"এক তাজমহল গড়ো... হৃদয়ে তোমার আমি হারিয়ে গেলে..."

এই গান শুনে যাঁরা বড় হয়েছেন তাঁরা এক ডাকে মনে করতে পারেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের গীতিকার মিল্টু ঘোষকে। খবর, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি শহরের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। প্রবীণ গীতিকার বরাহনগরের বাড়িতেই থাকতেন। অসুস্থতার কারণে বহুকাল তিনি সঙ্গীত দুনিয়া থেকে দূরে। মিল্টুবাবু সম্পর্কে আজকাল ডট ইনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিবাজি মুখোপাধ্যায়, জয় সরকার। প্রবীণ গায়কের দাবি, ‘‘ভীষণ মিষ্টি স্বভাবের মানুষ ছিলেন। বড় পদে চাকরি করেও মনে রাখার মতো গান লিখে গিয়েছেন।’’ জয়ের কথায়, ‘‘ভাবতে অবাক লাগছে, "চৌরঙ্গী" ছবির বিখ্যাত গান ‘বড় একা লাগে’র নেপথ্য তিন কারিগর ১০ দিনের মধ্যে চিরবিদায় নিলেন!’’ 

শিবাজি আরও বলেছেন, ‘‘প্রথম সারির সংস্থায় বড় পদে চাকরি করতেন মিল্টুদা। সারাদিন পরিশ্রমের পরে তিনি গান লিখতে বসতেন। এবং প্রত্যেকটা গান মনে রাখার মতো। পিণ্টু ভট্টাচার্য, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সেই সময়ের সমস্ত গায়ক ওঁর গান গেয়েছেন।’’ মিল্টু ঘোষের সময় মধ্য গগনে গৌরীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গীতিকার। এই দুই স্তম্ভের আড়ালে ঢাকা না পড়ে কী করে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছিলেন সদ্যপ্রয়াত গীতিকার? এ প্রসঙ্গে গায়কের দাবি, ‘‘এক, তাঁর মাটির কাছাকাছি থাকা। সবার সঙ্গে মিষ্টিভাবে কথা বলতেন। দুই, কখনও নিজের মত গায়কের উপরে চাপিয়ে দিতেন না। যেটা গৌরীা পুলকদা প্রচণ্ড পরিমাণে করতেন। তিন, ওঁরা দু’জনেই বেসিক গানের পাশাপাশি ছায়াছবির গানও লিখেছিলেন। মিল্টুদা শুধুই বেসিক গান লিখেছেন। সেই জায়গা থেকেও তাঁর আলাদা পরিচিত তৈরি হয়েছিল।’’ শিবাজিও মিল্টু ঘোষের লেখা ‘মনের মাদল বাজায় রে বোল’ গানটি গেয়েছিলেন।

মিল্টু ঘোষ বললেই জয়ের কানে বাজে পিন্টু ভট্টাচার্যের গাওয়া কালজয়ী গান ‘এক তাজমহল গড়ো’। তারপরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘চৌরঙ্গী ছবির গানের কথা উঠলেই আজও সবার মুখে মুখে ফেরে ‘বড় একা লাগে’ গানটি। এই গানের গীতিকার মিল্টু কাকু, সুরকার অসীমা মুখোপাধ্যায়। গানটির সঙ্গে জড়িত অঞ্জনা ভৌমিক। তিন জনেই কাকতালীয় ভাবে ১০ দিনের মধ্যে চিরবিদায় নিলেন!’’ জয়ের বাবা সুধীন সরকার সেই সময়ের সুরকার-শিল্পী। বাবার দৌলতে তাই অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। কেবল মিল্টু ঘোষকেই তিনি সামনাসামনি দেখেননি। তাঁর মতে, প্রবীণ গীতিকার ছিলেন স্বর্ণযুগের শেষ চিহ্ন। তাঁর প্রয়াণ একটা যুগকেই যেন মুছে দিল। এদিন জয়ের আরও আফসোস, এই প্রজন্ম মনে রাখেনি স্বর্ণযুগের শিল্পী, গীতিকার, সুরকারদের। তাঁদের আগ্রহই নেই গানের স্বর্ণযুগকে মনে রাখার।