আজকাল ওয়েবডেস্ক: দু'দিনেই স্যান্ডো বা হারকিউলিস।‌ চোখ ধাঁধানো পেশিবহুল স্বাস্থ্য। দৃপ্ত পদক্ষেপে পথচলা। আশেপাশের লোকের সমীহ। সবমিলিয়ে একটা আলাদা জগৎ। যেটায় প্রবেশের জন্য প্রাথমিকভাবে দরকার একটা সুঠাম দেহ এবং সেটা একেবারেই অল্প সময়ের মধ্যে। ফলে বন্ধু বা অন্য কারুর পরামর্শ শুনে বাজার থেকে অ্যানাবলিক স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মুঠ মুঠ খাওয়া। ফল হয়ত হাতেনাতে পাওয়া যায়। কিন্তু তারপর?

 

তার এই পরেরটা কিন্তু খুবই ভয়ানক হতে পারে। কিন্তু সবার আগে জানা যাক, এই স্টেরয়েড মানবদেহের ভিতর কী কাজ করে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ও ভাইস প্রিন্সিপাল এবং কলেজের ফার্মোকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ অঞ্জন অধিকারী বলেন, 'মানবদেহের কিডনির মাথার উপর মুকুটের মতো একটি গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি আছে। যাকে বলা হয় অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড। যার থেকে নানারকম হরমোন নিঃসৃত হয়। এদের নানারকম কার্যকারিতার মধ্যে একটি হল চেহারা তৈরি করা। যেমন দেহের পেশী, লোম এবং অন্যান্য কিছু কিছু জিনিস তৈরি করতে সাহায্য করা। এরা আসলে স্টেরয়েড। যা শরীর নিজের থেকেই তৈরি করে। এই হরমোন গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে বৈজ্ঞানিকরা বানিয়েছেন। যা ব্যবহার করে মাংসপেশি তৈরি বা শরীরে পুরুষালিভাব তৈরি হয়। একে অ্যান্ড্রোজেন বা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড বলা হয়।' 

 

এর ব্যবহারে কী কাজ হয়? ডাঃ অঞ্জন অধিকারী বলেন, 'বাইরে থেকে এই স্টেরয়েড শরীরে প্রবেশ করালে শরীরে নাইট্রোজেন, সোডিয়াম পটাশিয়াম এবং সার্বিকভাবে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। মাংসপেশির মধ্যে প্রোটিন না ভেঙে জমতে থাকে।‌ যার জন্য পেশি বাড়তে থাকে। এককথায় এই স্টেরয়েড ব্যবহার করলে শরীর যা গ্রহণ করে সেই তুলনায় বিয়োজনের বিষয়টি অনেক কমে যায়।' উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দৌড়তে যান তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এই ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। সেটা সাময়িক শক্তি বাড়িয়ে তুলতে। 

 

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যবহার করলে কী হতে পারে? ডাঃ অঞ্জন অধিকারী জানিয়েছেন, 'অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ছাড়ার পরেই শরীরের ওপর তার প্রভাব পড়তে থাকে। এমনিতে আগের তুলনায় যেমন শরীর শুকাতে থাকে তেমনি শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে নানা ধরনের রোগ। আসলে স্টেরয়েড আপৎকালীন জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তার যথেচ্ছ ব্যবহার শরীর তো নিতে পারবে না।' কী ধরনের রোগ হতে পারে? তিনি বলেন, 'গোটা শরীরটাই হয়ে ওঠে রোগের একটা টার্গেট বা লক্ষ্য। যেমন হতে পারে আচমকা হার্ট অ্যাটাক, চামড়ায় গুরুতর সংক্রমণ, বাত, অ্যালার্জি বা বিভিন্ন ধরনের রোগ।' 

 

তাহলে চিকিৎসকরা কি এই স্টেরয়েড ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন? ডাঃ অঞ্জন অধিকারী বলেন, 'কোনও ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। স্টেরয়েড তো একেবারেই নয়। মনে রাখতে হবে সাময়িক আনন্দ কিন্তু বড়সড় বিপদের আগমন বার্তা বয়ে আনতে পারে।'