শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২ : ০৫Riya Patra
রিয়া পাত্র
অভিনেত্রী থেকে যাঁরা নেত্রী হতে আসেন, তাঁদের নাকি ভোট ফুরোলে আর দেখা যায়না। যাদবপুর অন্তত একাধিকবার সেই অভিযোগ তুলেছে। এবার আর সেই অভিযোগ উঠতে দিতে রাজি নন তিনি। রাজনীতিতে এসেই বিধানসভার ভোট লড়েছেন। হেরে যাওয়ার পরেও দল ভরসা রেখেছে তাঁর ওপর। তাঁকেই বসানো হয়েছে যুব তৃণমূলের সভাপতির পদে। যাদবপুরের মতো হেভিওয়েট কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সায়নী ঘোষ।
* যাদবপুর, লোকসভা এবং বিধানসভায় বরাবর হাইভোল্টেজ কেন্দ্র, একটা সময় আপনার দলের সুপ্রিমো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এই কেন্দ্র থেকেই। সেখানে আপনি প্রার্থী এবার। টেনশন হচ্ছে কি?
সায়নী: টেনশন তো কর্পোরেশন ভোটেও থাকে। কোনও ভোটই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। এই আসন থেকে মমতাদি লড়েছেন, একটা গরিমা রয়েছে এই আসনের। আমার কাছে বিষয়টা অসাধারণ।
* রাজনীতিতে শুরু থেকেই আপনার ওপর দল ভরসা রেখেছে...
সায়নী: শুরু থেকেই। ডে ওয়ান...
* বিধানসভা ভোটে লড়েছেন, হেরে গিয়েছেন। তারপরেও লোকসভার জন্য আপনার ওপর ভরসা। এই জায়গাটা তৈরি করলেন কীভাবে?
সায়নী: এটা আমি ঠিক বলতে পারব না। থেকে যাওয়াটা, শুধু থাকার জন্য নয়, কাজ শেখার জন্য, করার জন্য থাকাটা। আমি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক পরিসর থেকে এসে রাজনীতিতে যোগ দিয়েই বিধানসভা ভোটে টিকিট পেয়েছিলাম। ওই কেন্দ্রে প্রচুর হিন্দিভাষী। মাইনাস ৫৬-৫৮ হাজারের আসন ছিল। সেটা পূরণ করে বাড়তি ১৩-১৪ হাজার ভোট আসে। হারটাও খুব কম মার্জিনে ছিল। সেই আসনে লড়ার পরেই অভিষেক বলেছিলেন,"খুব ভাল টক্কর দিয়েছ।" মমতা দি, অভিষেকের দু" জনেরই মনে হয়েছিল আমাকে সাংগঠনিক ভাবে তৈরি করতে চান ওঁরা। তৃণমূলের যুব সভানেত্রীর পদ দেওয়া হয় আমাকে, যে পদে একসময় অভিষেক ছিলেন। এটাও খুব বড় দায়িত্ব। তিন বছর সেই পদে কাজ করেছি। রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে সব জায়গায় থেকেছি। তারপরেই হয়ত ওঁদের মনে হয়েছে, আমার আরও একটা বড় সুযোগ প্রাপ্য।
* অরাজনৈতিক পরিসর থেকে আসা সায়নী তিন বছরে কতটা শিখলেন?
সায়নী: যখন আসি তখন তো কোনও ধারণাই ছিল না সংগঠন, ব্লক, প্রেসিডেন্ট, অঞ্চল সভাপতি কিছু বিষয়ে। শুধু জানতাম মমতা ব্যানার্জি দলের সুপ্রিমো, মুখ্যমন্ত্রী। মাইনাস থেকে শুরু করি আমি়। আসানসোলের মানুষের কাছে নিজেকে পরিচয় করানোর একটা লড়াই ছিল। তিন বছরে মানুষ চিনেছে আমাকে।
* অভিনেত্রীকে প্রার্থী করা হলে দলের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা যায়। সাধারণ মানুষও মনে করেন তাঁরা জিতলে আর এলাকায় আসবেন না। আপনি কি এই মিথ ভাঙতে পারলেন?
সায়নী: দলের ভেতরের ধারণা নিশ্চয়ই ভাঙতে পেরেছি। সেই কারণে ধারাবাহিকভাবে এত দায়িত্ব পেয়েছি।
* যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে নিয়ে কিন্তু ক্ষোভ ছিল, তাঁকে কেন্দ্রে দেখতে পাওয়া যায় না...
সায়নী: আমার ক্ষেত্রে সেটা কার্যকর হবে না খুব একটা। তিনবছর ধরে অভিনয়ের থেকে বেশি রাজনীতি করেছি।
* নিজের বাড়ি যে কেন্দ্রে,সেখানে ভোট লড়া কতটা অ্যাডভান্টেজ?
সায়নী: আমি এখানকার ভোটার, এখানেই বড় হয়েছি, যাদবপুরের ছাত্রী। এখান থেকে ভোট লড়াটা আমার কাছে ইমোশনাল, সেনসিটিভ। আমাকে তৃণমূল কংগ্রেস অনেক জায়গায় পাঠিয়েছে সংগঠন করতে। সেখানে হোমগ্রাউন্ড যাদবপুর থেকে যে লড়তে হবে, সেটা আমি নিজেও ভাবতে পারিনি। অবাক।
* প্রচার চলছে জোরকদমে। মানুষের সাড়া কেমন?
সায়নী: মানুষ ভালবাসেন, পছন্দ করেন।
* আপনার জেতার মার্জিন আপনার দলের আগের প্রার্থীকে টপকে যেতে হবে,এরকম ভাবেন?
সায়নী: প্রথমত জিততে হবে। তাছাড়া আমি আগেও বলেছি, "যাদবপুর, ইট ক্যান মেক ইউ অর ব্রেক ইউ।" বাম জমানায় যাদবপুর মমতাদিকে সাংসদ বানিয়েছিল। যাদবপুর তৃণমূলের পাশে রয়েছে। তবে যাদবপুরের মানুষের একটা কথা, রাজনৈতিক প্রার্থী হলে ভাল হয়।
* তৃণমূল তো অরাজনৈতিক প্রার্থী দিয়েছে বারবার...
সায়নী: যাদবপুরের একটা আশা ছিল, রাজনৈতিক প্রার্থী হলে সংসদে প্রতিনিধত্ব করা যাবে রাজনৈতিকভাবে। মনে হয় সেদিক থেকে আমার ওপর মানুষ ভরসা রাখতে পারবেন এখন। মানুষ জানেন, সায়নী রয়েছে, হারিয়ে যায়নি।
* আপনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সৃজন, তিনিও যাদবপুরেরই ছেলে। বাম-বিজেপি দুই প্রার্থীর মধ্যে আপনার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কে?
সায়নী: তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল নিজেই। শুধু ভাবব, আগের মার্জিন থেকে কত বেশি হবে। তবে যাদবপুরে সিপিএম-এর একটা বেস আছে। একটা সময় যাদবপুরকে লাল দুর্গ বলা হত। এখন আমি তৃণমূলের ঘর বলে মনে করি। তবে বিজেপির জন্য যাদবপুরের মানুষের মনের এবং ভোটের দরজা বন্ধ হলে আমি খুশি হব।
* জিতলে যাদবপুরের হয়ে সংসদে কী বলবেন?
সায়নী: সংসদে যাদবপুরের সাংসদ হিসেবে উপস্থিতি জোরালো করার চেষ্টা করব। যাদবপুরের মানুষের এটা নিয়ে ক্ষোভ ছিল। একাধিক সমস্যা আছে তাছাড়া। বেঞ্চ বাজিয়ে ঘোরতর বিরোধিতা করা দরকার সরকারের।
* তৃণমূলের ৪২ প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জন নতুন মুখ...
সায়নী: ২৬ জন নতুন মুখ, ২৮ শতাংশ মহিলা মুখ। আমার, দেবাংশুর মতো তরুণ প্রার্থী। এগুলোই তো আশা জাগায়। আমাদের সকলের প্রতিনিধিত্ব করার জায়গা রয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কারা মানুষের জন্য কাজ করছে, করছে না, কার কতটা গ্রহণযোগ্যতা এই আলোচনা যে দলের মধ্যে চলে, এর থেকে ভাল আর কী। চেঞ্জ ইজ ওনলি কন্সট্যান্ট।
* কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তলব করছে দলের নেতা-নেত্রীদের, ভোট ব্যাঙ্কে তা প্রভাব ফেলবে কি?
সায়নী: হ্যাঁ, কিন্তু প্রভাব ফেলবে আমাদের পক্ষে। সাধারণ মানুষের কাছে এটা পরিষ্কার, এজেন্সিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য বিজেপি ব্যবহার করছে। ভোটের দোরগোড়ায় এক মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রমাণ কিছু করা যায়নি। ভোট যত কাছে আসে, তত ইডি, সিবিআই, আইটি দিয়ে ধমকানি-চমকানি আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য।
* প্রচারে প্রার্থীদের কথাবার্তায় কতটা লাগাম দরকার?
সায়নী: একটা ভব্যতা দরকার। বাংলার মানুষ সেটা পছন্দ করে। রাজনীতি নিয়ে তাঁরা প্যাশনেট। আমি বিশ্বাস করি, কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করা উচিত নয়। আমি নিজেও করি না। লড়াই রাজনৈতিক ভাবে হওয়া উচিত।
* রাজনীতির সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন অভিনয় জগতে, দুটো একসঙ্গে করতে সমস্যা কতটা?
সায়নী: বরাবর ব্যালেন্স করে কাজ করি। "অপরাজিত"র শুটিং এর সময় সকালে উপনির্বাচনের প্রচার সেরে রাতে সিনেমার কাজ করতাম। অভিনয় প্রথম ভালবাসা, শেষ ভালবাসা রাজনীতি।
* যেসব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শ অনেক সময় মেলে না আপনার। সেটা কি কাজের জায়গায় বাধা হয়?
সায়নী: আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবার সঙ্গে ভাল। অনীকদার(দত্ত) সঙ্গে কাজ করার সময় অনেকেই বলত, সিপিএম অনীকদার সঙ্গে তৃণমূল সায়নী গল্প করছে। কাজ একশো শতাংশ দেওয়াটাই আসল। তার মধ্যে রাজনীতি নেই।