আজকাল ওয়েবডেস্ক: সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই সর্বত্র পার্টি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে কিছু পার্টি তাদের বিশাল পরিসরের জন্য বিখ্যাত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ৮৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্যের শক্তিশালী রাজা দ্বিতীয় আশুরনাসিরপালের ভোজ। দ্বিতীয় আশুরনাসিরপাল ইতিহাসে এমন এক রাজা হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি সর্বকালের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং অমিতব্যয়ী পার্টির আয়োজন করেছিলেন। এই পার্টি তাঁর সম্পদ, ক্ষমতা এবং প্রভাবকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরেছিল।

এই ভোজসভাটি ১০ দিন ধরে চলেছিল এবং প্রায় ৬৯,৫৭৪ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিকরা এটিকে ‘বিশ্বের প্রথম রেকর্ড করা মেগা-ফিস্ট’ বলেও অভিহিত করেন। কারণ এটি একটি পাথরের ফলকে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। এবং ইতিহাসের প্রাচীনতম পরিচিত মেনু। ভোজসভাটি খাবার এবং বিনোদনের চেয়ে অনেক বেশি ছিল সাম্রাজ্যের শক্তি এবং সম্পদের প্রদর্শনী। 

রাজধানীর আসন হিসেবে কালহু (বর্তমান নিমরুদ)-র পুনর্নির্মাণ এবং একটি জমকালো প্রাসাদের উদ্বোধন উপলক্ষে এই ভোজসভার আয়োজন করা হয়েছিল। রাজা কালহুকে একটি নতুন নকশার ‘আনন্দের প্রাসাদ’ হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। যার দরজা ছিল ব্রোঞ্জের, ছাদ দেবদারু কাঠের এবং মনোরম বাগানের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই ভোজসভার উদ্দেশ্য ছিল রাজার সামরিক সাফল্য এবং অর্থনৈতিক সম্পদের প্রদর্শন।

এই উৎসবের সমাবেশ ১০ দিন ধরে চলেছিল। যা প্রাচীন বিশ্বে অনেক দীর্ঘ সময় ছিল। এই উদযাপনের মূল লক্ষ্য ছিল নতুন প্রাসাদটি উৎসর্গ করা এবং শহরের পুনরুদ্ধার উদযাপন করা। রাজা বিদ্রোহী অঞ্চলের পুরুষ-সহ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষকে তাঁদের আনুগত্য নিশ্চিত করতে এবং তাঁর শাসনের সংহতি প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

আরও পড়ুন: বিয়েবাড়ির আয়া হয়েই দৈনিক আয় ৮৮ হাজার টাকা! কী করতে হয়, ভারতে মেলে এই কাজ?

অনুষ্ঠানটি ব্যতিক্রমীভাবে পরিকল্পিত ছিল, যার মধ্যে ছিল আচার-অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা এবং সাম্প্রদায়িক ভোজ, যা রাজার সাংগঠনিক শক্তির প্রতিফলন ঘটায়। মোট ৬৯,৫৭৪ জন অংশগ্রহণকারী ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন, যা সেই সময়ের জনসংখ্যার জন্য একটি অভূতপূর্ব সংখ্যা ছিল। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন রাজধানীর উচ্চপদস্থ কর্তা, সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধি, অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্যের রাষ্ট্রদূত এবং সাধারণ মানুষ।

ভোজসভার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল মেনু, যা ফলকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। দেবতাদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হিসেবে রাজা হাজার হাজার পশু উৎসর্গ করেছিলেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, মেনুতে ছিল ১,০০০ ষাঁড়, ১,০০০ বাছুর, ১০,০০০ ভেড়া, ১৫,০০০ ভেড়ার বাচ্চা, ৫০০ হরিণ, ৫০০ হরিণ, ১,০০০ হাঁস, ৫০০ রাজহাঁস, ৫,০০০ কার্লিউ, ১,০০০ মেসুকু পাখি, ১,০০০ ক্যারিবু পাখি, ১০,০০০ পায়রা, ১০,০০০ সুকানুনু পায়রা, ১০,০০০ অতিরিক্ত ছোট পাখি, ১০,০০০ মাছ, ১০,০০০ ডিম এবং ১৪,০০০ ভেড়া।

খাদ্য তালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, ভেষজ এবং সংরক্ষিত খাবারের পাশাপাশি ১০,০০০ জারেরও বেশি বিয়ার এবং ১০,০০০ পাত্রে ওয়াইন রাখা ছিল। ভোজসভায় হাজার হাজার রুটি এবং বিভিন্ন ধরণের খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল, যা অনুষ্ঠানটিকে রন্ধনশিল্পের এক অসাধারণ নিদর্শন করে তুলেছিল।

১৯৫১ সালে ইরাকে আবিষ্কৃত এবং চার টন ওজনের ফলকটিতে এই অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করা হয়েছিল এবং এটি রেস্তোরাঁ-ধাঁচের মেনুর প্রাচীনতম উদাহরণগুলির মধ্যে একটি। ফলকটি আজও ব্রিটিশ জাদুঘরে রয়ে গিয়েছে, যদিও ৬১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কালহুর পতনের সময় প্রাসাদটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।