জয়ন্ত আচার্য, ঢাকা:‌ চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইট সোমবার সকাল ১১ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। চীনের স্থানীয় সময় সন্ধে ৬ টা নাগাদ হাসিনা বেজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অভ্যর্থনা জানানো হবে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে হাসিনার এই সফর। সফরকালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, অর্থনৈতিক ও ব্যাঙ্কিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ৬ষ্ঠ ও ৯ম বাংলাদেশ–চীন ফ্রেন্ডশিপ সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পিপল টু পিপল কানেক্টিভিটি খাত। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন।
 উল্লেখ্য, গত চার বছরে চীন থেকে বাংলাদেশ তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ সাত বিলিয়ন ডলার।
 বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল আহসান মাহমুদ আলী, বিদেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটো, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অন্যান্য সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা হাসিনার সফরসঙ্গী হয়েছেন। জানা গেছে, আগামী ৯ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একইদিনে প্রধানমন্ত্রী সাং–গ্রি–লা সার্কেলে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চীন শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চীন সফর করবে। ওইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ‘চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনজারটেটিভ কনফারেন্স’ (সিপিপিসিসি)–এর ১৪ তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুয়িংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। সেদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। 
১০ জুলাই তৃতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অফ দ্য পিপল–এ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাতের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী (প্রিমিয়ার অফ দ্য স্টেট কাউন্সিল) দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর দুই দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০ টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত হবে নৈশভোজ। ১০ জুলাই বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং–এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি জারি করবে।
 বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‌বাংলাদেশ–চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতারও আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক চীন সফরের মাধ্যমে। ওই সময় চীনের তৎকালীন নেতা মাও সে তুং এর সঙ্গে জাতির পিতার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি। চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে, যার ধারাবাহিকতায় দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান রয়েছে। ২০১৬ সালে শি জিনপিং–এর ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারত্বে’ উন্নীত হয়। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে চীনের পক্ষ থেকে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসাবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’‌