জীবনযাত্রার ইঁদুর দৌড়ে দৌড়তে গিয়ে কখন যে থাবা বসায় কোলেস্টেরল, টের পান না অনেকেই। চিপস, ফাস্ট ফুড আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ হিসেবে এত দিন মূলত হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কথাই ভাবা হত। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এক নতুন অশনি সংকেত দিচ্ছে।
2
10
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোলেস্টেরল শুধু হৃদযন্ত্রের সর্বনাশ করছে না, সরাসরি আঘাত হানছে পুরুষদের যৌনজীবনেও। ডেকে আনছে লিঙ্গ শৈথিল্য বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো কঠিন সমস্যা।
3
10
বিষয়টি বুঝতে গেলে আগে লিঙ্গ উত্থানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি জানা প্রয়োজন। পুরুষাঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেই লিঙ্গোত্থান বা ইরেকশন সম্ভব হয়। এর জন্য প্রয়োজন সুস্থ ও স্বাভাবিক রক্তনালী।
4
10
যখন যৌন উত্তেজনা তৈরি হয়, তখন মস্তিষ্ক থেকে সংকেত আসে এবং পুরুষাঙ্গের ধমনীগুলি প্রসারিত হয়। এর ফলে সেখানে দ্রুত রক্ত প্রবেশ করে এবং চাপ তৈরি হয়ে লিঙ্গোত্থান ঘটে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির মূল কারিগর ‘নাইট্রিক অক্সাইড’ নামক এক রাসায়নিক, যা ধমনীর প্রাচীরকে শিথিল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
5
10
কোলেস্টেরল ঠিক এখানেই খলনায়কের মতো প্রবেশ করে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা ধমনীর ভেতরের দেওয়ালে জমা হতে শুরু করে। অনেকটা পুরনো জলের পাইপে ময়লা জমার মতো।
6
10
এই প্রক্রিয়াটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’ বলা হয়। এর ফলে ধমনীগুলির ভিতরের পথ ক্রমশ সরু হয়ে আসে। কঠিন হয়ে যায় দেওয়াল।
7
10
পুরুষাঙ্গের ধমনী এমনিতেই খুব সূক্ষ্ম হয়। কোলেস্টেরল জমার ফলে এই ধমনীগুলি আরও সরু হয়ে গেলে লিঙ্গোত্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত যথাস্থানে পৌঁছতে পারে না। রক্তের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় লিঙ্গোত্থান দুর্বল ও ক্ষণস্থায়ী হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরোপুরি অসম্ভব হয়ে পড়ে।
8
10
অন্যদিকে কোলেস্টেরল ধমনীর আস্তরণ বা এন্ডোথেলিয়ামেরও ক্ষতি করে। এই আস্তরণ থেকেই নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়। কোলেস্টেরল এই উৎপাদনে বাধা দেয়। ফলে ধমনী ঠিকমতো প্রসারিত হতে পারে না, এবং যৌন উত্তেজনার পরেও রক্তপ্রবাহের রাস্তা সংকীর্ণ থেকে যায়।
9
10
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ইউরোলজিস্টরা একমত যে, লিঙ্গ শৈথিল্যকে এখন কেবল যৌনজীবনের সমস্যা হিসেবে দেখলে চলবে না। অনেক ক্ষেত্রেই এটি গোটা শরীরের রক্ত সংবহনতন্ত্রের বেহাল দশার প্রথম সতর্কবার্তা। আজকের লিঙ্গ শৈথিল্য, আগামী দিনের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের পূর্বাভাস হতে পারে।
10
10
চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই সমস্যা দেখা দিলে লজ্জা বা সঙ্কোচ না করে দ্রুত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা জেনে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এই বিপদ অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।