আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কেরলের কোল্লামে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলা ও তাঁর দুই জমজ সন্তানের গলা কাটা দেহ। পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে ফিরে ওই মহিলার মা দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। মেঝেতে পড়ে রয়েছে তাঁর মেয়ে এবং দুই সন্তানের নিথর দেহ। তদন্তে নামে কেরল পুলিশ। খোঁজ মেলে দিভিল কুমার এবং রাজেশ নামে দুই অভিযুক্তের। দু'জনেই সেনাকর্মী ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ধরতে পারেনি।  অবশেষে মিলল সাফল্য। নৃশংস ঘটনার ১৯ বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অভিযুক্তদের ধরতে সক্ষম হল কেরল পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, রঞ্জিনী এবং দিভিল কেরলের একই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও ছিল। এরই মাঝে রঞ্জিনী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই তাঁর সঙ্গে দুরত্ব তৈরি করেন দিভিল। কর্মক্ষেত্রে ট্রান্সফার নিয়ে পাঠানকোট চলে যান। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যমজ সন্তানের জন্ম দেন রঞ্জিনী। তাঁর সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাইতে মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানান তিনি। মহিলা কমিশন ডিএনএ পরীক্ষায় সম্মতি দেয়। 

সেই সময় রাজেশ নামে এক ব্যক্তি অনিল কুমার নাম ধারণ করে রঞ্জিনীর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। কিন্তু রঞ্জিনী জানতেন না যে রাজেশ এবং দিভিল একে অপরের পরিচিত। পথের কাঁটা রঞ্জিনীকে সরিয়ে দিতে দু'জনে মিলে ষড়যন্ত্র করেছেন। রাজেশ রঞ্জিনীর মাকে একদিন নানা বাহানায় পঞ্চায়েত দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। এরপরে দিভিল এবং রাজেশ নৃশংস ভাবে খুন করেন রঞ্জিনী এবং তাঁর যমজ সন্তানদের। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বাইকের নম্বরপ্লেট উদ্ধার করে। সেই সূত্র ধরে পুলিশ পৌঁছে যায় পাঠানকোট পর্যন্ত। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে পালিয়ে যান দিভিল এবং রাজেশ। ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা ঘরে চলে যায় তদন্তটি।

২০২৩ সালে কেরল পুলিশে টেকনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স উইং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পুরনো মামলা সমাধান করতে উদ্যোগী হয়। রঞ্জিনীর খুনি দিভিল এবং রাজেশ ১৯ বছর পর দেখতে কেমন হতে পারেন প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ছবি তৈরি করেন তদন্তকারীরা। সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন ছবির সেই ছবি মিলিয়ে দেখা শুরু হয়। অবশেষে শিঁকে ছেড়ে কেরল পুলিশের। একটি বিয়ের ছবিতে রাজেশের মতো দেখতে একজনের খোঁজ মেলে। রাজেশের সঙ্গে তাঁর মুখের মিল প্রায় ৯০ শতাংশ। পুদুচেরিতে গিয়ে রাজেশকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে জেরা করেই খোঁজ মেলে দিভিলের।

গত ৪ জানুয়ারি খুনের ঘটনার ২০ বছর পর সিবিআই পুদুচেরি থেকে দিভিল এবং রাজেশকে গ্রেপ্তার করে। গত দুই দশক ধরে দু'জনে বার বার নাম পরিবর্তন করেছেন। কখনই একই জায়গায় বেশিদিন থাকতেন না। বিষ্ণু এবং প্রবীণ কুমার নামে ইন্টেরিয়ার ডিজাইনিংয়ের কাজ করে জীবনযাপন করছিলেন।