উদয়ের পথে শুনি কার বাণী

গরমকাল। আর গরমকাল মানেই রক্তের সঙ্কট। গরমের সমস্যাকে অবজ্ঞা করবার সাধ্য কারো নেই। ফলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের গণসংগঠন, কেউ ই এই গরমকালে বিশেষ একটা রক্তার্পণ শিবিরের আয়োজন করে না।ইচ্ছে করে, আয়োজন করে না, এমনটা ভেবে নেওয়ার আদৌ কোনো কারন নেই।করে উঠতে পারে না। না পারার আসল কারন হলো, এই গরম ঠেলে কেউ ই খুব একটা আসেন না রক্ত দিতে।

World Blood Donor Day: Health benefits of donating blood - The Week
                   তাবলে গরমের জন্যে তো আর অসুখ বিসুখ আটকে থাকবে না। রোগীর হিমোগ্লোবিন লেবেল নেমে যাওয়াও থেমে থাকবে না সন্তানসম্ভবা মায়েদের রক্তাল্পতাও থমকে যাবে না। প্রসব উত্তর সমস্যাও মায়েদের কোনো জাদুমন্ত্রে উবে যাবে না।

Saudi Arabia | Very hot weather Thursday, and chances of dust and rain in  these areas | ArabiaWeather | ArabiaWeather
        সমাধান তো একটা কিছু চাই ই চাই।নাকি? 'উদয়ের পথে', না রাধামোহন ভট্টাচার্যের ফিল্ম নয়। বিনতা রায়ের গান, 'তোমার বাঁধন খুলতে লাগে', অমনটাও কিছু নয়। রেখা মল্লিকের, 'গেয়ে যাই, গান গেয়ে যাই' - এই গানের সুর, এই গানের সেযুগের জনপ্রিয়তা, এসব আজকের প্রজন্ম না জানলেও, রাধামোহনের নাম না শুনলেও, মৃণাল সেনের,' আকালের সন্ধানে' র সেই বৃদ্ধ অভিনেতাকে জানতে চাইবার চেষ্টা না করলেও, বাপ্পা, পোষাকী নাম যাঁর সঞ্জয় ঘোষ, সেই বাপ্পাদের, 'উদয়ের পথে' ,হেঁদো ,মানে হেঁদুয়ার,' উদয়ের পথে' র রক্তার্পণ আমাদের নিরাশা, হতাশার যেন এক মৃতসঞ্জিবনী সুধা।

Famous film director Mrinal Sen passed away - Anandabazar
স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিবেশি বাপ্পা, বাপ্পারা।আজকের ' উদয়ের পথে' র শাকিন , এককালে হয়তো রোজ বাসায় ফেরা ডানার শব্দের সঙ্গেই দেখতেন সিমলে পাড়ার নরেন। শ্রীরামকৃষ্ণের উচ্চারণে ' লরেন' ।আমার ছোট ভাগ্নে ' অয়ন' এর ছোট বেলার মত ' ন' আর ' ল' জনিত সমস্যা তাঁর  ছিল কিনা, সেটা, অভিনেতা গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জীবিত থাকলে শুধনো যেতো।
হেঁদোর জলের ধারে এককালে নরেন দত্ত আনমনা হয়ে বসে ভাবতেন মানুষের কথা।আর ,' উদয়ের পথে' র নরেনের পড়শীরা আজকে এই একুশ শতকে মানুষের জন্যে ভাববার ইচ্ছেটাকে ধারাবাহিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে নিজেদের সংগঠনটির ভিতর দিয়ে। কার চিকিৎসা হচ্ছে না, আর্থিক সঙ্গতি নেই-- বাপ্পাদের কাছে খবর পৌঁছলেই হলো।যেন পি সি সরকারের জাদুকাঠির স্পর্শে সেই অসুস্থ মানুষটির ঠাঁই হলো হাসপাতালে। এমন উদাহরণ,' উদয়ের পথে' কে ঘিরে দিতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।

ইসলাম গ্রহণ করেও কেন সাধনা করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ? — Sangbad Pratidin
বাংলার ক্লাব সংস্কৃতির ভিতরে এককালে দেশসেবার যে তরিকা প্রবাহিত হয়েছিল উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে বিশ শতকের একটা বড় অংশ জুড়ে ,উত্তর কলকাতায় যে ব্যায়ামাগার, আখড়া ইত্যাদি এককালে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বাংলার যুব সমাজের মনে আগুন জ্বালাবার সুতিকাগার ছিল , সেইসব প্রতিষ্ঠানগুলির সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল মানুষের পাশে থাকা।
' উদয়ের পথে' র কোনো রাজনৈতিক সংকল্প নেই।কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা ধারার প্রতি তাঁদের অনুরাগ নেই।বীতরাগ তো নেই ই।ধর্ম- ভাষা- লিঙ্গ - রাজনীতির চাপান উতোর এই সংগঠন টিকে স্পর্শ করে না।নিঃশ্বার্থ ভাবে মানুষের পাশে থাকা এই সংগঠনটি ,দলীয় আবর্তের নিরিখে প্রায় সব দলের ই অত্যন্ত প্রিয়।আসলে দলীয় রাজনীতির নিগড়ে থাকা মানুষেরাও হয়তো ভাবতে পারেন না, কোনো প্রত্যাশা না রেখে মানুষের স্বার্থের ধারাবাহিকতা রক্ষা দশকের পর দশক কি করে বয়ে নিয়ে চলেছে ' উদয়ের পথে' ।

                এই রহস্যের ও উত্তর আছে।বহিরঙ্গে গেরুয়া পড়ে , অন্তরঙ্গে ভোগ সমুদ্রে ডুবে থাকা লোকেদের যে আস্ফালন আমাদের সমাজের প্রতিদিন ই একটা আতঙ্কের ভূগোল তৈরি করছে, সেখানে সন্ত কবীরের দোঁহা একটু বদলে নিয়ে বলতে হয়, বাপ্পারা ,মনটা রাঙিয়েছে ত্যাগের আদর্শে , কাপড় রাঙানোর খোয়াব কখনো দেখে নি।তাইই পারে ' উদয়ের পথে' এমন ' ভয় নাই' আশ্বাস শোনাতে।
১৬ ই জুন ,২০২৪, গ্রীষ্মকালীন রক্ত সঙ্কটে ' উদয়ের পথে' র রক্তার্পণ ব্রত উদযাপন হেঁদুয়াতে।

  • 2024-06-16
  • উদয়ের পথে শুনি কার বাণী