আজকাল ওয়েবডেস্ক: বছরের পর বছর ধরে তাঁকে ধরা যাচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত পুলিশের জালে দিল্লির 'লেডি ডন' জোয়া খান। পুলিশ সূত্রে খবর, ২৭০ গ্রাম হেরোইন-সহ তাকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। যার আনুমানিক বাজারদর প্রায় ১ কোটি টাকা!

জোয়া, কুখ্যাত গ্যাংস্টার হাশিম বাবার স্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকলেও ৩৩ বছর বয়সী জোয়ার নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশের অভিযোগ, জেলবন্দি স্বামীর অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা করছিলেন জোয়া। অপহরণ, তোলাবাজি-সহ নানা অপরাধমূলক কাজের নেতৃত্ব দিতেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলছিল না। ফলে পুলিশও কোনও কঠিন ধারায় এই মহিলার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারেনি।  

২০১৭ সালে হাসিম বাবাকে বিয়ে করেছিলেন জোয়া। তার আগে আরও একজনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। হাসিমের সঙ্গে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন জোয়া। এরপর হাসিম বাবা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর অপরাধ জগতের নেতৃত্ব দেন তিনি।

অপরাধের সাম্রাজ্য
বাবাকে জেলে পাঠানোর পর, জোয়া এই অপরাধ জগৎ পরিচালনার দায়িত্ব দিতেন জোয়া। সূত্রের খবর, জোয়া তাঁর স্বামীর গ্যাংয়ে হাসিনা পার্কার নামে অবতীর্ণ হন, যিনি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের বোন, যিনি একসময় তাঁর অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের সূত্র বলছে যে, জোয়া তোলাবাজি, রাহাজানি এবং মাদক সরবরাহের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন।

জোয়া সবসময়ই একটি নির্দিষ্ট ভাবমূর্তি বজায় রেখেছিলেন। তিনি হাই-প্রোফাইল পার্টিতে যোগ দিতেন, দামি পোশাক পরতেন এবং বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের সব জিনিস ব্যবহার করতেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি ছিল চোকে পড়ার মতো।

জোয়া প্রায়শই তিহার জেলে তার স্বামীর সাথে দেখা করতে যেতেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায় যে, গ্য়াংস্টার বাবার সঙ্গে জোয়া সাংকেতিক ভাষায় কথা চালাতেন। স্বামীর থেকে গ্যাংয়ের আর্থিক এবং কার্যক্রম পরিচালনা করার টিপস এবং পরামর্শ নিতেন। কারাগারে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, বাইরে গ্য়াংয়ের সহযোগী অপরাধীদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ বজায় রাখতেন।

বছরের পর বছর ধরে, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল এবং ক্রাইম ব্রাঞ্চ জোয়াকে ধরতে বেশ কষ্ট করছিল। তবে এবার স্পেশাল সেল সফল হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ উত্তর-পূর্ব দিল্লির ওয়েলকাম এলাকা থেকে জোয়াকে গ্রেপ্তার করে। উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর থেকে আরও বিতরণের জন্য সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ হেরোইন-সহ তাকে হাতেনাতে ধরা হয়।

পুলিশের সন্দেহ, জোয়া নাদির শাহ হত্যা মামলায় জড়িত দুষ্কৃতীদের আশ্রয়ও দিয়েছিলেন। দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত গ্রেটার কৈলাস-১ এলাকার জিমের মালিককে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত মাসে, গুলি চালানোর ঘটনায় স্পেশাল সেলের লোধি কলোনি অফিসে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

পারিবারিক পটভূমি
জোয়ার পরিবারের বিরুদ্ধেও অপরাধের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যৌন পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জোয়ার মা ২০২৪ সালে জেলবন্দি হন। তিনি বর্তমানে জামিনে মুক্ত। তাঁর বাবা মাদক সরবরাহ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জোয়া নিজেও উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন স্থান থেকে, বিশেষ করে উসমানপুর থেকে কাজ করতেন, সবসময় গ্যাংস্টার স্বামীর ৪-৫ জন সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন।