রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Sumit | ০৭ জুন ২০২৪ ১৬ : ০১Sumit Chakraborty
আজকাল ওয়েবডেস্ক : তৃণমূল কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এই প্রথম মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে বিজয়ী হয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের প্রার্থীরা। পরপর দু'বার জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের খলিলুর রহমান। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে খলিলুর রহমান দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপির মাফুজা খাতুনের থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন। তবে এবার তাঁর জয়ের মার্জিন বেশ কিছুটা কমেছে। দ্বিতীয় থাকা কংগ্রেস প্রার্থী মুর্তজা হোসেনের বকুলের থেকে তিনি প্রায় ১.১৬ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছেন। খলিলুলের মোট প্রাপ্ত ভোট ৫ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪২৭।
জঙ্গিপুর লোকসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে পাঁচটিতে তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান এগিয়ে থাকলেও জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী বিজেপির থেকে প্রায় ৩২৬৬ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। এই ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূলের অন্দরে নির্বাচনী ফলাফল কাঁটাছেড়ার পর বেরিয়ে এসেছে এক অদ্ভুত তথ্য।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য অশেষ ঘোষ অজগরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ নম্বর বুথের ভোটার। সেই বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ১০৪। অথচ ওই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছে ৮৬৭ ভোট, কংগ্রেসের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ১৯ ভোট। তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলা এসসি-এসটি সেলের সভাপতি কর্ণ মাঝি জামুয়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজের ১১১ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থীকে লিড দিতে পারেননি। ওই বুথে বিজেপির প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট ৭২৪। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছে মাত্র ১৩৮ ভোট।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্নেহাশীষ চ্যাটার্জি জঙ্গিপুর পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮৮ নম্বর বুথের ভোটার। ওই বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৪২০, তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৬৮ ভোট।
একইভাবে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মন্টু রহমান জরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজের বুথে তৃণমূল প্রার্থীকে লিড দিতে পারেননি। ৯৫ নম্বর বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৩৮০ অথচ কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৭১৮ ভোট। ওই বুথে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। বাকি তৃণমূল নেতাদের মত খলিলুর রহমানের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট তথা জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি বিকাশ নন্দ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের ১৮৬ নম্বর বুথে সাংসদ খলিলুর রহমানকে লিড দিতে পারেননি। ওই বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৬৩৫, তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৮১টি ভোট। বিকাশ নন্দের স্ত্রী তথা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বীথিকা নন্দও তৃণমূল প্রার্থীকে নিজের ওয়ার্ড থেকে লিড দিতে পারেনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর টাউন (পশ্চিম) সভাপতি অমরনাথ চ্যাটার্জী ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিজের ১৮৭ নম্বর বুথেও খলিলুর রহমানকে লিড দিতে পারেননি। ওই বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৪৬১ তৃণমূল মাত্র ৭৩ টি ভোট পেয়েছে।
তৃণমূলের খারাপ ফলাফল অব্যাহত রয়েছে জঙ্গিপুর টাউন (পূর্ব) অংশেও। সেখানে দলের সভাপতি ফিরোজ শেখ নিজের ১২৩ নম্বর বুথে তৃণমূলকে লিড দিতে পারেননি। ওই বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ২৯২। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৪৩২ ভোট। বিজেপি ওই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
জঙ্গিপুর টাউন (পশ্চিম) মহিলা তৃণমূল সভাপতি ঝুমকি সিংহও নিজের বুথে খলিলুর রহমানকে এগিয়ে দিতে পারেননি। ১৬৭ নম্বর বুথে যেখানে তিনি ভোটার ওই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছে ৫৯৭ ভোট। তৃণমূলের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৫২ ভোট।
জঙ্গিপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সন্তোষ চৌধুরীও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীকে এগিয়ে দিতে পারেননি। সেখানকার ১৬৪ এবং ১৬৫ দু'টি বুথেই তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে রয়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অন্যতম সদস্য প্রশান্ত সরকার জরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৫ নম্বর বুথে যেখানে তিনি ভোটার সেখানে তৃণমূল প্রার্থীকে লিড দিতে পারেননি। ওই বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৪৫৮ এবং তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১৮৫।
একইভাবে সুতি বিধানসভা এলাকায় খলিলুর রহমানের প্রতিনিধি তথা দলের অন্যতম সহ-সভাপতি সুভাষ লালাও আহিরণ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৫ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থীকে লিড দিতে পারেননি। ওই বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৩১১, তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ৯০।তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা নবগ্রামের বিধায়ক কানাই চন্দ্র মন্ডল বলেন,"দলের নেতা হলে তিনি বুথে লিড দিতে পারবেন এমন কোনও কথা নেই। হিন্দু ভোটার অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির পক্ষে লোকে ভোট দেওয়াতে এই ফলাফল হয়েছে। "