আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’র প্রভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকা। মঙ্গলবার রাত থেকেই জেলার বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে দফায় দফায় বৃষ্টির প্রবল দাপট। কাঁথি, রামনগর, হেঁতালিয়া, নন্দীগ্রাম, তমলুক-সহ একাধিক এলাকায় বৃষ্টির জেরে নিম্নাঞ্চলগুলিতে জল জমতে শুরু করেছে। তমলুক শহরে মঙ্গলবার বিকেলেই প্রবল হাওয়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোর গেট ভেঙে পড়ে। বুধবার সকাল থেকে আবারও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ায় জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। 

দিঘা, তাজপুর ও মন্দারমণি-সহ সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলিতে বুধবার সকাল থেকেই চলছে প্রশাসনের মাইকিং। পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি ঘাটে দড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ঘাটে ব্যারিকেডও বসানো হয়েছে। সমুদ্রের জল ফুলে উঠেছে, উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরবর্তী অঞ্চলে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নন্দীগ্রাম, খেজুরি, কাঁথি ও রামনগরের নিচু এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকদের আপাতত হোটেলের ভিতরেই অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের উপর সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূল জুড়ে ঘন কালো মেঘ, দফায় দফায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলছে। জেলা প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে। এলাকার বাসিন্দাদের অযথা বাইরে না বেরনোর আবেদন জানানো হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির কারণে ফসলেরও ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে বারণ করা হয়েছে।

অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মান্থা। প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজ্যেও। ভারী বৃষ্টির ফলে পাকা ধান নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে প্রতিটি মহকুমা ও ব্লকস্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। 

এই অকাল বৃষ্টিতে মাথায় হাত ধান চাষীদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকায় বোরো ধান ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকার সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, ক্যানিং, জয়নগর, ডায়মন্ড হারবার-সহ একাধিক জায়গায় এই সময় বোরো ধান চাষ করে কৃষকেরা। বৃষ্টির ফলে ধান গাছের গোড়াতে জমতে শুরু করেছে জল আর এই জমা জলের কারণে মাঠে নষ্ট হবে ফসল এমনটাই আশঙ্কা এলাকাবাসীদের। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূল তীরবর্তী এলাকায় মাটির নদী বাঁধগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়ার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে এলাকার মানুষেরা। 

আরও পড়ুন: কোথাও ধস, কোথাও গাছ উপড়ে প্রাণহানি, ১১০ কিমি বেগে ঝড়ের দাপটে তছনছ অন্ধ্রপ্রদেশ, আজও বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

এ বিষয়ে সাগরদ্বীপের বাসিন্দা তরুণ মাইতি বলেন, “ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাব পড়তে শুরু করে দিয়েছে আমাদের এই এলাকায়। অতিবৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান চাষ। আমাদের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ মাটির নদীবাঁধ। সমুদ্র যদি উত্তাল হয়ে যায় তাহলে মাটির বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। নোনা জল ঢুকে গ্রামের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মৎস্যজীবীরা উপকূলে ফিরে আসছেন। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়ান রাজ্য সরকার”। 

কৃষক অরবিন্দু মণ্ডল বলেন, “ধান গাছের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়েছে। ধান গাছের গোঁড়াতে জমা জল থাকার কারণে নষ্ট হয়েছে ফসল। কি হবে বুঝতে পারছি না।”

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দক্ষিণবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই চার জেলায় হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা। 

আগামিকাল বৃহস্পতিবার বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়ায় ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা রয়েছে। এই জেলাগুলিতে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।