প্রভাতীর বয়স তখন ৪-৫। দিদিকে গান শিখতে দেখে জেদ ধরলেন, প্রায় হারমোনিয়ামে উঠে বসলেন। তাঁকে শিখতেই হবে। অগত্যা মেয়েকে গান শেখানো শুরু। সাঙ্গীতিক পরিবারেই জন্ম প্রভাতীর। মা শোভারানী মুখোপাধ্যায় সেই সময় অল ইন্ডিয়া রেডিও আর্টিস্ট ছিলেন। মায়ের মতই গানের গলা মেয়েরও। তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু মেহেদী হোসেন খান। এরপর মীরা বন্দোপাধ্যায়, উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, তালিম নিয়েছেন তাবড় তাবড় সব শিল্পীদের কাছে।
৬০ এ পা দিয়ে তাই "যেভাবে আমাকে চেনো"র মঞ্চে প্রাণখুলে গান গাইলেন প্রভাতী। ২১ জানুয়ারি, ২০২৪, বিড়লা অ্যাকাডেমি অডিটোরিয়ামে। "মেরে হামনাফস", "জোছনা করেছে আড়ি", "ফুলকরবী ঘোমটা খোলো", "আজ জানে কী জিদ না করো"... একের পর এক। কানায় কানায় পূর্ণ দর্শকমণ্ডলীতে তখন চোখের জল আর "কেয়াবাত" প্রতিধ্বনি। "নব ছন্দম" এর প্রথম প্রয়াস কার্যত এভাবেই সফল করলেন শিল্পী। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিধায়ক দেবাশিষ কুমার। মঞ্চে প্রভাতী মুখোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি। এই পরম্পরা যাতে এগিয়ে চলে, সেই প্রার্থনাও জানিয়েছেন।
"জোছনা করেছে আড়ি"- সে পরম্পরা আজও বয়ে চলেছেন প্রভাতী মুখোপাধ্যায়। না আক্ষেপ নেই কোনও তাঁর। আরও পরিচিতি, আরও পুরস্কার , কোনওটাতেই মোহ নেই যে আর। চাওয়া শুধু একটাই- সুরে থাকা। ছোটবেলাতেই ৭টি বিভাগে প্রথম হয়ে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। যে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেননি। মঞ্চে তিনি যেন ছোট্ট শিশুটি। গাইতে গাইতে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে উঠলেন, "আপনাদের ভাল লাগছে? ভাল গাইতে পারছি তো? এবার কোন গানটা গাইবো?" হারমোনিয়ামে হাত দেওয়ার আগে গুরুকে স্মরণ করলেন চোখ বন্ধ করে। ফিসফিস করে বললেন "ঠাকুর দেখো"! শেষবেলায় গানে গানে বলে গেলেন, "অবহেলা নয় প্রিয়, চাহ যদি ব্যথা দিও/ অশ্রুমাধুরী এনো, এ আঁখিপাতে/ ফিরায়ে দিও না মোরে শূন্য হাতে... ""
