জি বাংলায় নতুন ধারাবাহিক ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’। নতুন জুটি রণজয় বিষ্ণু-শ্বেতা ভট্টাচার্য। আছেন অমিমেষ ভাদুড়ি, অদিতি চট্টোপাধ্যায়, নীল চট্টোপাধ্যায়, উদয়প্রতাপ সিং, মিশমি দাস প্রমুখ। দাসানি ১ স্টুডিওয় এক্সক্লুসিভ সেট ভিজিটে উপালি মুখোপাধ্যায়

বড়দিন কড়া নাড়ছে। শহর সেজে উঠছে। সেই ঝলক হঠাৎই ধরা পড়ল দাসানি ১ স্টুডিওয়। জি বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’-এর সেটে। আধুনিক সরঞ্জামে সাজানো বাড়ির অন্দর। বসার ঘরে লাল বেলুন, ক্রিসমাস গাছ, রঙিন তারা, ঘণ্টা। অনেকের চোখে ওভার সাইজড পার্টি গ্লাস। কারও মাথায় ক্রিসমাস টুপি। পোশাকে লালের ছোঁয়া। এমন এক উৎসবের পরিবেশে আজকাল টেলিভিশন হাজির।সব

কেক খেয়ে ফেলেনি তো!!...
জোরকদমে শুট চলেছে। নানা অ্যাঙ্গেল থেকে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। কেকের থালা হাতে আসাযাওয়া চলছে। কেক খাওয়ার দৃশ্যও নেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ, বার দু’য়েক টেক হওয়ার পরেই পরিচালক সৃজিত রায়ের উদ্বিগ্ন গলা, ‘‘ওরে, থালায় কেক আছে তো?’’ শুনে হেসে ফেলেছেন বাকি কলাকুশলীরা। তাঁদেরই একজন আশ্বস্ত করেছেন, ‘‘দাদা, অনেকটা আছে।’’ 




অনুজ না অনিকেত?
পরিবার মেতেছে ক্রিসমাস উদযাপনে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে রণজয় বিষ্ণু। ধারাবাহিকের নায়ক ‘অনিকেত’। সম্প্রতি, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের হিন্দি ধারাবাহিক ‘ঝনক’-এর শুট সেরে ফিরেছেন কাশ্মীর থেকে। তারপরেই জি বাংলার নতুন ধারাবাহিকে। চ্যানেল বদলেছেন। অভিনীত চরিত্রও। কিন্তু অনুরাগীরা যে বলছেন, এখনও নাকি ধারাবাহিক ‘গুড্ডি’র ‘অনুজ’-এর গন্ধ গায়ে লেগে? অভিনেতার যুক্তি, ‘‘আমাদের কাজ নতুন নতুন ধারাবাহিকে ভিন্ন স্বাদের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা। কেউ আমায় ‘অনুজ’ হিসেবে মনে রাখবেন। আগামী হয়তো অনেকে ‘অনিকেত’ নামে ডাকবেন। এটাই রীতি।’’ কথায় কথায় এও জানিয়েছেন, আগের অভিনীত চরিত্র থেকে এই চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ধারাবাহিকে তিনি ক্যাটারিংয়ের ব্যবসায়ী। ভীষণ অন্তর্মুখী। বিশেষ কারণে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না। ধরতে চানও না। তাই ভিড়ের মধ্যেও একা।

অনেকটাই রণজয়ের মতো? যিনি দৃশ্য ফুরোতেই একটু দূরে দাঁড়িয়ে বাকিদের অভিনয় দেখছেন?

রণজয়ের দাবি, মিল রয়েছে। তবে পুরোটা নয়। তিনি কিন্তু লোকজনের সঙ্গে মেশেন, কথা বলেন। এবং খেতে ভালবাসেন। ফলে, ক্যাটারিংয়ের ব্যবসায়ীর চরিত্র পেতেই লুফে নিয়েছেন। নিজেকে নতুন করে ভাঙার সুযোগও রয়েছে। ছোট্ট রসিকতা, ‘‘টাকার জন্যও রাজি হয়েছি।’’ পর্দায় প্রথম জুটি হলেও বাস্তবে অনেক বছর ধরে শ্বেতাকে চেনেন রণজয়। জানিয়েছেন, একদম আনকোরার সঙ্গে অভিনয় আর পরিচিত কারও সঙ্গে কাজ করার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। এই জুটি তাই তাঁর কাছে ইতিবাচক। স্টার জলসার প্রায় জন্মলগ্ন থেকে নায়ক তাদের সঙ্গে। হঠাৎ চ্যানেল বদল? সঙ্গে সঙ্গে সজাগ স্বর, ‘‘কোনও সমস্যা নেই। নতুন চ্যানেলের সঙ্গে পরিচিত হব বলেই এই ধারাবাহিকে। ওরাও ভাল চরিত্র দিয়েছে। দিনের শেষে অভিনয়টাই তো আমাদের পেশা।’’

ভাতের হাঁড়ি উল্টোতে পারি

শ্বেতা ভট্টাচার্য, ‘সোহাগ জল’ থেকে ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ ধারাবাহিকে। চরিত্রের নাম ‘শ্যামলী’। শ্বেতার কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গের মেয়ে। ভাতের হোটেল আছে। মা-বাবা নেই। ভাইদের মানুষ করে বিয়ে দিয়েছে। এখন তাদেরই গলগ্রহ সে। তার উপরে একা কিছুই করতে পারে না। এমন একটা মেয়ে বাধ্য হয়ে কলকাতায়। এবং খারাপ লোকের খপ্পরে। তাকে রক্ষা করবে অনিকেত।’’ তারপর? হেসে ফেলে জবাব, তারপরেরটা তিনিও জানেন না! এখনও বাকিদের সঙ্গে শুট হয়নি। কেবল উত্তরবঙ্গে তাঁর অংশের শুট হয়েছে। তিনি চিত্রনাট্য মেনে সবে কলকাতায় পা রেখেছেন।

ধারাবাহিকে ভাতের হোটেল শ্যামলীর। বাস্তবে ভাতের হাঁড়ি উল্টোতে পারেন শ্বেতা? খুশি গলায় জবাব, ‘‘ভাতের হাঁড়ি উল্টোতে পারি। রান্নাবান্না করতে পারি। চালিয়ে নেওয়ার মতো সংসারের কাজ জানি’’। তারপর আনমনা গলায় জানালেন, কোথাও যেন ‘শ্যামলী’র মতো। একা কিছুই পারেন না। মা সঙ্গে না থাকলে চলে না। পাশের পাড়ায় যেতে গেলেও মাকে ডাকেন। কেবল এটিএম কার্ড তাঁর আছে। এখনও মূল গল্পে প্রবেশ ঘটেনি। কিন্তু মেকআপ রুমের আড্ডায় ঘাটতি নেই।
সাতটি ধারাবাহিকে সাত রকমের চরিত্র করে ফেলেছেন। কোনটা বেশি লড়াকু? একটু ভেবে শ্বেতা বলেছেন, ‘‘সাতটা সাত রকম। তবে অভিনয় করেত গিয়ে মনে হচ্ছে ‘শ্যামলী’র লড়াই বেশি। একদম অন্তর্মুখী সিধেসাধা মেয়ের লড়াই তো বাকিদের থেকে অনেক বেশি।’’ 



নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক
সেটে সারাক্ষণ হইহই করছেন মিশমি দাস। মনের মতো পোশাক তাঁর। লাল ড্রেস। তার উপরে লাল-কালো চেকের লং জ্যাকেট। মাথায় সান্তা টুপি। পুরোপুরি পার্টি সাজে সেজেছেন। আজকাল ডট ইনের মুখোমুখি হতেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিলেন। বললেন, ""নেতিবাচক চরিত্র করতে করতে ক্লান্ত। জি বাংলাকে অনেক ধন্যবাদ। আমায় ইতিবাচক চরিত্র দেওয়ার জন্য। এখানে আমি রণজয় ওরফে "অনিকেত"-এর নিজের বোন। খুব খোলা মনের মেয়ে। সারাক্ষণ হইহই করছি। দেখেছেন, কী সুন্দর সাজিয়েছে আমায়!"" কিন্তু অনেক চরিত্রে প্রথমে ইতিবাচক হয়ে ফের নেতিবাচকে ফিরে গিয়েছেন। এটাও যদি তেমন হয়? জোড়হাতে কাকুতি, যেন না হয়। তিনি মন থেকে চাইছেন, তিনি যে খুব ভাল সেটাই যেন এই ধারাবাহিকে দেখাতে পারেন।