আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক দিকে অসহনীয় ম্যানেজারের ষড়যন্ত্রে চাকরি খুইয়েছেন, অন্য দিকে সেই ম্যানেজারই এখন তাঁকে আবার চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। এক ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর এমনই এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতাকে ঘিরে তোলপাড় নেটমাধ্যম।
রেডিট-এর 'ইন্ডিয়ান ওয়ার্কপ্লেস' নামক একটি সাবরেডিটে ওই ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁর পোস্টটির শিরোনাম ছিল, "উচ্চ বেতনের চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েছি। এখন ওঁরা আমাকে ফিরে যেতে বলছেন।"
পোস্টে ৩১ বছর বয়সি ওই তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শদাতা জানিয়েছেন, এক দশকের চেষ্টায় তিনি তাঁর কেরিয়ার ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন। অবশেষে একটি ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থায় বছরে ৩০ লক্ষ টাকা বেতন এবং অতিরিক্ত স্টক ইউনিটের (আরএসইউ) একটি সুবিধাজনক পদে কাজ করছিলেন।
তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের শুরুতে একটি বিদেশি সংস্থা একক চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসাবে কাজ করার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। একাধিক দফায় ইন্টারভিউ দেওয়ার পর তাঁকে বর্তমান বেতনের উপর ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সঙ্গে ছিল বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা এবং একেবারে গোড়া থেকে একটি নতুন প্রকল্প তৈরির সুযোগ।
শুরুতে সব ঠিকঠাকই চলছিল। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতেন, এমনকী অনেক সময়ে অতিরিক্ত সময়ও দিতেন। তাঁর কাজে ম্যানেজার এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উভয়েই খুশি ছিলেন। কিন্তু ওই কর্মীর দাবি, ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে তাঁর চুক্তি পুনর্নবীকরণের পরেই পরিস্থিতি বদলে যায়।
তাঁর ম্যানেজারও একজন ভারতীয়। এরপর তিনি তাঁর কাজে অতিরিক্ত নজরদারি শুরু করেন, ছোটখাটো ভুলের জন্যেও সমালোচনা করতে থাকেন এবং ওভারটাইমের টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ওই প্রযুক্তি কর্মীর আরও অভিযোগ, তাঁর বস নিজের পছন্দের এক ব্যক্তিকে সেই পদে নিয়োগ করার জন্য অনৈতিক ভাবে চাপও দিচ্ছিলেন।
এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ম্যানেজারের আচরণ আরও খারাপ হতে থাকে বলে জানান ওই ব্যক্তি। এমনকী, তাঁকে মুখে গালিগালাজ করা এবং ছুটির আবেদন খারিজ করার মতো ঘটনাও ঘটে। অবশেষে আগস্ট মাসে 'কাজে অদক্ষতা'র কারণ দেখিয়ে একটি ইমেল মারফত তাঁকে ছাঁটাই করা হয়। আচমকা চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি পেশাদারিত্বের সঙ্গে নোটিস পিরিয়ড সম্পূর্ণ করেন এবং অন্য দলগুলির কাছ থেকে প্রশংসাও পান।
দু'মাস বাদে, কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার পর, তিনি ওই সংস্থারই মানবসম্পদ বিভাগের (এইচআর) কাছ থেকে একটি ফোন পেয়ে অবাক হন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি পুনরায় সংস্থায় যোগ দিতে ইচ্ছুক কি না। পরে তিনি জানতে পারেন, ম্যানেজারের পছন্দের প্রার্থী ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এখন ওই কর্মী বুঝে উঠতে পারছেন না, তাঁর কি উচ্চ বেতনের ওই চাকরিতে ফিরে যাওয়া উচিত, নাকি নতুন কোনও পথের সন্ধান করা উচিত। তিনি লিখেছেন, "আমি এখন বিভ্রান্ত। আমি কি এই ভেবে ফিরে যাব যে পরিস্থিতি হয়তো ভাল হবে এবং মোটা মাইনে পাব, নাকি নিজের অবস্থানে স্থির থেকে অন্য কোথাও চেষ্টা করব? কিন্তু আমি নিশ্চিত যে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এত বেতনের চাকরি আমি অদূর ভবিষ্যতে আর কোথাও পাব না।"
তিনি আরও যোগ করেন, "আমি এ-ও জানি যে, প্রত্যেকেরই বিকল্প থাকে এবং ওরা আমার জায়গায় নিশ্চয়ই এক জন ভাল লোক পেয়ে যাবে। তাই আর্থিক দিক থেকে চূড়ান্ত লোকসান আমারই হবে এবং ম্যানেজার হয়তো সামান্য তিরস্কার পেয়েই পার পেয়ে যাবেন।"
