কৌশিক রায়
হইহই করে চলছে ৪৮ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। নতুন বইয়ের গন্ধে ম ম করছে বইমেলা প্রাঙ্গণ। নতুন বইয়ের মলাট উল্টেপাল্টে দেখছেন বইপ্রেমীরা। আর ঠিক এর মধ্যেই কানে ভেসে আসছে দোতারার সুর। সেই সুর ধরে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলছে বিভিন্ন কবিতার বইয়ের। এই বছর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা সাক্ষী থাকল এক শিক্ষকের গল্পের। তিনি এক হাতে ছাত্র তৈরি করেন, আবার অন্য হাতে তুলে নেন কলম আর দোতারা। তাঁর কলমে একের পর এক তৈরি হয় ছড়া। সেই ছড়ার বই নিয়েই তিনি নিত্যদিন হাজির হন বইপ্রেমীদের কাছে। তবে সেই বই বিক্রিতেও রয়েছে অভিনবত্ব। প্রথমে দোতারার সুরে তিনি আকর্ষণ করেন সাধারণ মানুষকে, তারপর সেই সুরে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ এগিয়ে আসলে তিনি তাঁদের হাতে তুলে দেন নিজের লেখা ছড়ার বই।
এই ভাবেই এক হাতে বই আর অন্য হাতে দোতারা নিয়ে সারা বইমেলা ঘুরে বেড়ান কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন দেশপ্রিয় বিদ্যামন্দিরের ইতিহাসের শিক্ষক সুভাষ মণ্ডল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা গেল বইমেলার ১ নম্বর গেটের একটু ভেতরে দোতারা বাজিয়ে গান করতে। তার মাঝেই আজকাল ডট ইনকে তিনি জানালেন, ‘দোতারা বাজিয়ে বই বিক্রি করার কারণ শুধু মানুষকে আকর্ষিত করা নয়, আমার ভেতরে যে ভাবনা রয়েছে সেটাকে সবার সামনে তুলে ধরা। আমি কী, আমি কী করি, সেটা মানুষ জানতে পারেন। আমরা এমনি এমনি ঘুরে বেড়ালে মানুষ আকর্ষিত হন না। আকর্ষণ করতে হলে গানের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। শুধু আজ বলে নয় প্রাচীন কাল থেকেই এটা হয়ে আসছে’। কী গান বাজিয়ে বই বিক্রি করা হয় বইমেলায়?
সুভাষ জানালেন, ‘আমি নিজে গান লিখি। লোকগীতি, পল্লীগীতি লিখি, সুর দিই। অনেক গান লিখেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো প্রকাশও পেয়েছে। সেখানেও মানুষ সাড়া দিয়েছেন। এই বইমেলায় এসে অনেক মানুষ আমাকে চিনতে পেরেছেন। সেটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওনা’। এখানেই শেষ নয় সুভাষ মণ্ডলের গল্প। শুধু যে গান লেখা, সুর দেওয়া তাইই নয়, কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন দেশপ্রিয় বিদ্যামন্দিরের ইতিহাসের শিক্ষক তিনি। সকালে স্কুলে গিয়ে ইতিহাস পড়ান, তারপর আসেন বইমেলায়। এভাবেই প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে টানা বইমেলায় আসছেন তিনি। ৪০ বছর ধরে তিনি যুক্ত লেখালেখির সঙ্গে। উপন্যাস, গল্প, কবিতা সবকিছুরই বই রয়েছে তাঁর। সুভাষের বাড়ি সোনারপুরে। সেখান থেকে কেষ্টপুরে স্কুলে পড়িয়ে বিকেলে বইমেলা প্রাঙ্গণ। এটাই কলকাতা বইমেলা চলাকালীন নিত্যদিনের রুটিন তাঁর।
