আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: টানা দশ বছর তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় কেসিআরের দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বইছে। তার ওপর রোজই একের পর এক দলের নেতা বিরোধী শিবিরে নাম লেখাচ্ছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের মুখে যা চাপে রেখেছে ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে (‌‌বিআরএস)‌‌। তেলেঙ্গানা গঠনের পর কেসিআরের দলকে এবারই সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে বিআরএস‌‌–কংগ্রেসের লড়াই সেয়ানে সেয়ানে। একাধিক সমীক্ষায় দুই দলের কড়া টক্করের সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। কয়েকটিতে আবার কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে, কেউ কাউকেই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। রোজই বিআরএস–‌বিজেপি থেকে দল ছাড়ছেন, যোগ দিচ্ছেন হাত শিবিরে। ফলে তেলেঙ্গানায় মাটি শক্ত হয়েছে কংগ্রেসের। নির্বাচনে জিততে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। রাজ্যে ক্ষমতা দখলে ৬ গ্যারান্টি নিয়ে ময়দানে হাত শিবির। অন্যদিকে, কেসিআরও বড় বড় ঘোষণা করছেন। ভোট প্রচারে গিয়ে নিশানা করছেন কংগ্রেসকেই।  ১১৯ বিধানসভা আসনের ভোট গ্রহণ হবে ৩০ নভেম্বর। ভোট প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেসিআরের দাবি,‘‌ভোটের মরসুমে এখন দিল্লি থেকে আসা নেতারা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু তেলেঙ্গানার মানুষ এদের ইতিহাস জানেন। বিআরএস সরকারের কাজের নিরিখে ভোট দেবেন জনগন।’‌ তেলেঙ্গানায় বদল হচ্ছেই, দাবি করছেন কংগ্রেস নেতারা। দলের নেতা রবনীত রেড্ডি থেকে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার পড়ে রয়েছেন ভোট প্রচারে। ভোটে জিততে ৬ গ্যারান্টি তাদের। কী সেই প্রতিশ্রুতি?‌ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে মহিলাদের জন্য মহালক্ষ্মী যোজনায় মাসে আড়াই হাজার টাকা দেবে, মহিলাদের জন্য হবে বাস যাত্রা বিনামূল্যে, গ্যাস সিলিন্ডার মিলবে ৫০০ টাকায়। কৃষক এবং ভাগচাষীরা বছরে ১৫ হাজার টাকা পাবেন। কৃষি শ্রমিকেরা ১২ হাজার টাকা পাবেন। ধানচাষে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। ‘ইন্দিরাম্মু ইন্দলু’ প্রকল্পে গৃহহীনদের জমি এবং পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তেলেঙ্গানা আন্দোলনকারীরা ২৫০ বর্গগজ জমি পাবেন। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুত বিনামূল্যে। তেলেঙ্গানার প্রত্যেক জেলায় থাকবে একটি করে তেলেঙ্গানা আন্তর্জাতিক স্কুল। ‘‌রাজ্য আরোগ্যশ্রী’‌ অধীনে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চার হাজার টাকা মাসিক ভাতা। এবং ১০ লক্ষ টাকা বিমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যের পড়ু্যাদের সহায়তায় ‘‌যুবা বিকশম’ প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এই সব জনমোহিনী প্রতিশ্রুতিতে সাড়াও মিলছে বলে দাবি কংগ্রেস নেতাদের। ‌  তবে ভারত রাষ্ট্রসমিতিও রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া। দাবি করা হচ্ছে, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কেসিআর সরকার ভাল কাজ করেছে। তেলেঙ্গানার মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই ভোট দেবে। অন্যদিকে, বিরোধী শিবির বলছে, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরেও তেলেঙ্গানার উন্নয়ন হয়নি। এবার বদলের পক্ষেই ভোট করতে চলেছে তেলেঙ্গানাবাসী। কংগ্রেস নেত্রী রেনুকা চৌধুরির কথায়,‘‌কেসিআর সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরছে কংগ্রেস। মহিলাদের জন্য কোনও নিরাপত্তা নেই রাজ্যে, অপরাধের হার উদ্বেগজনক। রাজ্যে মহিলারা নিরাপদ নয়, এটা জাতীয় লজ্জা। রেকর্ড বাল্যবিবাহেও। এটা একটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লজ্জা।’‌ কংগ্রেস নেত্রী দাবি করছেন, কংগ্রেস তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় আসছে। এদিকে, তেলেঙ্গানায় এবার ভোটের লড়াইয়ে নেই চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি। দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি টিডিপি প্রধান। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এবার তেলেঙ্গানায় ভোটে লড়ছেনা টিডিপি। দলের প্রধান নেতাই জেলবন্দি, সেক্ষেত্রে দলের হয়ে প্রচার করা সম্ভব নয়। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়। এরপরই তিনি এনিয়ে মতামত দেন বলে খবর। প্রসঙ্গত ২০১৪ সালে তেলেগু দেশম পার্টি ১৫টা আসন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটে দুটি আসন পেয়েছিল। তবে তারপর বিধায়কদের একাংশ দলত্যাগ করেন। ভোট ময়দানে চন্দ্রবাবুর দলের অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যের সব আসনে লড়াইটা বিআরএসের সঙ্গে কংগ্রেসেরই।