অরিজিৎ মন্ডল: বর্তমানে বড় পর্দায় কোন ছবি আসছে, কানে এলেই গুগুল সার্চ করে আমরা খুঁজি, OTT তে কবে আসছে। প্রথমত হাজারো ব্যাস্ততা, সারাদিন পর বাড়ি ফিরে ডিনার সারতে সারতে স্মার্ট টিভিটাকে বলে দিলেই সে দেখিয়ে দেয় যা দেখতে চাই। তাই হয়তো আমরা ওই পর্দায় দেখাটা কিছুটা হলেও এড়িয়ে যাই।
নিজের কথাই বলি, সাংবাদিকতার হাত ধরে নানা কাজের মধ্যে গত ৩ সপ্তাহ ধরে নতুন ছবি 'দাবাড়ু' নিয়ে বেশ কয়েকটা স্টরিও করতে হয়। তার সঙ্গে উপরি পাওনা এই ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা মানুষগুলো সঙ্গ। প্রথম দিন বিশ্বনাথ দা আর সংঙ্ঘশ্রী-র সাক্ষাৎকার। সেদিন একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে বিশ্বনাথ দা।প্রশ্নটা ছিল; "এই যে এই সাফল্যের যায়গায় আসতে কতটা পরিশ্রম করেছ, লড়েছো? "উত্তরে বিশ্বনাথ দা বললেন;"স্ট্রাগল? না এই জায়গায় আসতে যতটা না স্ট্রাগল করেছি, তার থেকে অনেক বেশি স্ট্রাগল এই জায়গাটা ধরে রাখতে করতে হয়"। সাক্ষাৎকার শেষে বিশ্বনাথ দা কে বলেছিলাম; "দাদা স্ট্রাগলের নতুন সংজ্ঞা শিখলাম।" দাদা হেসে বলেছিলেন; "হ্যাঁ রে বাবু, এটাই বাস্তব"।
সেদিন ওদের থেকে এই 'দাবাড়ু' ছবিটার কথা শুনে, আর সূর্য শেখর গাঙ্গুলির গল্প মিলে একটা ভালোলাগা তৈরি হয়। বলে রাখা ভালো, দাবা খেলা নিয়ে নিজেরও ঝোঁক নেহাতই কম নয়। একটা সময় বাবার সঙ্গে খেলতাম, বাবা চলে যাওয়ার পর, ছেলে একটু বড় হতেই ওকে শিখিয়ে এখন ছেলের সঙ্গেই খেলি। তাই বাপ-বেটার জোড়া ইচ্ছে ছবিটা দেখার।
ছবিটা মুক্তির ঠিক আগের দিন ,অর্থাৎ ; ৯ মে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় ঋতু দি(ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত), শিবু দা (শিবপ্রসাদ মুখার্জি) নন্দিতা দি, পথিকৃৎ, চিরঞ্জিত দা, ছোট্ট সুর্য-- এঁদের। আর সবার ৩৯ মিনিটের জমজমাটি আড্ডার পর ছবিটা দেখার জন্য একটা খিদে জন্মায়। তাই শনিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে এই শহরের একটি অভিজাত মলে পৌঁছাই। যদিও বৃষ্টির কারনে হলে পৌঁছাতে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয়। তবে হলে পৌঁছে সিট নম্বর দেখে বসতে না বসতেই শুরু হয় ছবি। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় একটা আস্ত পপকর্নের বাক্স নিয়ে বসে পড়লাম ছবিটা দেখতে।
একদম প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে, ছবিতে যাঁরা আছেন ,তাঁদের অভিনয়ের ভালো-মন্দ বিচার করার ধৃষ্টতা আমার নেই। ছবির শুরুটা ছোট্ট সুর্যর অভিনয়, দাদু নাতির অনন্য মেলবন্ধন মুগ্ধ করে আমাকে। কখন যে ছোট্ট সুর্য বড় হয়ে গেলো ,টের পাইনি-- এত সুন্দর ভাবে ক্লাইমেক্স তৈরি করা হয়েছে। তার পর এলো ঋতুদি, উফ কি অসামান্য দক্ষতা তাঁর অভিনয়ে। কোচ হিসাবে চিরঞ্জিত দার ত্যাগ (ছবিতে অভিনীত), নিজের অসুস্থ স্ত্রী কে ফেলে সূর্যের সাফল্যের জন্য ভিনদেশে পাড়ি দিলেন। শেষ দেখাটাও হলনা আর। তার পর সূর্যের চলার পথে ধাক্কা, হঠাৎ করে সামনে পাহাড় ভেঙে পড়ে, আবার সেখান থেকে ফেরা। অভাবের সংসারে মা হিসাবে ছেলের পাশে থাকা।বাবার স্যাক্রিফাইস। দাদুর প্রতিদান। পড়শির অপমান। আর অবশেষে সেই সাফল্যের সিড়ি।
অনবদ্য, অসাধারন এই সমস্ত কথাগুলো অনেকটাই কম। তবে আগেও আমি শিবুদা, নন্দিতা দি বা পথিকৃৎ এর ছবিতে এই অনুভূতি ব্যাপারটা ভীষণ রকম খুঁজে পেয়েছি। গল্পটা পুরোটা বললাম না। আমি অনুরোধ করব, পরিবারের সবাই মিলে যান ছবিটা দেখুন, মন কতখানি ভরবে তা আপনার মনই বলতে পারবে ।তবে বুক ভরে অক্সিজেন নিয়ে আসতে পারবেন এটুকু আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি।
ছবি 'দাবাড়ু'