নাটক ও আলোচনা চক্র 

  Image preview
 সম্প্রতি বারাকপুর হরহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবেশ বান্ধব মঞ্চের উদ্যোগে 'স্বাধীনতা আন্দোলনে বহু স্বর'  শিরোনামে এক আলোচনাচক্র ও সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনী অবলম্বনে নাটক মঞ্চস্থ হলো। এই অশান্ত, উত্তাল সময়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার মাসে এমন আলোচনা উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মূল বক্তা ছিলেন  মানবাধিকার কর্মী ও লেখক হর্ষ  মন্দার। গান্ধীবাদী এই বক্তার কন্ঠে বারে বারে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে - বহুত্ববাদী ভারতের বৈশিষ্ট্যকে কেমন করে আমরা ধীরে ধীরে পাল্টে ফেলছি! কোন প্রতিষ্ঠানের মূল চরিত্রকে জোর করে পরিবর্তন করবার চেষ্টা হলে -  ফল হতে পারে মারাত্মক। ইদানিং সেই ঘটনাই বেশি বেশি করে ঘটে চলেছে ভারতবর্ষে। এমনিতে ভারতীয় উপমহাদেশ এই মুহূর্তে এক অস্থির সময়ের সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। সর্বক্ষণ একে অপরের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি। সেই সময় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজীর বাংলাই পথ দেখাতে পারে সমগ্র ভারতবর্ষকে। নিজের দেশকে ভালোবাসার অর্থ  প্রতিবেশী দেশকে ঘৃণা করতে হবে -  বিপদজনক এই ভাবনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে বলে তার অভিমত। আমাদের চোখে একজন হিরো হলে, পাশে আরেকটি চরিত্রকে ভিলেন বানাতেই হবে - এটা ঠিক নয়। অপরদিকে শারীরিক বা সামরিক শক্তি প্রদর্শনই হিরোইজমের একমাত্র বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। 'বসুধৈব্য কুটুম্বকম' -  সংখ্যালঘুসকে  সংখ্যাগুরু দ্বারা আশ্বস্ত করা - 'আমরা তোমাদের পাশে আছি'। তাদের দায় বর্তায় -  দুর্বলকে রক্ষা করা।  তিনি আরো বলেন -  সব সময় আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণে উপস্থিত থাকবার চেয়েও বেশি জরুরী স্বচ্ছ ধারণা, সঠিক বোধ। আপাতদৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি বা নেতাজির পথ আলাদা মনে হলেও,  মত ছিল এক  -  দেশের কল্যাণ। যুব সমাজকে সেই  ভাবনার নির্যাস পান করতে হবে। তবেই দেশ, দশের কল্যাণ। কোন বিষয়ে চর্চা করবার আগে সম্পূর্ণ ইতিহাস জানা জরুরী। হয় আমরা সেটা করি না, অথবা সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলি। অর্ধ ইতিহাস নিয়ে তর্ক জুড়ে দিই। নিজের পক্ষে পক্ষপাত-যুক্তির জাল বুনি। 
 
        শুরুতে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন স্বাতী চ্যাটার্জী। এরপর পরিবেশকর্মী তাপস বিশ্বাস সমগ্র অনুষ্ঠানের রূপরেখা ব্যাখ্যা করার পর শুরু হয় নাটক 'সুভাষ ওটেনকে  চড় মারেন নি '। সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের এক স্বল্পজানা ঘটনার উপর আলোকপাত করা হয়েছে এই নাটকে। প্রেসিডেন্সির ছাত্রাবস্থায় ইংরেজ অধ্যাপক ওটেন সাহেব কথায় কথায় ভারতীয় ছাত্রদের অসম্মান সম্মোধন করতেন। রুখে দাঁড়ায় ছাত্ররা। পরিকল্পনা করা হয় -  এর প্রতিশোধ নিতেই হবে। কিন্তু ছাত্রনেতা সুভাষের কাছে বিষয়টা গোপন রাখা হয় -  পাছে বিরোধিতা আসে! একদিন ওটেন সাহেবকে কলেজের বারান্দায় শারীরিক নিগ্রহ করা হয়। সুভাষ চন্দ্র তাকে আঘাত করেননি, এমনকি ঘটনাটা ঘটবার আগে পর্যন্ত জানতেনও না। তবু কর্তৃপক্ষ সুভাষকে দোষী সাব্যস্ত করে  কলেজ থেকে বহিষ্কার করেন। অথচ এই ঘটনাটাই বিভিন্ন  সিনেমা-সিরিয়ালে অন্যভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়। একটু ঘুরিয়ে - শারীরিক আঘাত করাটাই যেন  নায়কচিত বৈশিষ্ট্য। হয়তো বা সেদিন ওটেন সাহেবকে সুভাষচন্দ্র বসু মারেননি বলেই আগুনটা ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। রোপিত হয়েছিল নেতাজি তৈরীর বীজ!
    
      নাটকের বক্তব্যের মধ্যে সমগ্র অনুষ্ঠানের সুর বাঁধা ছিল। বারাকপুর 'খেয়ালখুশী'র পরিবেশনায় এই নাটক দর্শক মনে দাগ কেটেছে। বিশেষ করে উপস্থিত স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ভবিষ্যতের হিরোকে চিনে নেবার ক্ষেত্রে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরিতে সাহায্য করেছে এই নাটক। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা হল বারাকপুর ডায়লগ(Barrackpore Dialouge) - এর। সময়ের দাবি মেনে ডায়লগ চলতে থাকুক  -  অধিকাংশ দর্শকের এমনিই অভিমত।
    

  • গোপাল বিশ্বাস