১৯০৫ সালে ১৬ ই জুলাই ভারতের বড়লাট কার্জণ সাহেব বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করেন। বঙ্গ ভঙ্গ বলতে নানা বিধ ভাসা ভাসা ধারণা প্রচলিত আছে। সেকালের বাংলা আসলে ছিল একটি বিরাট প্রেসিডেন্সি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার প্রশাসনের অধীনে এক সময় বর্তমান উত্তর প্রদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।যে কারণে ১৮৫৭ সালে যে বেঙ্গল আর্মি বিদ্রোহ করেছিল কিন্তু তাতে ছিল মূলত পূর্বিয়া হিন্দুস্তানী, সিপাহী। তাঁরা ছিলেন বর্তমান ভারতের পূর্ব উত্তর প্রদেশ সেকালের দেশজ রাজ্য অযোধ্যা অঞ্চল এবং উত্তর বিহারের অধিবাসী।একই ভাবে অসম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি র অধীনে আসে ১৮২৬ সালে।, ১৮৭৪ সালে বাংলা থেকে আলাদা হয়ে অসম একটি প্রদেশ হিসাবে স্বকৃতি পায়। ১৮৭৪ সালে অসম প্রদেশ গঠনের সময়ের ভারতের বর্তমানে যে সাতটি উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্য আছে তার মধ্যে অরুণাচল এবং দেশজ রাজ্য ত্রিপুরা বাদ দিয়ে সব কটি অসম প্রদেশের অধীনে ছিল। সেই সঙ্গে অধুনা বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট মানে সিলেট সুনামগঞ্জ , মৌলভীবাজার এবং, হবিগঞ্জ যুক্ত ছিল। ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ অসম প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হলো। একালের বাংলাদেশের সব জেলা শুধু বৃহত্তর যশোহর এবং খুলনা অঞ্চল বাদ দিয়ে পূর্ববঙ্গ এবং অসমের অন্তর্গত ছিল । এখনকার পর্শ্চিমবংগের মালদহ জেলা উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, জেলা এবং জলপাই গুড়ি জেলা পূর্ববঙ্গ এবং অসমের সঙ্গে যুক্ত হলো। সে যুগে কোচবিহার দেশীয় করদ রাজ্য ছিল। ১৮৭২ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী বাংলায় প্রথম জানা যায় যে বাংলাভাষীর মধ্যে মুসলমান প্রায় অর্ধেক এবং ১৮৮২ সালে দেখা যায় বাঙালিদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা বেশি এবং তাঁরা মূলত পূর্বববঙ্গের পদ্মা মেঘনা এবং যমুনার উর্বর পলিমাটির অঞ্চলে থাকেন যে খানে অবিভক্ত বাংলার মূল জন বসতি। কিন্তু বাংলার শ্রেণী বিন্যাসে সে যুগে মধ্যবিত্তর মধ্যে বাঙালি মুসলমান প্রায় নেই। হিন্দু জমিদার মুসলমান প্রজা হিন্দু পেশাজীবী শেণির মানুষ এবং মুসলমান মক্কেল, রোগী প্রভৃতি ।
কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ১৮৮৫ সালে দীর্ঘ্য কৃষক বিদ্রোহের ফলে ধনী এবং অবস্থাপন্ন কৃষকরা জমির উপর অধিকার পান।, সেই সময় আবার পাট কলের আবির্ভাবের ফলে পূর্ববঙ্গে পাট চাষ বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী পাটের বাজার থাকায় ধনী পাট চাষিদের হাতে অর্থের সমাগম হয়। সেই সময় এই ধনী চাষিরা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে এবং মহাবিদ্যালয়ে এবং এবং কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে থাকেন । তৈরী হয় এক উদ্ভিন্ন বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী যার মূল ছিল পূর্ববঙ্গে। যদিও বাংলার মুসলমান সমাজের নেতৃত্ব ছিল উর্দু ভাষী আশরাফ জমিদারদের হাতে। ঢাকার নবাব পরিবারের নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বা ফরিদপুরের নবাব আব্দুল লতিফ এবং কলকাতার বিচারক আমির আলী প্রমুখের হাতে।তবে ১৯০৫ সালের নতুন পূর্ব বঙ্গ এবং অসম প্রদেশে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল প্রায় শতকরা ৬৬ ভাগ। এবং অসম তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সেই সময় পূর্ববাংলার থেকে জনসংখ্যার চাপে এবং জমিদারদের অত্যাচারে বহু মুসলমান কৃষক অসমে প্রবেশ করেন। ব্রহ্মপুত্রের চর অঞ্চলে অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলায় বসবাস শুরু করেন।
১৯০৩ সালে বঙ্গ ভঙ্গের ঘোষণার পরে কলকাতায় হিন্দু বাবু সমাজে আলোড়ন শুরু হয় এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিবাদ করেন।, সেই সময় অবশ্য ফার্সি ভাষার প্রখ্যাত পন্ডিত এবং কোরান শরীফের অন্যতম বাংলা অনুবাদক গিরিশ চন্দ্র সেন হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একমাত্র বঙ্গভঙ্গের সমর্থক ছিলেন। আবার অন্যদিকে প্রথম দিকে সেন্ট্রাল মুহাম্মাদান্ এসোসিয়েশন বঙ্গ ভঙ্গের বিরুদ্ধে তাঁদের বক্তব্য জ্ঞাপন করেন । মোসলেম ক্রনিকল দেলোয়ার হোসাইন আহমেদ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, কাজিমুদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী এমন কি নবাব খাজা সালিম উল্লাহ এর বিরোধিতা করেন। উদ্ভিন্ন মুসলমান মধ্যবিত্ত রাজনীতিজ্ঞবুদ্ধিজীবী ও লেখকদের মধ্যে, আব্দুর রাসূল খান, বাহাদুর মুহাম্মদ ইউসুফমুজিবুর, রহমানআব্দুল, হালিম গাজনাভি লেখক, ইসমাইল হোসাইন সিরাজী কবি, মুহাম্মদ গোলাম হোসাইন মৌলভী, লিয়াকত হোসাইনসৈয়দ, হাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং বর্ধমানের উকিল আবুল কাসেম বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে মত দেন । এর মধ্যে বর্ধমানের আবুল কাসেমযিনি হলেন পরবর্তীকালের প্রখ্যাত মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাসিমের পিতৃদেব, ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দক্ষিণ হস্ত। সে কথা আবুল হাসিম সাহেব তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন। লেখক ইসমাইল হোসাইন সিরাজীও ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের ভক্ত। তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ তুরস্ক ভ্রমণে তিনি বাঙালি পাঠকের কাছে এনভার পাশার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তুরস্কের সুরেন্দ্রনাথ বলে। তবে ১৯০৪ লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গে ভ্রমণ করা কালে ভাষণ দিয়ে বলেন মুসলমানদের মুঘল শাসনের পরে এই প্রথম এতো বড় সুযোগ আসবে। ঢাকা আবার হবে পূর্ব বাংলার রাজধানী। নতুন প্রদেশে শিক্ষার প্রসার হবে সরকারি অনুদান আসবে। পূর্ববাংলার উদ্ভিন্ন মধ্যবিত্ত মুসলমান সমাজের কাছে তা ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ উপনিবেশিকতাবাদের থেকে মুক্তির উপায়। নবাব খাজা সলিমুল্লা বঙ্গ ভঙ্গের সমর্থন করেন । ১৯০৬ সালে ঢাকাতেই মুসলিম লীগ আত্মপ্রকাশ করে নবাব খাজা সলিমুল্লার নেতৃত্বে। যদিও বাংলার মুসলমান এই সংগঠনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন নি।
রবীন্দ্রনাথ এই বঙ্গ বিভাজন কে দেখেছিলেন হিন্দু এবং মুসলমান বাঙালির বিভাজন হিসাবে।, সেই সময় তিনি একটি অনবদ্য দেশপ্রেমিক সংগীত রচনা করেন। সোনার বাংলা গানটি প্রকাশিত হয় বঙ্গদর্শন এবং বাউল পত্রিকাতে ১৯০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে । গানটির স্বরলিপি প্রকাশিত হয় সংগীত বিষয়ক পত্রিকা সংগীত বিজ্ঞান প্রবেশিকাতে একই মাসে। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন সংস্কৃতিঅর্থিনীতি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে স্বদেশী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাংলার বিকাশ হবে , গড়ে উঠবে স্বদেশী শিল্প। সেই সঙ্গে তিনি হিন্দু মুসলামানের রাখি বন্ধন উৎসব করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বদেশী আন্দোলনে যোগদানের কারণ ব্যাখ্যা করে ১৯০৮ সালে লেখা সদুপায় প্রবন্ধে বলেন
বাংলাদেশের যে অংশের লোকেরা আপনাদিগকে বাঙালি বলিয়া জানে সে অংশটি , খুব বড় নহে ; তাহার মধ্যেও যে ভূভাগ ফলে শষ্যে উর্বর , ধনে ধান্যে পূর্ণ ,যেখানকার অধিবাসীদের শরীরে বল আছে ,মনে তেজ আছে , ম্যালেরিয়া এবং দুর্ভিক্ষ যাহাদের প্রাণের সার শুষিয়া লয় নাই , সেই অংশটি মুসলমান প্রধান - সেখানে মুসলমানের সংখ্যা বৎসরে বৎসরে বাড়িয়া চলিয়াছে , হিন্দু বিরল হইয়া পড়িতেছে। এমন অবস্থায় বাঙালির বাংলাটুকুকেও যদি এমন করিয়া ভাগ করা যায় যাহাতে মুসলমান -বাংলা ও হিন্দু -বাংলা কে মোটামুটি স্বতন্ত্র করিয়া ফেলা যায় তাহা হইলে বাংলাদেশের মতো এমন খণ্ডিত দেশ ভারতবর্ষে আর একটিও থাকিবে না ।
আজকের দক্ষিণ এশিয়াতে এর পরিণতি কি আমরা জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বাংলা ভাগ বিরোধী আন্দোলন কি মুসলিম বিদ্বেষ প্রসূত। রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে বঙ্গদর্শন নব পর্যায় অশ্বিন ১৩১২ বঙ্গাব্দে ব্যাধি ও প্রতিকার প্রবন্ধে লেখেন
আমরা জানি , বাংলাদেশের অনেক স্থানে এক ফরাসে হিন্দু-মুসলমান বসে না- ঘরে মুসলমান আসিলে জাজিমের এক অংশ তুলিয়া দেওয়া হয় , হুকার জল ফেলিয়া দেওয়া হয়।, তর্ক করিবার বেলায় বলিয়া থাকি কি করা যায়, শাস্ত্র তো মানিতে, হইবে। অথচ শাস্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্বন্ধে পরস্পর কে এমন করিয়া ঘৃণা করিবার তো কোনো বিধান দেখি না। যদি বা শাস্ত্রের সেই বিধানই হয় তবে সে শাস্ত্র লইয়া স্বদেশ- স্বজাতি-স্বরাজের প্রত্যাশা কোনো দিন হইবে না। মানুষ কে ঘৃণা করার যে দেশে ধর্মের নিয়ম প্রতিবেশীর হাতে জল খাইলে যাহাদের পরকাল নষ্ট হয় ,পর কে অপমান করিয়া, যাহাদিগকে জাতিরক্ষা করিতে হইবে পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই। তাহারা যাহাদিগকে ম্লেচ্ছ বলিয়া অবজ্ঞা করিতেছে সেই ম্লেচ্ছের অবজ্ঞা তাহাদিগকে সহ্য করিতে হইবেই।
একথা কে কেউ নিশ্চই একজন হিন্দু সাম্প্রদায়িকের লেখা বলে ভাববেন না। প্রকৃত পক্ষে রবীন্দ্রনাথ সচেতন ছিলেন বাংলা দেশের শ্রেণী বিভাজন সম্পর্কে। তিনি জানতেন যে নমশূদ্র এবং মুসলমান প্রজাদের পক্ষে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিশ্বাস করা কঠিন। বহু প্রবন্ধে এই নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর ১৯০৮ সালে লেখা দুই বিঘা জমি বলে আখ্যান কাব্যে জমিদারের অত্যাচারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ঘরে বাইরে উপন্যাসে তিনি তথাকথিত জাতীয়তাবাদের কৃষক বিরোধী চরিত্র উন্মোচিত করেছিলেন কিন্তু তবুও তিনি যে জমিদার সন্তান এবং জমিদারির পরিচালনা করেন এবং কৃষকের রক্ত চোষক এ বদনাম তাঁর ঘুচে নি।
রবীন্দ্রনাথ অসহায় ছিলেন। হিন্দু সমাজের মধ্যেও তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল একাকী। নিজের তৈরী শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচার্য্য আশ্রমে পর্যন্ত প্রথম দিকে ব্রাম্হন ছাত্র অন্য ছাত্রদের থেকে পৃথক বসতেন এবং অন্য ছাত্রদের সেই ব্রাম্হন ছাত্রকে প্রণাম করতে হত। তিনি ধীরে ধীরে এই কূপমণ্ডূকতার অবসান করেন। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতন আশ্রমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছাত্র ছিলেন অসমের করিমগঞ্জের এক সন্তান সৈয়দ মুজতবা আলী।
এই সময় (1907-1909) রবীন্দ্ৰনাথ গোরা উপন্যাস লেখেন।? অনেকে প্রশ্ন করেন গোরা উপন্যাসের গোরা কে কেন আইরিশ হতে হলো কেন তিনি একজন মুসলমানের সন্তান হলেন না। কারণ রবীন্দ্রনাথ জানতেন যে ১৮৫৭ র মহাবিদ্রোহের সময়ে ইংরেজের খায়ের খাঁ এক বাঙালি হিন্দুর পক্ষে মুসলমানের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া প্রায় অসম্ভব। এবং এমন এক জাতির লোক কে রবীন্দ্রনাথ বাছলেন যে জাতির মানুষ ঠিক ইংরেজ নন বরং শ্বেতাঙ্গ হয়েও ঔপনিবেশিক শোষণে শোষিত আবার ভারতে ইংরেজদের সঙ্গে যুক্ত মানে আইরিশ । কাজেই সাহিত্যিকের এই নির্বাচন কে সাম্প্রদায়িক মনে করার কোনো কারণ নেই।
পরিশেষে রবীন্দ্রনাথের সে যুগে হিন্দু মুসলমান প্রসঙ্গে একটি গভীর চিন্তা প্রসূত বক্তব্য দিয়ে শেষ করি। ১৯১১ রবীন্দ্রনাথ কলকাতার বিডন স্ট্রিটে চৈতন্য গ্রন্থগারে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় বলে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। প্রসঙ্গ উল্লেখ্য ১৮৯৮ সালে অ্যানি বেসান্ত বারাণসীতে সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ প্রতিষ্টা করেন। ১৯০৫ সালে মদন মোহন মালব্য কংগ্রেসের অধিবেশনে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব দেন এবং ১৯১১ সালে তিনি লিখত প্রস্তাব দেন। রবীন্দ্রনাথ এই হিন্দু-বিশ্ববিদ্যালয় বলে বক্তৃতাতে বলেন
একটা দিন আসিল যখন হিন্দু আপন হিন্দুত্ব লইয়া গৌরব করিতে উদ্যত হইল।, তখন মুসলমান যদি হিন্দুর গৌরব মানিয়া লইয়া নিজেরা চুপচাপ পড়িয়া থাকিত তবে হিন্দু খুব খুশি হইত সন্দেহ নাই, কিন্তু, যে কারণে হিন্দুর হিন্দুত্ব উগ্র হইয়া উঠিল সেই কারণেই মুসলমানের মুসলমানি মাথা তুলিয়া উঠিল। এখন সে মুসলমান রূপেই প্রবল হইতে চাই হিন্দুর সঙ্গে মিশিয়া গিয়া প্রবল হইতে চায় না।
এখন জগৎ জুড়িয়া সমস্যা এ নহে যে কি করিয়া ভেদ ঘুচাইয়া, এক হইবে- কিন্তু কী করিয়া ভেদ রক্ষা করিয়া মিলন হইবে। সে কাজটা কঠিন - কারণ যেখানে কোন প্রকার ফাঁকি চলে না , সেখানে পরস্পর কে পরস্পরের জায়গা ছাড়িয়া দিতে হয়।, সেটা সহজ নহে কিন্তু যেটা সহজ সেটা সাধ্য নহে , পরিণামের দিকে চাহিলে দেখা যায় যেটা কঠিন সেটাই সহজ।।।।
আধুনিক কালে শিক্ষার প্রতি সময় থাকিতে মনোযোগ না করে ভারতবর্ষের মুসলমান হিন্দুর চেয়ে অনেক বিষয়ে পিছাইয়া পড়িয়াছে। সেখানে তাহাদের সমান হইয়া লইতে হইবে। এই বৈষম্য টি দূর করিবার জন্য মুসলমান সকল বিষয়েই হিন্দুর চেয়ে বেশি দাবি করিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহাদের এই দাবিতে আমাদের আন্তরিক সম্মতি থাকাই উচিত। পদ -মান -শিক্ষায় তাহারা হিন্দুর সমান হইয়া উঠে ইহা হিন্দুর পক্ষে মঙ্গলকর।
ঔপনিবেশিক অবিভক্ত বাংলায় খুব বেশি হিন্দু বুদ্ধিজীবী বা রাজীনীতিজ্ঞ রবীন্দ্রনাথের এ পথে সহযোগী ছিলেন না। পরবর্তীকালে চিত্তরঞ্জন দাস ছিলেন সেই রকম এক বিরল ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথের একাকিত্ব এবং গুরুত্ব সেখানেই বোঝা যায় আমাদের দুই বাংলার ক্ষেত্রে ।
চলবে )
(