বিভিন্ন ধরনের আর্থ সামাজিক বৈষম্য যথা সম্পদের মালিকানা, আয় বন্টন , দারিদ্র, শিক্ষার সুযোগ, কর্ম সংস্থান ,পুস্তি, স্বাস্থ্য প্রমুখ ভারতে বিদ্যমান । এবারের আর্থিক বাজেটে কর আদায়ের ক্ষেত্রে এক প্রকট বৈষম্য চোখে পড়ল যা খুবি উদ্বেগজনক। ব্যাক্তি গত করদাতারা কর্পোরেট দের থেকে বেশি কর প্রদান করে সরকারি রাজস্ব খাতে। প্রত্যক্ষ কর এর ক্ষেত্রে দু রকমের সুত্রে কর আদায় করা হয়। একটি হচ্ছে ব্যাক্তিগত আয়কর বা পার্সোনাল ইঙ্কাম ট্যাক্স আর একটি হল কোম্পানি গুলি যে কর দেয় যাকে কর্পোরেট তাক্স।২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে আয় কর থেকে মোট রাজস্বের ১৯ শতাংশ আসে আর কর্পোরেট কর বাবদ ১৭ শতাংশ আসে। টাকার অঙ্কে গত ১০ বছরে ২০১৪-২০১৫ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ভারতের অর্থনীতিতে কর্পোরেট ট্যাক্স বাবদ আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৪ .২৮ লক্ষ কোটি টাকা । এখন বাজেটে প্রস্তাব অনুযায়ী করপরেট ট্যাক্স এর পরিমান হয়েছে ১০.২ লক্ষ কোটি টাকা যেখানে ব্যাক্তি গত আয় কর বাবদ আয় এই সময় ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা।গত ৫ বছরে ব্যাক্তি গত কর আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ।
বর্তমানে ভারতে আয়কর রিটার্ন দেন ৭.৪ কোটি লোক কিন্তু এর মধ্যে ৫.১৬ কোটির বেশি লোক ০ (নিল) রিটার্ন অর্থাৎ তাদের কাছ থেকে কিছু আদায় হয় না। এ দিক থেকে জন গনের মাত্র ১.৬ শতাংশ লোক কর দেয়। তার মানে এত বড় দেশে এত লোকের মধ্যে খুব অল্প সঙ্খক লোক এর উপর এই কর ভার অর্পিত।
তাহলে কি দাঁড়াল? মোট ২.২৪ কোটি লোক আয় কর ও কর্পোরেট ক র দিচ্ছে। এই তত্থ্য অবশ্য ২০২২-২৩ এর। গত দু বছরে এই করদাতার সংখ্যা সামান্য বেরেছে।তবে এই হিসাবের মধ্যে যেটি বৈষম্য মূলক সেটি হল যারা আয়কর দেন তারা প্রধানত মধ্য বিত্ত তারা কর্পোরেট দের থেকে বেশি কর দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ দের মতে ভারতের কর কাঠামো কে উন্নত করতে কর্পোরেট দের থেকে বেশি করে কর আদায় করতে হবে।কারণ বাবসায়িদের কর দেয়ার ক্ষমতা বেশি। কর্পোরেট দের থেকে কর কম আসার একটি বড় কারন হল ২০১৯ সালে কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে ৩০ থেকে ২২ শতাংশ করা হয়। এর ফলে সরকার প্রতি বছর ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব কম পেয়েছে। এর জন্যে সরকারের প্রায় ৮ লক্ষ কোটি রাজস্ব আদায় কম হয়েছে । সরকার এই ছাড় দিয়ে ছিলেন যাতে কোম্পানি গুলি আর ও বিনিয়োগ করে অনেক চাকরীর সৃষ্টি হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বিনিয়োগ বাড়েনি চাকরির সৃষ্টি হয় নি ওই টাকা মুনাফাতে ঢুকেছে ডিভিডেন্ড খাতে দেয়া হয়েছে । কারো কারো মতে এই বেঁচে যাওয়া টাকা শেয়ার বাজারে লাগান হয়েছে যাতে শেয়ার এর তেজী ভাব বজায় থাকে ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা যায়।
এ দিকেদেশের মধ্যে যে সম্পদ কাঠামো ও আয় বৈষম্য যে বিদ্যমান তা বিরূপ আকার ধারন করেছে গত কয়েক বছরে। প্যারিস স্থিত ওয়ার্ল্ড ইন ইকুয়ালিটি ল্যাব গবেষণা করে বলেছিল দেশের উপরের ১ শতাংশ লোক মোট আয় এর ২২.৬ শতাংশ ও সম্পদের ৪২ শতাংশ নিজেদের দখলে রেখেছে।এই সংস্থার মতে ভারতের কর কাঠামো এই বৈষম্যর নিরিখে প্রগ্রেসিভ (অর্থাৎ যার যত আয় তার তত বেশি কর) না বলে রিগ্রেসিভ বলাই শ্রেয়।২০১৯ সালে যে ছাড় কোম্পানিগুলি পেয়েছিল তাতে কর কাঠামোর বৈষম্যর অনুপাত আরও বেড়ে যায়। ভারতের মত মধ্যম আয়ের দেশে কর কাঠামো তে কর্পোরেট ট্যাক্সের অনুপাত বেশি হওয়া উচিত কিন্তু গত ১০ বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনে কর্পোরেট করের মাত্রা ৩.৪ শতাংশ থেকে ৩.১ শতাংশে নেমে এসেছে আর আয় করের মাত্রা বেড়েছে ২.১ থেকে ৩.৫ শতাংশে। আমেরিকার মত উন্নত দেশে প্রত্যক্ষ করে আয় করের অবদান বেশি কিন্তু সেদেশে ৪২ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেয় যেখানে এদেশে ২ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেয়।দীর্ঘ মেয়াদে এই জিনিষ চললে কর কাঠামো মুখ থুবড়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞ দের আশঙ্কা।
এ বছর বাজেটে আয় করে স্ট্যান্ডারড ডি ডা কসান ৫০০০০ থেকে ৭৫ ০০০ টাকা করা হয়েছে এতে ৭৫০০ টাকা কর বাঁচবে বলে আশা করা যায়।অনান্য খাতে হিসাব নিকাশ করে গড়ে কর দাতাদের ১৭৫০০ টাকা বেঁচে বলে আশা করা যায়।
ইকন মিক সারভের মতে দেশের কোম্পানি গুলি গত চার বছরে মুনাফার হার বাড়িয়েছে চার গুণ অথচ তাদের দেয়া করের হার কমে যাচ্ছে আর ইনকাম ট্যাক্স এর থেকে আদায় বাড়ছে এতে করে সম্পদ কাঠামোতে বৈষম্য বেড়ে বিরূপ প্রভাব ফেলছে আবার সরকারের রাজস্ব সেই ভাবে বাড়ছে না ।ইকনমিক সারভে এ কথাও বলেছে মুনাফা চার গুন বৃদ্ধি পাওয়া সত্তেও কোম্পানি গুলি বিনিয়োগ করে নি । এর ফলে নিয়োগ বাড়েনি । সরকার উৎপাদন বাবদ যে রাজস্ব পেতে পারত তা হয় নি। কারণ উদ্বৃত্ত লাভ যদি কারখানা নির্মাণ সম্প্রসারণে পুন নিয়োজিত হয় তাতে অর্থনীতির সম্প্রসারণ হবে , নিয়গ বারবে, সরকার ট্যাক্স বাবদ বারতি রাজস্ব পাবে আর এই অর্থ যদি শেয়ার বাজারে আসে তাহলে শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে ঠিক ই কিন্তু অনেক সম্পদ ও অর্থ ফাটকা খেলায় চলে যাবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ভারতীয় অর্থনীতিতে এই জিনিষটাই হচ্ছে যার ফলে শেয়ার বাজার সূচক গত ক বছরে ১৯০০০ থেকে ৮০০০০ এর উপরে ছলে এসেছে এতে লাভ হয়েছে ব্যাবসায়িদের ও অল্প সঙ্খক বিনিয়োগকারীদের যারা ফাটকা খেলতে নিজেদের সঞ্চয় যথা ফিক্সড ডিপোজিট এর টাকাও শেয়ার বাজারে খাটিয়েছে ব্যাঙ্ক কে টাকার যোগান তুলনামুলক ভাবে কম হওয়ার জন্য শিল্প ও বাণিজ্য বিকাশে টাকার অভাব ঘটছে । বাঙ্কের টাকার যোগান কম হয়ার জন্যে রিসার্ভ বাঙ্কের গভর্নর গভীর উদবেগ প্রকাশ করেছেন।
২০২২ সালে ভারতের ১৫ লক্ষ কোম্পানির মধ্যে ৫লাখ ৬০ হাজার কোম্পানি কর দিত।এর মধ্যে ১৫০ কোম্পানি ৪০ শতাংশ কর দিয়েছিল দেশের সাধারন মানুষ জি এস টি বাবদ সরকারকে কর দেয় জিনিস কেনার সময়। কোম্পানি কিন্তু জি এস টি বাবদ ইনপুট ট্যাক্স ফেরত পায় কিন্তু সাধারন ক্রেতা কে জি এস টি বাবদ কর পুরপুরি দিতে হয়। আয়কর ওজি এস টি মিলিয়ে সাধারন মানুষের ওপর করভার বেশি অর্পিত। এই বৈষম্য দেশের কর ব্যাবস্থাকে বৈষম্য মুলক করেছে। এই কর ব্যাবস্থায় মধ্য বিত্ত শ্রেণী বেশি ক্ষতি গ্রস্থ কারন তারাই এ দেশের বাজারে বেশি জিনিশ ক্রয় করে সেখানে তাদের দিতে হয় জি এস টি আবার আয় কর প্রদানেও তারাই বেশি অবদান রাখে। কর্পোরেট দের মুনাফার উপর যদি ট্যাক্স বাড়ানো হয় যে হেতু তাদের লাভের মাত্রা বেশি হচ্ছে তাহলে এই কর কাঠাম তে বৈষম্যর হার কমতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কর কাঠামো ও কর ব্যাবস্থার আশু সংস্কার প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞ রা অভিমত দিয়েছেন।