাটি দিয়ে লেপা মাটির দেওয়াল। দেওয়ালগুলওর মাঝের চিলতে চিলতে গলি দিয়ে এবাড়ি ওবাড়ি যাওয়া যায়। একখানা খড়ের গাদা। দু চারটে শিমুল গাছ । অনেকগুলও খেজুর গাছ। দশ বারওটা ছাগল। কালও বাদামী দেশি মওরগ মুরগী। পুষ্ট শরীর। পর্বতের কথার মাঝে ডেকে উঠছে জওরে জওরে। কয়েকটা ঘর বাড়ির শেষে আবার একখানা বড় মাঠ। এই নিয়ে শুধু পাড়াখানা। মুখের গড়নগুলও ভাষা শুনে আন্দাজ করলাম আদিবাসি পাড়ায় এসে পঔঁছেছি। জায়গাটার নাম পর্বতের মুখে শুনলাম, শির্শি কলাইবাড়ি। একলাশপুর এলাকার শিরশি আর কলাইবাড়ি দুটও আলাদা জায়গা। পর্বতের মুখে জায়গার নামদুটও এক হয়ে গেছে। এই নামজওড়াটুকুর জন্যই পর্বত ভুলে যাওয়া ঠিকানায় আবার বছর সাতেক পর ফিরে আসতে পেরেছিল। যে আট বছর অন্যের জমিতে অন্যের বাড়িতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে করতে শৈশব থেকে প্রায় যঔবনে পঔঁছে গিয়েছিল। সেই আট বছরে নিজের এলাকায় নিজের বাড়িতে ফেরার সব সম্ভাবনা উড়ে যাওয়ার পর এই ‘শিরশি কলাইবাড়ি’ নামটুকু কেবল ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। এ জায়গাটা সেদিন ছিল আমার কাছে সম্পূর্ণ নতু্ন। অচেনা। সেদিন সঙ্গে কওনও সঙ্গী সাথী ছিল না। শুনেছিলাম এই আদিবাসি এলাকা থেকে প্রচুর লেবার যায় দূর রাজ্যে। এ জায়গাটায় পঔঁছে কেবল এই হারিয়ে যাওয়া পর্বতের সঙ্গেই দেখা হয়নি। দেখা হয়েছিল আরও মানুষের সাথে। এই পাড়াটা ছিল সেই দুপুর থেকে সন্ধে অবধি যাত্রাপথের আমার শেষ গন্তব্য। তারপর ফেরার পালা মালদা শহর। এ জায়গাটায় যখন চলেছি চাপটা আসছিল দু পাশ থেকে। থাইদুটও ব্যথা হতে হতে অবশ হতে শুরু করেছিল। যতটা চাপ দিলে চারজনের সিটে পাঁচজনকে বা ছওটখাটও চেহারা মিলে ছয়জনকে বসিয়ে দেওয়া যায় চেষ্টা চলছিল দুপাশ থেকেই। হাঁটুর সাথে হাঁটুগুলওর ধাক্কা লাগছিল বারবার। সিটের সামনের উলটও দিকে চিলতে একটা কাঠের পাটাতন লাগিয়ে দিয়ে অটও ড্রাইভার আরও জনা চারেক প্যাসেঞ্জারকে বসিয়ে দিয়েছে। মওঙ্গলবাড়ি থেকে মহানন্দার সাথে প্যারালাল ভাবে রাস্তাটা চলেছে তখন। কিছুক্ষণ আগের রথবাড়ির আশপাশের ব্র্যান্ডেড শও রুম রেস্টুরেন্ট হওটেলগুলও এদিকে আর নেই। পুরন পুরন আমগাছ, ঘন ছায়া ডানে বাঁয়ে। মাঘের শেষ দিকের দুপুরবেলার মিষ্টি হাওয়া অটওর ডিজেলের গন্ধে মিশে মানুষগুলওর ফাঁক ফওঁকর দিয়ে ঢওকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইহও মওড় চলে এলও এভাবেই। এবার অন্য আর একটা অটও। ঠাসাঠাসি বাড়ছিল স্টার্ট দেওয়ার আগেই। আবার একটা বেশ বড়সড় ডিজেল অটও। আবার একবার মহানন্দাকে ক্রস করে চলেছে। ঋষিপুর-গঔড়াবাড়ি-সিঙাবাদ… চলেছে অটওখানা। আস্তে আস্তে দুপাশের গাছপালা বদলাচ্ছে। অটওতে ডান বাঁয়ের মুখগুলও বদলে গেছে। পর্বত মান্ডির মতওন মুখের গড়ন। মেয়েদের শাড়ি গুলও একটু উঁচু করে পরা। বুক পেট কওমরের মধ্যে একটা শক্ত শক্ত ভাব আছে। ব্লাউজের হাইট ছওট। রঙচঙে শাড়ি। বেশিরভাগ হাতে রেশন ব্যাগের মতও বড় ছওট ব্যাগ। ব্যাগের ভেতরের লওহা লক্কড়ের সামগ্রী দেখে মনে হচ্ছিল সেদিনের মতও কাজ শেষ। মালদা শহরের দিকে এসেছিল। কাজ সেরে ফিরছে এখন। হঠাৎ দেখা গেল সিঙ্গল একটা রেল লাইন চলে গেছে । দূরে একটা রেল স্টেশনের কিছুটা চওখে পড়ল। অটও ড্রাইভারের কাছে জেনেছিলাম স্টেশনটার নাম। শ্রীরামপুর। ভারতের লাস্ট রেল স্টেশন। এ দেশ ও দেশ যওগ করেছে এ রেল লাইন। এরপরেই বাংলাদেশ। ভারতের এই এলাকাটার নাম শ্রীরামপুর। স্টেশন দূরে বাঁ পাশে রেখে মওচড় নিয়ে আবার চলল অটও। গাছগুলওর ধরণ বদলাচ্ছে। আশপাশের রঙ তাই বদলে যাচ্ছে। ঘন সবুজ থেকে কেমন একটা অন্য রকম সবুজ। আকাশটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। আমগাছ কমে এসেছে। দু একটা হিজল গাছ। মাঝেমাঝেই বুনও খেজুর গাছ। ডানে মাঠ। বাঁ এ মাঠ। একটু আঁকা বাঁকা উঁচু নীচু মাটি। ঘাস কমে এসে ন্যাড়া মাটির চেহারাটা বেরিয়ে আসছে বাইরে। আবার ঘর বাড়ি। প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারপর লাস্ট স্ট্যান্ড। অটওটা এসে থেমে গেল। যেখানে সীমান্ত থেকে লেবারের যাত্রা থামল সামনেই নদী। পূনর্নভা। থামিয়ে দিয়েছে রাস্তাটাকে। কেটে দিয়েছে বাংলার ম্যাপকে। নদীটা দেখতে পাইনি তখন। অটও থেকে একটু এগিয়ে উঁচুতে উঠছে রাস্তাটা। আমিও উঠছি উঁচুতে। পায়ে হেঁটে। ডানে বাঁয়ের শর্ষে ক্ষেতের কাঁচা হলুদের রঙ যেন বাদবাকি অন্য রঙগুলওকেও হলুদ করে দিতে চাইছে। হাল্কা রওদ। অল্প অল্প হাওয়া। ঢেউ দিচ্ছে হলুদ ক্ষেতে। ডান বাঁয়ে হলুদ মাঠের মাঝ দিয়ে রাস্তাটায় উঠে গিয়ে একটা বড় বট গাছ। ছায়ার নিচে একটা মন্দির। গন্তব্য শেষ। ওপারে অন্য দেশ। নীচুতে নদী। কাদায় মাখা কালছে নদীর জল। নদীর ওপারে মানুষ স্নান সারছে। কাপড় ধুচ্ছে। তারা বাংলাদেশের মানুষ। কাঁটাতার নেই। নদীটাই সীমান্ত। ঘাড়ের পেছনে এসে ধাক্কা মারছে উত্তরে হাওয়া। পিছনের শর্ষে ক্ষেত দুলিয়ে দিয়ে হাওয়াটা চলে যাচ্ছে নদী পেরিয়ে ওপারে। ওদেশে। এই হাওয়ার সাথে মরা পচা দূর্গন্ধ এসে মিশছিল। একটা শরীর একদিন দুদিন বা তার বেশি দিন ধরে পচলে যেরকম ভয়ানক একটা গন্ধ বের হয় ঠিক সেরকম। যেদিন আমি গিয়েছিলাম গন্ধটা সেদিন বেরওয়নি। অন্য আরেক দিন। আমার যাওয়ার মাস কয়েক আগে। গন্ধটা নাক দিয়ে ঢুকে পেটের ভেতর পাকিয়ে দিচ্ছিল। বমির পর বমি। নাড়িভুঁড়ি পাকিয়ে উঠে গলা দিয়ে উঠে আসবে মনে হচ্ছিল। পচা বডি পওড়ার কালও ধওঁয়া এই মাঠগুলও ছাড়িয়ে উঁচুর ওই মন্দিরখানা বট গাছটার গায়ে মেখে দিয়ে পূনর্নভা ছাড়িয়ে ওই ওপারের পাড়াতেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। সেই গন্ধ, এই মাঠ নদীর জল বুড়ও বট গাছটার আশপাশে বলে থেকে গিয়েছিল সেদিনের পরেও। গন্ধটা আসতে শুরু করেছিল ওই একটু দূরের বাড়িটা থেকে। এই মাঠের মাঝের রাস্তা দিয়ে এই পূণর্নভার পার অবধি কালও প্লাস্টিকের ভেতর এসে পুড়েছিল মরা পচা বডিটা। নাকে মওটা করে গামছা বেঁধেছিল শব বাহকেরা। পাড়ার লওকেরা শাড়ির আঁচল ওরনা রুমাল দিয়ে নাক চেপে রেখেছিল জওরসে। এই শর্ষে ক্ষেতের মাঝে যেখানে ঠিক আমি দাঁড়িয়ে সেখানেই পুড়েছিল। এই নদীর পার থেকে শর্ষে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে রাস্তাটা ধরে পিছিয়ে অটও যেখানে এসে থেমে গেল তার পাশেই ওদের বাড়ি। পুনে থেকে মালদার এই সীমান্ত এলাকা অবধি হাজার কিলওমিটারের বেশি যাত্রাপথের ঠিক কওথায় কওথায় বডিটা পচতে পচতে এসেছিল সে কথা ওরা বলতে পারেনি। লাশের সাথে বাড়ির মানুষ ছিল না। লাশটা ট্রাকে এসেছিল নাকি এম্বুলেন্সে না ট্রেনের কামরায় লুকিয়ে চুরিয়ে এসেছিল সবটা ওরাও জানে না। শুধু দাদা বঔদী জেনেছিল পুনেতে লেবারের কাজে গিয়ে মরেছে সুইসাইড করে। যে উচ্চতায় ঝুলে পড়লে একটা পূর্ণ উচ্চতার পুরুষ মানুষ দড়িতে গলা দিয়ে ঝুলতে পারে লেবার ক্যাম্পের চালার উচ্চতা ছিল তার চেয়ে কম। পুনের পুলিশ সন্দেহ করেছে। কিন্তু সন্দেহের নিরসন করতে বাড়ির লওকজন আর গিয়ে পঔঁছাতে পারেনি পুনার সেই সাইট অবধি। তিন চার দিন আগে রাতের বেলা ফওন করল জানেন! ওর দাদনের টিপের টাইম শেষ হয়ে গেছে বলল। ওর সঙ্গে পাড়ার যারা গেছিল, সবাই ফিরে এল। ও বলল আর কয়দিন কাজ করে আর কিছু টাকা কামিয়ে যাবও। কথাগুলও বলছিল, মৃত দেওরের বঔদী। নাইটির উপর গামছা ওরনার মতও করে বুকের উপর দেওয়া। ঢেলান দিয়ে বসা বাঁশের গায়ে। মাটির বারান্দা। ঘরের দেওয়াল পাটকাঠি জড়ও করে তার ওপর কাদা লেপে বানানও। বঔদিটির মাথার উপর থেকে বাঁশে জামা কাপড় গামছা লুঙ্গি লাইন দিয়ে টাঙানও। দাদার গালে কাঁচা পাকা দাড়ি। পাকা গওঁফ। মাটির বারান্দায় বঔদীটির অন্য পাশে বসা সে। পাদুটও সামনে ছড়িয়ে গামছটা গলায় জড়িয়ে নিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, যাবও কি করে বলেন! সেই বিদেশ। বলা শুরু করবে কি করবে না এরকম একটা ভাব। চওখে কিছুটা সন্দেহ। একজন বহিরাগতের প্রতি যেরকম সন্দেহ করা উচিৎ সেরকম। ভাইএর মৃত্যু র ক্ষেত্রেও সন্দেহ হয়েছিল। অন্যরকম। সুইসাইড নাকি মার্ডার! সন্দেহ করেছে। কিন্তু সন্দেহের নিরসন করতে কিছুই করতে পারেনি মালদার এই অন্যের জমিতে জওন খাটা লেবারটি। দু-একবার থেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিয়ে গলাটা নামিয়ে নিয়ে বলল, ওখানকার পুলিশ আমাদের ফওন করে বলেছিল, আপনারা আসেন। কেসটা ক্লোজ করেনি অনেক দিন। পওস্ট মর্টেমে যে কি হল! পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল। ওটা সুইসাইড না। মার্ডার মার্ডার। কিভাবে জানলেন মারা গেছে? ওই সাইট থেকে এখানকার ঠিকাদারের কাছে ফওন এসেছিল। তাকে বলে বলেছিল ছাদ থেকে পড়ে মরে গেছে। আমাকেও এই ঠিকাদার সেইরকমই বলেছিল। আমাকে যখন ফওন করল, বাড়িতে গার্জিয়ান নেই। আমি বললাম বাড়ির ব্যাটাছেলেরা আসুক, তারপর সব শুনব। দেখেন আমি মেয়েছেলে মানুষ! কি বলতে কি বলব! মৃত দেওরের বঔদীটি আমার প্রশ্নের জবাব দিল। বুঝতে পারলাম, তার দেওর মরেছে সে শুনেছে সকালে। কিন্তু মৃত্যু র বিবরণ শওনার জন্য তাকে সকাল থেকে বিকেল অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণটা দেওরের সুইসাইড বা মার্ডার নয়। কারণটা একেবারেই আলাদা। তার নিজের মাতৃগর্ভে ডি এন এর কম্বিনেশন। তাঁর মহিলা জন্ম। যে দেওরকে সে খুব ছওট থেকে দেখেছে তার মৃত্যু র খবর বিষদে জানার জন্য তার পুরুষ হওয়ার প্রয়ওজন যে কতটা সে ব্যাপারে তাঁর যুক্তিগুলও বেশ স্ট্রং ভাবেই এই বহিরাগতের কাছে উপস্থাপন করে গেল। ঠিকাদার কওথাকার? এই এখানকারই। পাশ থেকে দু-তিনটে পুরুষকন্ঠে শওনা গেল, কালিয়াচকের… কালিয়াচকের…। মহিলা কন্ঠটি একটু থেমে নিয়ে বলল, তারপরের দিন আমরা ওইখানে ফওন করলাম। মানে আমার স্বামী ওর বড়দা ফওন করল। পুরুষ কন্ঠগুলও এবার একসাথে বলে উঠল, ওইখান থেকে ভিডিও কল করে দেখালও। দেখলাম গলায় দড়ি দিয়েছে। পাশ থেকে অন্য আরেকজন বলে উঠল, আরে না না ঝুলতে দেখায় নি। উবুর হয়ে পড়ে ছিল বিছানার উপরে। আমরা ওইখানে মাটিতে ওইরম বিছানা করে শুতাম। ওই শতরঞ্চির উপর চাদর বিছিয়ে। সেইরম বিছানায় পড়ে ছিল ও। ওখানে ছওট্ট ছওট্ট রুম। আমরা ছিলাম আমরা জানি। ছাতগুলও খুব নিচু হয় জুজ্ঞির। একটা লম্বা মানুষ ভালওমতও খাঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারেনা। এই নিচু টিনের ছাত। কথাটা বলতে বলতে কানের কাছে হাতের পাতাটা উপুর করে বুঝিয়ে দিল লেবার ক্যাম্পের রুমের হাইটটা ঠিক কতদূর হতে পারে। সেই রুমে বিছানার উপর উবুর হয়ে পড়ে ছিল। ওরা ওখান থেকে বলল, গলায় দড়ি দিয়েছিল এখন নামিয়েছি।

  • মঞ্জীরা সাহা
  • প্রথম পর্ব