এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ ভাবলে এ চাকরি আপনার জন্য নয়। শেষ দুটি শব্দ বদলে দিয়ে জপতে হবে—এলাম, দেখলাম আর বন্ধ করলাম। আপনাকে নিয়োগের উদ্দেশ্য একটিই। বন্ধ করা। পরবর্তী চাকরির ইন্টারভিউতে আগের চাকরিতে “কি ভাবে ব্যবসা বাড়িয়েছেন?”, প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে, “ছি ছি! ব্যবসা বাড়ানোর কথা একেবারে মুখে আনবেন না স্যার। আমি তো বন্ধ করার লোক।“ প্রশ্নকর্তারা মৃদু হেসে ফের শুধোবেন, “বেশ। আমাদের ব্যবসাগুলোয় কি ভাবে তালা ঝুলোবেন বলুন তো দেখি।” সদুত্তর দিতে পারলেই মোটা মাইনের চাকরির নিয়োগপত্র আপনার পকেটে। বন্ধ করার বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারলে, কিংবা ব্যবসা বন্ধের কারিগর হিসেবে বাজারে একটু নাম করে ফেলতে পারলে দেশ-বিদেশের সংস্থা থেকে আসবে মায়াবী হাতছানি। ইনবক্স উথলে পড়বে হবু নিয়োগকর্তার ইমেলে। অফার লেটারে জরির ঝালর। মোবাইল বাজবে কোকিলসুরে, বার বার। শুধু ‘হ্যাঁ’ বলার অপেক্ষা।
পোশাকি নাম শাটডাউন ম্যানেজার। সোজা কথায় বলতে গেলে কোনও সংস্থার কারখানা অল্প দিন কিংবা বহু দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যে করিৎকর্মা লোকেরা ঠিকঠাকভাবে নিতে পারেন, তাঁরাই এমন চেয়ারে বসার যোগ্য। কর্পোরেট জগতে গ্রোথ আবাহনের চিরাচরিত উপপাদ্যের বাইরেও কিছু অনু্সিদ্ধান্ত থাকে। পাতাবাহার গাছের থেকে যেমন কিছু শুকনো পাতা ছেঁটে ফেলতে হয় গাছেরই আগামী দিনের সুরক্ষায়, ঠিক তেমনভাবে কোনও সংস্থার কিছু রুগ্ন ইউনিটকেও শীতঘুমে পাঠাতে হয়, ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই শীতঘুম হতে পারে সাময়িক, কিংবা পাকাপাকি। কোনও প্রকল্পে দাড়ি টানারও কিছু ব্যাকরণ থাকে। শাটডাউন আধিকারিকরা এই ব্যাকরণ লেখেন। অথবা, এতদিন ধরে মেনে চলা, সম্মত ব্যাকরণে তাঁরা গাড়ি চালান লেন বদল না করে। তাঁদের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হওয়া বাধ্যতামূলক। একইসঙ্গে থাকতে হবে পুরনো কর্ম অভিজ্ঞতায় ব্যবসা বন্ধ করার খতিয়ান। শাটডাউন ম্যানেজার পদের নামটি শুনলে তার পাশে বসে যেতে পারে একটি আশ্চর্যবোধক চিহ্ন। তবে পদাধিকারীদের যোগ্যতা মামুলি নয় মোটে।
কাজের বাজারে ছিপ ফেলে যখন আঙুল নাচিয়ে স্ক্রল আপ-স্ক্রল ডাউন করি, তখন চোখ ছানাবড়া হয়। ব্রেনে ঝিলমিল লাগে। দেখি, কর্মখালির আধুনিক বিজ্ঞাপনও আমূল বদলে গিয়েছে কালের নিয়মে। সোজাসাপ্টা বিজ্ঞাপনের থেকে ঢের বেশি ফুটে ওঠে এমন সব শূন্য পদের বিজ্ঞাপন, যা ধাঁধার থেকেও জটিল মনে হয় আপাতভাবে। প্রথম কয়েক লাইন পড়ে বোঝা যায় না নিয়োগটি কিসের জন্য। সারবত্তা বোঝার জন্য পড়তে হয় শুরু থেকে শেষ। ‘স্নানকারিগররা স্বাগত’ হেডিংওয়ালা একটি কর্মখালির বিজ্ঞাপন শেষ পর্যন্ত পড়ে বুঝেছিলাম, চাওয়া হচ্ছে ইন্টেরিয়ার ডিজাইনার, যাঁর স্পেশালিটি বাথরুম। মাঞ্জা দিয়ে বলতে চাইলে ওয়াশরুম কিংবা রেস্টরুম। এমন উদাহরণ চোখে পড়ে হাজারে হাজারে। দিন বদলানোর সঙ্গে বদলে গিয়েছে চাকরির আধুনিক ডেজিগনেশনও। শুধুমাত্র ‘ম্যানেজার চাই’সম বিজ্ঞাপনের চোখে আজ গান্ধারীর আবরণ। সাদামাটা ঘোষণার দিন শেষ।
আমাদের ফ্ল্যাটে বছর পঁচিশের যে ছেলেটি নিত্যদিনের আবর্জনা নিতে আসে, সে ডিউটি আওয়ার্সের পরে একেবারে ফিটফাট হয়ে যায়। সামাজিক লজ্জা গায়ে মেখে বলি, ছেলেটি গ্র্যাজুয়েট। মাসছয়েক আগের এক সন্ধেবেলায় ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে। আমায় বলেছিল, “চাকরি খুঁজছি দাদা। আপনারা যা দিচ্ছেন তাতে আর পোষাচ্ছে না। বেটার অপরচুনিটি চাই।“ বুক পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, “আমি তো খুঁজছিই। আপনিও আপনার নেটওয়ার্কে দেখবেন একটু।” অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম কার্ডে ছাপা ওর ডেজিগনেশনকে। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট একজিকিউটিভ। আমার চোখের ভাষা পড়ে ফেলেছিল ও। কলার তুলে বলেছিল, “কেন! আমাদের কোনও ডেজিগনেশন থাকতে নেই বুঝি?” ওর কলার তোলাকে আমি সমীহ করব আজীবন। প্রসঙ্গত জানাই, একটি লাক্সারি হাউজিং কমপ্লেক্সে সমগোত্রীয় কাজ পেয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের চাকরিতে ও ইস্তফা দিয়েছে সম্প্রতি।
যদি ঘুমই কর্ম, ঘুমই ধর্ম, ঘুমই আরাধনা হয়? “অফিসে কি তুমি ঘুমোতে যাও?”, এমন প্রশ্নের উত্তরে যদি শ্লোগান দেওয়ার মতো গলা তুলে বলতে পারা যায়, “ইয়েস স্যার, আমি ঘুমোতে যাই এবং ঘুমিয়ে পয়সা পাই? এনি প্রবলেম?” রুপকথার গল্পও যেন হার মেনে যায় এমন কল্পনার কাছে। হবেন নাকি প্রফেশনাল স্লিপার? বাংলাটা করা যেতে পারে, পেশাদার ঘুমন্ত মানুষ! বালিশ-গদি কিংবা প্রিমিয়াম হোম লাইটিংয়ের সংস্থায় এমন ঘুমপটু কর্মযোগীদের চাহিদা তুঙ্গে। শুধু ঘুমপটু হবে চলবে না। হতে হবে ঘুম বিশেষজ্ঞ। দামী থেকে অতিদামী ম্যাট্রেসের উপরে ইচ্ছেমতো ঘুমিয়ে দিতে হবে সেই গদির রেটিং। যে ঘুমমেদুর হাল্কা আলোটি সারারাত জ্বলেছিল ঘরে, দশ রেটিংয়ের স্কেলে কত পাবে সেটি? পেশাদার ঘুম বিশেষজ্ঞদের রেটিংয়ের উপরে অনেকাংশেই নির্ভর করে এমন সামগ্রীগুলির বিপনন কৌশল। হয়তো চাকরি হতে পারে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাতেও। রাতে স্লিপিং পিল খেয়ে প্রাতে নথিভুক্ত করতে হবে ঘুমের অভিজ্ঞতা। গল্প হলেও সত্যি। এমন সত্যি নিয়েই তো গুঁড়ো মশলার প্যাকেটের উপরে হাতে ভি-চিহ্ন দেখিয়ে জেগে থাকেন সেলিব্রিটি শেফ।
এক টি-টেস্টারের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কয়েক বছর আগে, এক বিবাহবাসরে। দামী গাড়িতে করে আমায় লিফ্ট দেওয়ার সময় শুনিয়েছিলেন ওঁর করুণ কাহিনী। “বুঝলে ভায়া! চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়র তালিকায় যে খাবারগুলো আলো করে থাকে, তার অধিকাংশই আমার কালো তালিকায়। পেঁয়াজ-রসুন-আচার কিংবা উগ্র গন্ধের যে কোনও খাবার আমার জীবন থেকে ছেঁটে দিয়েছে এই চাকরি। সুখটান দিতে পারি না। সুরা কি জিনিস তা গিয়েছি ভুলে। বিধাতা বুঝি চা চা কাহিনী পড়তে পড়তে আমার বিধির লিখন এঁকে দিয়েছিলেন। আর কি সহ্য হয়?” আমি পত্রপাঠ উত্তর দিয়েছিলাম, “অসহ্য। এখনও আছে সময়। আর বিলম্ব নয়।“ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লাইনগুলোও মাথার মধ্যে ফড়ফড় করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও। আমি দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম সাধ্যমতো। আমার কথা শোনার পরে ভদ্রলোক পকেট থেকে দেড়লাখি আইফোনটা বের করে যন্ত্রটির গায়ে হাত বুলোলেন। সেলফি ক্যামেরায় একটি চুমু খেলেন উদাসীনভাবে। বিড়বিড় করে বলছিলেন, “এসেন্সের লাইনে এসেছি। পেশেন্স তো রাখতে হবেই।“ হয়তো সেটি তার স্বগতোক্তি ছিল। জানি না।
টি টেস্টার তো জানা হল! কিন্তু ডগ ফুড টেস্টার? কাজের বাজারে দারুন ডিমান্ড। কোনও খাবার খেয়ে সারমেয়বাহিনীর মস্তি এবং পুষ্টি হবে কি না, তা ঠিক করে থাকেন এই কুকুরখাদ্য বিশারদরা। জীবিকার প্রয়োজনে কোনও চারপেয়ে খাওয়াদাওয়া করে লেজ নাড়ালেই তাঁদের সুখ এবং একইসঙ্গে কেরিয়ারের উত্থান। ইন্টারভিউ প্যানেলে নিয়োগকর্তার সঙ্গে তাঁদের প্রশ্নোত্তরপর্ব শুনতে বড় সাধ জাগে। এক মৎস্যখাদ্য বিশারদের কথা মনে পড়ছে। দক্ষিণী। নিজস্ব ফর্মুলেশনে বানানো মাছের খাবারের সঙ্গে তাঁর এতটাই আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল যে উনি চায়ের সঙ্গে বিস্কিট খাওয়া পরিত্যাগ করেছিলেন। এক চামচ মাছের খাবারের দানা নিয়ে নিতেন। সেটাই খেতেন। প্রসঙ্গত জানাই, মাছের খাবার অর্থাৎ ফিশ ফিডের গন্ধের সঙ্গে মারি বিস্কিটের গন্ধের আশ্চর্য মিল রয়েছে। দানাগুলো পুকুরে ছুঁড়ে মারার পরে মাছেরা যখন ঘাই মারত, তাঁর মুষ্টিবদ্ধ দুটো হাত ক্রিকেট আম্পায়ারের ছক্কা দেখানোর মতো শূন্যে উঠে যেত। মাছেরা খাবার খেলে উনি খিলখিল করে হাসতেন।
জানেন, আপনার হয়ে লাইন রাখার লোকও মজুত আছে বাজারে? তাঁদের ভিজিটিং কার্ডে লেখা থাকবে, প্রফেশনাল কিউয়ার। বাংলায় পেশাদার লাইনরক্ষক। বিদেশে নাকি এমন লোকেরা চোখের পলক ফেলার মধ্যেই চাকরি পেয়ে যান। লাইনরক্ষককে ভাড়া করতে গেলে গুণতে হতে পারে ঘন্টাপ্রতি চল্লিশ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় তিন হাজার টাকারও বেশি। সুবিধা প্রচুর। কোনও জায়গায় বিরাট লাইন পড়ার সম্ভাবনার আঁচমাত্র পেলে এমন লাইনরক্ষককে বুক করে দেওয়া যায়। আপনার পালা আসার ঠিক কয়েক মিনিট আগে উনি আপনাকে ফোন করে বলবেন, “এবারে আপনি চলে আসুন স্যার। তোমার হল শুরু, আমার হল সারা!”
মাস কমিউনিকেশন পড়া, একটি লিটল ম্যাগাজিনের জন্মদাত্রী আমার এক বান্ধবী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিল, ‘অনেক হয়েছে জীবনে। আজ থেকে আমি ঘোষ্ট রাইটার হলাম।‘ এই পোস্টের উত্তরে ফেসবুকের দেওয়ালে তিন ধরণের মন্তব্য ফুটে উঠেছিল।
-এভাবে জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। আত্মহত্যা আসলে কাপুরুষতার পরিচয়। তুই কি এসকেপিস্ট? বেঁচে থাক।
- শেষ পর্ষন্ত ভূতের গল্প লিখবি তুই? তারাশঙ্কর-সন্দীপন-কাফকা পড়ার পরে এই ছিল ভবিতব্য? ও মাই গড। বিশ্বাস করতে পারছি না।
- অভিনন্দন। যুগের সঙ্গে একেবারে তাল মেলানো প্রফেশন। বেস্ট অফ লাক।
নেটদুনিয়ায় কর্মখালি সংক্রান্ত ঘোষণায় কান পাতলেই মালুম হয়, ঘোষ্ট রাইটাররা কেরিয়ারের মইতে দ্রুতগতিতে উঠে পড়ছেন বেশ। নিজের পরিচয় গোপন করে অন্যের নামে কিছু লিখে দেওয়াই হল ঘোষ্ট রাইটারদের কাজ। চুক্তিমাফিক এই লেখকরা পর্দার আড়ালেই থেকে যান আজীবন। নাম কুড়োন ওই লেখকরা, যাঁরা একটি বর্ণও লিখে উঠতে পারেননি। শোনা যাচ্ছে, অনলাইন বন্ধুত্ত্ব পাতানোর অ্যাপগুলোতে ইদানীং এমন লেখকদের খুব রমরমা। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা ‘অসাধারণ’ভাবে লিখে দেবেন আপনার প্রোফাইলনামা। ওঁরা দাবি করেন, আপনার সম্পর্কে ওই লেখা একবার কেউ পড়ে দেখলে মোহ কাটানো মুশকিল! আপনার চৌম্বকত্বে হবু বন্ধু-বান্ধবীরা ধরা দেবেন আলপিনের মতো। আমার স্কুলজীবনের এক বন্ধু এখন প্রোফাইলের ঘোষ্টরাইটার। ফ্রিলান্স করে। শুনেছি, ওর দম ফেলার সময় নেই। আরও শুনেছি, লাখপঁচাত্তরের একটি ফ্ল্যাট বুক করেছে সম্প্রতি।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘পিৎজা ডেলিভারি করার লোক চাই। স্কুবা ডাউভিং জানা বাধ্যতামূলক।‘ আজব সমীকরণ মেলাতে না পেরে লিঙ্কে ক্লিক করে আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। জানা গেল, একটি অতি ধনী সংস্থা অফিস খুলেছে সমুদ্রগর্ভে। কর্মচারীদের খিদে পেলে জলভাগ থেকে স্থলভাগে অর্ডার আসবে। গরম পিজা চাই, তাজা। তাই স্কুবা ডাইভিং! তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করা আমার এক সুহৃদ বলেছিল, “মাসে দুটো শুক্রবার আমাদের ককটেল পার্টি হবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না। সিপিও-র উপরে চাপ বেড়ে যাচ্ছে খুব।“ সিপিও কথাটি আমার কাছে অশ্রুতপূর্ব ছিল। বন্ধু বলল, “আরে চিফ পার্টি অফিসার! আমাদের অফিসে আছে তো।“
কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়। চিফ একজিকিউটিভ অফিসার কিংবা সিইও কথাটি হয়তো ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু সংস্থায় ওঁদের ডাকা হচ্ছে চিফ চিয়ার লিডার বলে! পদের ভার একই থাকলেও হয়তো ভর কমেছে এমন সম্বোধনে। টেকনিকাল সাপোর্ট টিমের কর্মচারীরা অনেক জায়গায় নামাঙ্কিত হচ্ছেন টেক মাঙ্কি বলে। এর বাংলা আর নাই বা করলাম! কোনও সংস্থার বিপননের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের ভিজিটিং কার্ডে নতুন পদের নাম হয়ে যাচ্ছে মার্কেটিং রকস্টার। সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা হয়ে যাচ্ছেন হ্যান্ডশেকার। বিশ্বজুড়ে ডানা মেলছে অজস্র স্টার্ট-আপ সংস্থা। এমন সংস্থার কর্মচারীদের প্রথম দিকে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবই করতে হয় পোশাকি পদের তোয়াক্কা না করে। এমনই একটি সংস্থার শীর্ষপদে থাকা এক ব্যক্তি তাঁর ভিজিটিং কার্ডে ছেপে দিয়েছিলেন, চিফ এভরিথিং অফিসার। ছোট কথায়, সেই সিইও!
দুনিয়াজুড়ে কর্মখালির বিজ্ঞাপনের এমন রদবদলে কিংবা সাবেকি পদের এমন নতুন পোশাকে ওয়াকিবহাল শিবিরের অনেকের মুখেই হাসির ঝলক। তাঁরা বলছেন, “এই বদল নিয়োগকর্তা আর কর্মী—দুপক্ষের জন্যই তাজা হাওয়ার মতো। একঘেয়ে জীবনে নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় যদি মুখে একটু হাসি খেলে যায়, ক্ষতি কি!” তাঁদের আরও দাবি, হাল আমলের কাজের দুনিয়ায় বেড়ে চলেছে ক্রশ ফাংশানিংয়ের চাহিদা। অফিসের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠের মধ্যে রাখা চিরাচরিত কাচের দেওয়াল ভেঙে দিয়ে ক্রমশ জরুরি হয়ে পড়ছে টিমওয়ার্ক। একসঙ্গে কাজ করার অভ্যেস। পদের নামগুলো বদলে দেওয়ার ফলে কিংবা একটু লঘু করে দেওয়ার কারণে মানুষ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছেন আরও বেশি। দৃপ্ত হচ্ছে টিম স্পিরিট। এতে আখেরে তো সংস্থারই লাভ। অবশ্য টিমওয়ার্ক হোক কিংবা না হোক, নতুন জামা পরতে কার না ভাল লাগে!
দিনদশেক আগে একটি ঘটনার কথা বলে শেষ করি। সকাল সাড়ে নটার শিয়ালদহ স্টেশন। টিটিসাহেব টিকিট পরীক্ষা করছেন। এক যাত্রী কিছুতেই টিকিটটি খুঁজে পাচ্ছেন না। টিটিবাবুও নাছোড়বান্দা। যাত্রী চিৎকার করে বললেন, “অত উতলা হওয়ার কি আছে আপনার? কি এমন রাজকার্য করছেন বলে ভাবেন? কোথাকার কোন টিকিট চেকার রে?” টিটিসাহেব গলা আরও উঁচিয়ে বললেন, “ওই নামটি আরেকবার বলবেন তো সোজা লক আপে পুরে দেবো। আমি টিকিট চেকার হতে পারি, কিন্তু আসলে রেভিনিউ প্রোটেকশন অফিসার। বুঝেছেন? দেখি, টিকিটটা বের করুন এবারে।“