মার্বেলের ফলকে বাড়ির নাম লেখা রয়েছে ‘পরিপূর্ণতা’। নীচে লেখা রয়েছে ‘এখানে মহিলা মানসিক রোগীদের থাকার ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে’। হিরণ্ময় তার সামনে এসে দাঁড়ান। জায়গাটা রাজপুর-নরেন্দ্রপুর ছাড়িয়ে। কয়েক বছর আগে অবধিও এই অঞ্চলে এতখানি জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ঢিমে তালে এয়ারপোর্ট মেট্রোর কাজ এগোচ্ছিল। হঠাৎ কয়েক বছরেই অনেকগুলি আবাসন গজিয়ে উঠেছে। তবু ‘পরিপূর্ণতা’র আশেপাশে এখনও বেশ কয়েকটি নিম, বকুল, কৃষ্ণচূড়ার গাছ। ঝোপজঙ্গল। একটু দূরে একটি সরকারি ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের ট্রান্সফর্মার ঘর। সবচেয়ে কাছের চায়ের দোকানটিও নয় নয় করে প্রায় দুশো মিটার তো বটেই। অর্থাৎ ঘিঞ্জি নয় একেবারেই। নতুন গড়ে উঠতে চলা শহরের প্রান্তে যেন বা শেষ মফস্বলের সীমানার প্রহরী হয়ে এই ‘পরিপূর্ণতা’র অবস্থান। আর কিছুদিনেই শহরের গ্রাসে তার মৃত্যু ঘটবে। গাছগুলিকে সমস্ত কেটে ফেলা হবে। ঝোপজঙ্গল সরিয়ে গড়ে উঠবে বহুতল। সবুজের পরিবর্তে কংক্রিটের জঙ্গলেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে ‘পরিপূর্ণতা’। হিরণ্ময়ের এসবে চিন্তা নেই। তিনি চুপটি করে এখানে দাঁড়ান কিছুক্ষণ। ঝরা পাতার ঘ্রাণ বুক ভরে শুষে নিতে থাকেন। বসন্তের সময়।
এতগুলো বছর। হিরণ্ময় মনে মনে ভাবেন। এতকাল পরের কলকাতা শহর। হিরণ্ময় যখন কলকাতা ছেড়েছিলেন, সেও আজ থেকে প্রায় পনেরো-বিশ বছর আগেকার সময়। এতকাল বাইরে বাইরে কাটিয়ে হিরণ্ময় আবারও শহরে ফিরেছেন। তিনি শহরের গন্ধ নেন। ভালো লাগছে তাঁর। কেউ একজন তাঁর কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
-“আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?” মেয়েলি কন্ঠে প্রশ্ন ভেসে আসে। হিরণ্ময় ঘুরে দাঁড়ান।
-“না মানে, তেমন কিছু নয়। এমনি একটু দাঁড়িয়ে রয়েছি। চারপাশটাকে দেখছি কেবল। এখানে এত গাছ,” হিরণ্ময় জবাব দেন।
-“কিছু বছর আগে এলে দেখতেন আরও কত গাছ ছিল। এখন তো তাও সব কেটে সাফ করে দিয়েছে।”
গলা শুনেই হিরণ্ময় বয়স আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তিনি ঘুরে তাকাতেই গলার স্বরটা অল্প বদলিয়ে যায়। আবার সমে ফিরে আসে।
-“আপনি?”
হিরণ্ময় ঠাহর করে উঠতে পারেন না। যদিও গলার স্বরটিকে তাঁর পরিচিত বলে মনে হয়েছিল গোড়া থেকেই। অনেক কাল আগের কোনও এক ঝাঁঝালো দিন। হিরণ্ময় স্মৃতি হাতড়াতে থাকেন। সব কথা তাঁর মনে পড়ে যায়। তিনি তাঁর জায়গা থেকে সরতে পারেন না। তাই সেই রাস্তার মাঝখানেই প্রস্তরবৎ দাঁড়িয়ে থাকেন হিরণ্ময়। মেয়েটি এবারে তাঁকে প্রশ্ন করবে। তিনি মনে মনে প্রস্তুতি সারেন।
কিন্তু কোনও প্রশ্ন আসে না। মেয়েটি বলে কেবল, “আপনি রাস্তার মাঝখান থেকে সরে আসুন প্লিজ। হঠাৎ কোনও গাড়ি চলে এলে বিশ্রী ব্যাপার হয়ে যাবে।” হিরণ্ময় তাঁর কথা শুনে সরে আসেন। তাঁর পায়ের সঙ্গে শুকনো পাতার ঘষা লাগে। সরসর শব্দ হয়। মেয়েটি তখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।
[*]
বসন্তকাল। দোলের তখনও বাকি কয়েকদিন। স্টার থিয়েটারের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎই মাধবীর সঙ্গে হিরণ্ময় চ্যাটার্জীর দেখা হয়ে গিয়েছিল। অথবা বলা উচিত পিছন থেকে মাধবীই হিরণ্ময়কে সামনে তরতর করে হেঁটে এগিয়ে যেতে দেখেছিল। ‘স্যর’ ডাক শুনে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন হিরণ্ময়।
-“একি মাধবী, তুমি এখানে?” হাসি হাসি মুখে হিরণ্ময় বলে ওঠেন।
-“আমার বাড়ি তো এইখানেই,” সলজ্জ হেসে মাধবী জবাব দেয়, “আপনি?”
-“আমি, ওই এপাড়ায় এসেছিলাম একটা কাজে। ফিরে যাচ্ছি আর কি,” পুরোপুরি সত্যি বলেন না হিরণ্ময়। তিনি সুভদ্রার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।
হিরণ্ময়ের বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। সুভদ্রা বলে মেয়েটি তাঁদের অফিসে নতুন। তবু বয়সের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা হিরণ্ময়েরই সঙ্গে কেমন করে জানি বন্ধুত্ব জমে উঠেছে তার। হিরণ্ময় বিষয়টা উপভোগ করেন। হঠাৎ যেন অনেকটা আকাশ তাঁর হাতে এসে ধরা দিয়েছে বলে মনে হয়। তাঁর মনের ভিতরে বুজকুড়ি কাটতে থাকে সারাক্ষণ।
-“কিছু ভাবছেন স্যর?” মাধবী জিজ্ঞেস করেছে।
হিরণ্ময়ের সম্বিৎ ফেরে। “ওহ, কই না তো,” তিনি কাষ্ঠহাসি হাসেন, “বলছিলাম এখানে ভালো চা পাওয়া যায় কোথায় বলতে পারো? বেশ একটু চা তেষ্টা পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে,” তিনি জবাব দেন।
মাধবীর দাদা অনিমেষ হিরণ্ময়ের কলেজের সহপাঠী। বর্তমানে উড়িষ্যা-প্রবাসী। অনিমেষই হিরণ্ময়কে মাধবীর কথা বলেছিল। “দ্যাখ না যদি তোর অফিসে কোনও ভ্যাকান্সি থাকে। নিজের বোন বলে বলছি না, মাধবী কাজের যোগ্য কিনা, চাপ হ্যাণ্ডল করতে পারবে কিনা, সেসব তোরা নিজেরাই বিচার করবি। কেবল ইন্টারভিউটা যেন হয়, সেজন্যই বলছিলাম,” অনিমেষের এই কথার উত্তরে হালকা গালাগালি দিয়ে উঠেছিলেন হিরণ্ময়। “আরে তোর বোন মানে তো আমারও একটা দায়িত্ব থেকে যায় নাকি?” পিঠ চাপড়ে তিনি অনিমেষকে আশ্বস্ত করেন। দুরাউণ্ড ইন্টারভিউ শেষ হয়ে যাবার পর মাধবী এখন ফলাফলের অপেক্ষায়।
“এই তো! আপনি জানেন, এই স্টার থিয়েটারের উপরেই একটা ফ্যান্সি চায়ের দোকান হয়েছে। যাবেন আপনি? বেশী দামও নয়,” অবাক সরলতায় মাধবী হিরণ্ময়ের দিকে তাকায়।
-“তাই নাকি!” হিরণ্ময় মাধবীর দিকে না তাকিয়েই জবাব দেন, “বাহ, বেশ তো – আচ্ছা তুমিও নাহয় চলো এক কাপ চা খেয়ে যাবে এখন,” তিনিও বিশেষ কিছু না ভেবেই প্রস্তাব দিয়ে বসেন। না না করলেও শেষমেশ মাধবীকে রাজি হতেই হয়। সম্ভাব্য বড়সাহেবের অনুরোধ মধ্যবিত্ত বাঙালিনী চাকুরিপ্রার্থীর পক্ষে ঠেলা সম্ভব হয় না। অথচ সরল বিশ্বাসেই কিন্তু সেদিন মাধবী হিরণ্ময়ের সঙ্গে স্টার থিয়েটারের চারতলায় গিয়ে দাঁড়াতে সম্মত হয়েছিল। হিরণ্ময়ও খুব যে ভেবেচিন্তে সেদিন সেই থিয়েটারি-চারতলায় মাধবীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন, তেমনটা নয়।
সেই প্রথম স্টার থিয়েটারের উপরে উঠেছিলেন হিরণ্ময়। শহরে তখন গোধূলির আমেজ। অবাক বিস্ময়ে তিনি আকাশ দেখেছিলেন। কখন যেন বড়কর্তা হবার সামন্ততান্ত্রিক অভ্যাসেই হাতের মুঠিতে মাধবীকে ভরে নিয়েছিলেন। মাধবীও যাকে, পরবর্তীতে প্রেম ভেবেছিল বোধহয়।
সময় দ্রুত এগিয়েছিল। অবাক নিষিদ্ধতায় হিরণ্ময় দেখেছিলেন কেমন সুচতুর ভাবে তাঁর অজান্তেই তিনি ত্রিভুজ গড়ে তুলেছেন। অপরাধবোধ জন্মায়নি তাঁর। সামন্ততান্ত্রিক বড়বাবু মনোভাব। তিনি সবটুকু ব্যবহার করেছিলেন। অথচ সত্যিই কি তিনি ভালবাসতে চেয়েছিলেন? ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলেন? নাকি স্রেফ সময় কাটানো, জোড়-বেজোড় সংখ্যার হিসেবে একেকদিনে একেকজন। কতখানি নীচে নেমে গিয়েছিলেন হিরণ্ময়? কার কাছে তিনি আশ্রয় চেয়েছিলেন? আর কাকেই বা মুখ ফুটে তিনি বলে বেড়িয়েছিলেন, “তুমি বন্ধু হোয়ো আমার। আমার একজন বন্ধুর প্রয়োজন। আমি সেভাবেই তোমাকে দেখেছি।” অন্ধকারের চেয়েও গভীর হয়ে আসা মিথ্যের সুখানুভাব। হিরণ্ময় আর পাঁচজন দুষ্কৃতকারীর মতোই নিজের চরিত্রকে ভাঙতে দিয়েছিলেন। হিরণ্ময়রা সত্যি। এই সমাজে সত্যি। সাদা-কালোর বিপরীতে প্রত্যেকজন মানুষ এখন ধূসরতায় অস্তিত্ব রাখতে চায়। কারো কারো বা ক্ষেত্রে সেই ধূসরতাটুকুই গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ওঠে।
শেষটুকু যে সুখের হয়নি তা বলাই যায়। প্রথমবার হিরণ্ময়কে স্টার থিয়েটারের চারতলায় নিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটি, মাধবী শেষমেশ চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। সুভদ্রার শেষ খবর জানেনি কেউ। কেবল সেও চাকরি ছেড়েছিল, একই সপ্তাহে বোধহয়। বাকি তিক্ততার বিশ্রী অনুভূতিটুকুই হিরণ্ময় নিজের ভিতরে আগলে রেখেছিলেন। সমস্ত জগৎটাকে তখন তাঁর মিথ্যে বলে মনে হয়েছিল। অথচ নিজেকেও যে ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে হয়েছিল তাঁর। অন্ধকারে নেমে যাওয়ার পথ, সেই পথে যে তাঁরই প্রথম পদক্ষেপ, হিরণ্ময়ের তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি। তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখেছিলেন। নিজেকে কুৎসিত, বীভৎস বলে মনে হচ্ছিল। তিনি আয়নাটাকে ভাঙতে চেয়েছিলেন। না পেরে কেবল তিনি বসে পড়েছিলেন। মাটির উপরে। শানবাঁধানো লালপাথরের শীতলতায়।
[*]
অল্প হাওয়া দিচ্ছে। মাধবী লক্ষ্য করল পাশের ঘাসজমির ভিতর একখানি ডেঁয়ো পিপড়ে কেমন শুকনো একখানি পাতা মুখে নিয়ে ঘাস ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে চলেছে। শীত শেষ হয়ে গেছে। বসন্তের লক্ষণ এসব। এই সময় গাছে সবুজ পাতা আসে। ঝরা পাতার দল সরসরিয়ে হাওয়ায় উড়তে চায়। মাটি ফুঁড়ে শীতঘুমে থাকা পোকামাকড়েরা বেরুতে শুরু করে। এই সময় তাঁদের নতুন ঘর বাঁধার। যেমনটা মাধবীও বেঁধেছিল। মনের অনেকখানি শীত পেরিয়ে। অনেক বছর অতীতের কোনও সময়। সে সামনের মানুষটাকে লক্ষ্য করে। তেমন ভেঙে যাওয়া অবয়ব বলে কিন্তু মনে হচ্ছে না। কেবল অল্প বয়সের ছাপ। কানের কাছটায় চুল পেকে গিয়েছে। ঝুলপিতেও সাদার ছোপ। আর কিছু বলবে কিনা মাধবী বুঝে উঠতে পারে না। তার রাগ হচ্ছে না। ঘৃণাও নয়। কেবল একটা অস্বস্তি ভাব। মাধবী চলে যেতে চায়।
হিরণ্ময় প্রশ্ন করে বসেন।
-“আপনি, মানে এখানেই থাকেন?”
-“হ্যাঁ, এখানেই,” ছোট্ট করে মাধবী জবাব দেয়।
-“আচ্ছা,” হিরণ্ময়ও যেন কথা হাতড়াতে থাকেন। মাধবী তাঁর মনোভাব বুঝতে পারে।
অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রেখে সে আরও জবাব দেয়, “ওই যে দেখছেন ‘পরিপূর্ণতা’, আমি ওর ইনচার্জ। অনেক বছর হয়ে গেল।” সে নিশ্চিত বুঝতে পারে হিরণ্ময় তার বর্তমানকে জানতে চায়। “এখানকার মেয়েদের নিয়েই আমি রয়েছি। গত সতেরো বছর,” সে বলে, “সত্যিই যেন কোথা দিয়ে ওদের সঙ্গে সময় কেটে যায়। টের পাই না একেবারেই। ওরাও তো মানুষ। এখানে এসে আমি মানুষকে নতুন করে চিনেছি।”
-“পরিপূর্ণতা?” হিরণ্ময় বোধহয় খেয়াল করেননি। তিনি একটু এদিক-ওদিক তাকান। খুঁজতে চেষ্টা করেন।
-“ওই তো,” একটু অবাক হয়েই দেখিয়ে দেয় মাধবী, “ওই যে ফলকে নাম লেখা রয়েছে। এই ফিমেল মেন্টাল পেশেন্টদের রিহ্যাব সেন্টারেরই আমি ইনচার্জ এখন।” হিরণ্ময় মাটির দিকে তাকিয়ে আছেন। মাধবী ঠিক বুঝতে পারে না। গলা খাঁখরিয়ে সে বলে, “আচ্ছা, আমি তাহলে আসি এখন। আপনি সাবধানে ফিরবেন,” সে গেট ঠেলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। ‘পরিপূর্ণতা’য়।
গাড়ি আসছে।
হিরণ্ময় একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।
একটি সাইকেল তাঁর প্রায় গা ঘেঁষে চলে গেল। তিনি অল্প সরে দাঁড়ান।
-“ও দাদু, দেখতে পাচ্ছেন না চোখে! একটু সরে দাঁড়ান,” সাইকেলওলা যেন হিরণ্ময়ের গা ঘেঁষে যেতে যেতেই বিরক্ত হয়ে তাঁকে কথা শুনিয়ে দেয়। হিরণ্ময় হাসেন। হাত তুলে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করেন। সরে দাঁড়ান।
আজ কিসের খেয়ালে তিনি হাঁটতে বেরুবার সময় লাঠিটা ভুলে ঘরে ফেলে এসেছেন। লাঠিটা হাতে থাকলে হয়তো লোকটি তাঁকে এভাবে সরে যেতে বলত না। হিরণ্ময় হাসেন। আবারও।
শাস্তি পেয়েছেন হিরণ্ময়। কলকাতার চাকরি ছেড়ে মুম্বাইতে গিয়ে তিনি নতুন কাজে যোগ দেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই অদ্ভুৎ এক অসুখ। ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন নাকি আরও কোনও ছত্রাকজাতীয় রোগ। কোনও চিকিৎসা ছিল না। চোখদুটিও বাইরে থেকে বদলায়নি কোথাও। কেবল সম্পূর্ণ আলো নিভতে লেগেছিল আরও বছর দুই। তারই মধ্যে ব্রেইলের তালিম। নতুন চাকরি খোঁজা। নতুন এক দৃষ্টিহীন জীবন। জীবনের উপর রাগ করতে পারেননি হিরণ্ময়। কেবল অত কাছে গিয়েও, অজন্তার সেই বিখ্যাত ফ্রেস্কোগুলিকে, গুহাচিত্রগুলিকে তিনি যে কখনও আর দেখতে পাবেন না, এই ভাবনাই অনেক দিন অবধি তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছিল। তিনি তখন নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। আকাশ দেখানো একজন মানুষ, আকাশ দেখতে শেখানো একজন মানুষ, সেই তাকেই কিনা তিনি অন্যায় ভাবে ব্যবহার করেছিলেন।
হিরণ্ময়ের আর কোনও অভিযোগ নেই। ‘পূর্ণতা’র আশ্রয়ে মাধবীও কখন ভিতরে চলে গিয়েছে। হিরণ্ময় সেই রোদ্দুর মেখে নিতে থাকেন। তিনি মনে মনে মাধবীকে ধন্যবাদ দেন। ‘পূর্ণ’ মাধবীর এই নির্লিপ্ত ব্যবহারেই এতবছরের প্রায়শ্চিত্ত শেষ হয়েছে তাঁর। এখন এই অস্তিত্বহীনতাতেই হিরণ্ময়ের অবশেষ-ভবিষ্যৎ।
"I pray you, do not fall in love with me, for I am falser than vows made in wine"
সৌজন্য: As You Like It, William Shakespeare