আজকাল অল্প বয়সেই চুল পাকা আর নতুন কিছু নয়। আগে যেখানে চুল পাকা মানেই বয়স বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ ধরা হত, এখন অনেকেই ২০ বা ৩০ বছর বয়সেই মাথায় সাদা চুল দেখতে পান। এর কারণ স্পষ্ট— অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব এবং দূষণ। এসব কারণ শরীরের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। ফলে অনেকে এই সমস্যা রোধে নানা উপায় খোঁজেন— কেউ দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, কেউ আবার ঘরোয়া উপায়ে ভরসা রাখেন।
 
 এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এক সহজ ঘরোয়া উপায়— তামার পাত্রে রাখা জল পান করা। দাবি করা হচ্ছে, এটি নাকি চুল পাকা কমাতে সাহায্য করতে পারে। পুষ্টিবিদ লিমা মহাজন তাঁর এক ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে বলেছেন, তামার পাত্রের জল শুধু চুল নয়, শরীরের জন্যও উপকারী। জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে তামার জল চুলের রং ফেরাতে সাহায্য করে এবং এর সঙ্গে আরও কিছু সহজ টিপস, যা চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পারে।
তামার পাত্রের জল পান করার উপকারিতা
 
 পুষ্টিবিদ লিমা মহাজনের মতে, তামার পাত্রের জল শরীরে কপার বা তামার ঘাটতি পূরণ করে। কপার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা মেলানিন তৈরি করতে সাহায্য করে। মেলানিনই চুলের স্বাভাবিক কালো রঙের জন্য দায়ী। শরীরে যখন মেলানিনের উৎপাদন কমে যায়, তখন চুল সাদা বা ধূসর হয়ে যায়।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তামার পাত্রে রাখা জল পান করলে শরীরে তামার পরিমাণ বাড়ে। এতে মেলানিন তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং ধীরে ধীরে চুল পাকা কমতে পারে। যদিও এটি কোনও জাদু নয়। নিয়মিতভাবে করলে এর সুফল স্পষ্ট বোঝা যায়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
 
 রাতে এক গ্লাস জল তামার পাত্রে ভরে রাখুন। সকালে খালি পেটে সেই জল পান করুন। তবে পাত্রটি প্রতিদিন ভালভাবে পরিষ্কার রাখুন যাতে তাতে মরচে বা ময়লা না জমে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ, প্রতিদিন সকালে এক চামচ কালো তিল খেলে ফল আরও দ্রুত দেখা যায়। কালো তিল প্রাকৃতিকভাবে চুল মজবুত করে এবং রং গাঢ় রাখতে সাহায্য করে।
চুলের আরও সহজ ঘরোয়া যত্ন
 
 
 চুল পড়া বা পাতলা হওয়া
 
 এক মুঠো ভেজানো মেথি দানা এলং তাজা আমলার পাল্প একসঙ্গে বেটে স্ক্যাল্পে লাগান। সপ্তাহে একবার করলে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।
 
 
 চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে
 
 রোজমেরি তেল সামান্য জলে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। এটি স্ক্যাল্পে পুষ্টি জোগায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
 
 
  চুল ভাঙা রোধে
 
 খাবারে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত করুন। নন-ভেজ খেলে মাছ একটি ভাল উৎস, আর নিরামিষভোজীরা ওমেগা–৩ ক্যাপসুল নিতে পারেন। এটি চুলকে ভিতর থেকে শক্ত করে।
 
 
  ফ্রিজি বা রুক্ষ চুলে
 
 কন্ডিশনারে এক–দু’ ফোঁটা হেয়ার সিরাম মিশিয়ে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। চুল হবে নরম এবং উজ্জ্বল।
লিমা মহাজনের মতে, চুলের যত্নের জন্য সবসময় দামি প্রোডাক্ট বা ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস — যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো এবং প্রাকৃতিক উপায়ে যত্ন নেওয়া — এগুলোই চুলের অবস্থার উন্নতি ঘটায়।
 
 তামার পাত্রের জল কোনো চটজলদি সমাধান নয়, তবে এটি ধীরে ধীরে শরীরকে ভিতর থেকে শক্ত করে তোলে, যার ফলে সাদা চুলের সমস্যা কমে এবং চুল হয় আরও স্বাস্থ্যবান এবং মজবুত।
