আজকাল ওয়েবডেস্ক: সীমান্তে উত্তেজনা, যাঁর গভীর আঁচ পড়েছে মায়ের সঙ্গে ভারতে আসা দুই পাকিস্তানি শিশুর মনেও। ভিসা বাতিলের জেরে ভারতীয় পাসপোর্টধারী মা-কে দিল্লিতে রেখেই কাঁদতে কাঁদতে এ দেশে ছাড়লেন দুই পাকিস্তানি শিশু। যা সত্যিই হৃদয়বিদারক। 

১১ বছর বয়সী জয়নব এবং ৮ বছর বয়সী জেনেশ মায়ের সঙ্গে অসুস্থ দিদিমাকে দেখতে দিল্লিতে এসেছিল। এই দুই শিশুর বাবা পাকিস্তানি। তাদের মা ভারতীয়। কিন্তু থাকেন স্বামীর বাড়িতেই। ফলে শিশু দু'টিও পাকিস্তানেরই নাগরিক। তাদের কাছে একমাসের ভিসা ছিল।

এসবের মধ্যেই গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটে। নিহত হন ২৫ জন পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন নিরীহ মানুষ। এরপরই ভারত, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে। ২৭ এপ্রিলের মধ্যে এ দেশে আসা সকল পাকিস্তানি বৈধ ভিসাধারীদের ফিরে যেতে বলা হয়। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপেই ঘোর বিপদে পড়ে জয়নব ও জেনেশ।

আদেশ মেনে এই দুই শিশু মাকে এ দেশে রেখেই বাধ্য হয়ে পাকিস্তানে ফিরছে। সীমান্ত পেরনোর সময় তাদের চোখে জল, কণ্ঠস্বর বুঁজে এসেছিল। দেশে ফিরে যাওয়ার সময়, ভগ্ন হৃদয়ে ১১ বছরের জয়নব সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "আমার মাকে রেখে যাওয়া খুব কঠিন। আমার মন ভেঙে গিয়েছে।"

জয়নব আরও বলে, "আমি দিল্লিতে আমার দিদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, কিন্তু এখন আমরা আমার মাকে ছাড়াই ফিরে যাচ্ছি কারণ তার ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে এবং আমরা পাকিস্তানি।"

ছোট্ট শিশুরা সীমান্ত-রেখা বোঝে না, জানে না দুই দেশের জটিল অবস্তার কথা। তারা শুধু চেনে মা ও নিকট আত্মীয়দের। তাই তো জয়নরা বারে বারেই মাকে পাকিস্তানে ফিরতে বলছিল। তখন মায়ের চোখে জল, অসহায় অবস্থা তাঁর। জয়নবের কথায়, "মাকে বেশ কয়েকবার আমার সঙ্গে আসতে বলেছিলাম, কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে সরকার যা নির্দেশ দিয়েছে তা মানতেই হবে।"

 

জঙ্গি হামলা ভয়ঙ্কর, ক্রমেই বুঝতে পারছে জয়নব, জেনেশ। তাই তো পহেলগাঁও-র সন্ত্রীসবাদীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা। বলেছে, "অপরাধীদের শাস্তি দক সরকার। কিন্তু যেন, আমাদের মতো নিরীহ মানুষদের বিরক্ত করা না হয়।"

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে দাঁড়িয়ে, জয়নবের ছোট বোন জেনেশ-ও দুঃখ প্রকাশ করে বলছিলো, "আমি আমার মাকে ছাড়া থাকতে পারব না।"
গত মাসেই করাচি থেকে ভারতে আসা পরিবারটি যেন দুঃস্বপ্নের যাত্রা করছে। 

?ref_src=twsrc%5Etfw">April 27, 2025

একই অবস্থা করাচি থেকে ভারতে আসা আরেক শিশু আলিয়ানের। শিশুরটির কথায়, "আমি আমার মাকে পাকিস্তান যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন করছি।" আলিয়ানের বাবা মহম্মদ ইরফান তাঁদের দুর্দশার ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় বলেন, "আমরা গত মাসে করাচি থেকে ভারতে এসেছিলাম। আজ আমরা আমার স্ত্রী নাবিলাকে ছাড়াই ফিরে যাচ্ছি, কারণ তাঁর কাছে ভারতীয় পাসপোর্ট আছে। আমার সন্তানরা বিধ্বস্ত। এই সন্ত্রাসীবাদীরা আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।"  

একই অবস্থা, মহম্মদ ইমরানের। তাঁর স্ত্রী শারমিন এবং মেয়েদের সঙ্গে এসেছিলেন এ দেশে। কিন্তু, এখন তাঁদের অবস্থা হৃদয়বিদারক বাস্তবতার মুখোমুখি। ইমরান বলেন, "আমি আমার মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু এখন আমার স্ত্রী শারমিনকে ভারতীয় পাসপোর্ট থাকায় পাকিস্তানে ফিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।" তাঁর সংযোজন, "আমার স্ত্রী গত ১৮ বছর ধরে পাকিস্তানে ছিলেন কিন্তু নাগরিকত্ব পাননি।"

ইরফান এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন। অনুরোধ করে বলছেন, "মোদিকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। শিশুরা মা ছাড়া বাঁচতে পারে না।"