আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের খাদ্যাভ্যাস এতটাই বিচিত্র যে, তা অনেক সময়েই বাকিদের কাছে বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাংস, ডিম বা সামুদ্রিক মাছের মতো খাবারের প্রচলন বিশ্বজুড়ে থাকলেও, এমন অনেক কিছুই মানুষের পাতে পড়ে, যা দেখে কিছু আমিষাশীরাও শিউরে উঠতে পারেন। কোথাও সাপের মাংস মুখরোচক পদ হিসেবে সমাদৃত, আবার কোথাও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে পিঁপড়ের চাটনি অত্যন্ত প্রিয়। তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন এক পদের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা দেখে অধিকাংশ মানুষেরই গা গুলিয়ে উঠছে। আর সেটি হলো বাড়ির সবচেয়ে অবাঞ্ছিত ও ঘৃণ্য কীট আরশোলা, তার তরকারি!
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কড়াই ভর্তি ফুটন্ত তেলে ভাজা হচ্ছে আরশোলা। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে চপস্টিক দিয়ে সেই আরশোলাগুলিকে নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়, ঠিক যেমনটা সব্জি রান্না করার সময় করা হয়। তেলের ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দের সঙ্গে আবহে বাজছে হালকা সঙ্গীত, যা দেখে মনে হতে পারে এটি একটি সাধারণ রান্নার দৃশ্য। কিন্তু কড়াইয়ের মূল উপকরণটি দেখেই শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ দর্শকের।
@sports.jx.china নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই এর ভিউ ১ কোটি ৯ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভিডিওটি দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কমেন্ট বক্সে উপচে পড়ছে বিতৃষ্ণা এবং বিস্ময়। অধিকাংশেরই মতে, আরশোলা মানেই নোংরা এবং দুর্গন্ধময় একটি কীট, যা খাদ্য হিসেবে অকল্পনীয়।
তবে এর মধ্যেই অনেকে আবার ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে, বিশ্বের বহু দেশেই আরশোলা শুধুমাত্র খাদ্য হিসেবেই গ্রহণ করা হয় না, এর পুষ্টিগুণ এবং আরও অন্যান্য যেমন এর ঔষুধী গুণেরও কদর রয়েছে। নেটিজেনদের দেওয়া নাম ‘আরশোলা কি সবজি’ নাকি বিভিন্ন উপায়ে রান্না করা হয়। কখনও মশলা দিয়ে ভাজা, কখনও জলে সেদ্ধ করে, আবার কখনও তেল এবং সবজি দিয়ে রান্না করা হয়।
সাধারণভাবে আরশোলা মানেই অস্বাস্থ্যকর এক প্রাণী, যার বাস বিভিন্ন নর্দমা বা আবর্জনার স্তূপে। বাড়িতে এর দেখা মিললেই স্প্রে বা অন্য কোনও উপায়ে সেটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভিডিও তে এক দর্শক যেমন লিখেছেন, “মানুষ এটাকে ঘৃণা করে,” যা থেকে স্পষ্ট যে রোগজীবাণু বাহক হিসেবে আরশোলার যে ‘বদনাম’, তা এটিকে খাদ্য হিসেবে ভাবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে আরশোলাগুলি খাওয়ার জন্য প্রতিপালন করা হয়, সেগুলি বাড়ির রান্নাঘর বা শৌচাগারে ঘুরে বেড়ানো আরশোলার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ‘ফার্মড’ আরশোলাগুলিকে নিয়ন্ত্রিত এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিপালন করা হয়, ঠিক যেমনটা অন্য ভোজ্য পতঙ্গ বা পোলট্রির ক্ষেত্রে করা হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে আরশোলাকে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং চিরাচরিত চিকিৎসাবিদ্যাতেও এর ব্যবহার রয়েছে। তবে সে যাই হোক, কড়াই ভর্তি আরশোলা ভাজার দৃশ্য যে সহজে হজম করা কঠিন, তা মেনে নিচ্ছেন সকলেই।
