শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Kaushik Roy | ২৫ মে ২০২৪ ২০ : ৫৫Kaushik Roy
রিয়া পাত্র, বাঁকুড়া
বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, এক জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্র এবং দুটিই গেরুয়া শিবিরের দখলে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ভোট চিন্তার, দুই দলের জন্যই। একদিকে গেরুয়া শিবিরের গড় রক্ষার লড়াই, অন্যদিকে তৃণমূলের পুরনো জমিতে ফের ঘাসফুল ফোটানোর লড়াই। গত কয়েকমাসে জেলা স্তরের নেতা, ব্লক সভাপতি, অঞ্চলের নেতারা জমি প্রস্তুত করেছেন, ফুল ফোটানোর। এদিন ছিল তাঁদের পরীক্ষা। পরীক্ষা কেমন হল? সেই ফলাফল জানা যাবে ৪ তারিখ। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আবহেও এই দুই কেন্দ্রে ভোট হল শান্তিপূর্ণ, উৎসবের মেজাজে। নেতা থেকে প্রার্থী, ভোটকর্মী থেকে ভোটার, সকলের এক মত।
বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর। ভোটের সকাল থেকেই এই দুই জায়গায় যে চিত্র ফুটে উঠল, তাতে কোথাও কোনও ভয়, আতঙ্কের রেশ ছিল না। ভোর থেকে ভিড় ছিল শহরের বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে। মফস্বলের ভোটের সেই এক ছবি। ভোটের ভোরে দল বেঁধে বহু মানুষ ফিরে যান গ্রামে, নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জন্য। তাঁরা গেলেন, ভোট দিলেন, আবার বেলা গড়াতে ফিরেও এলেও। বিষ্ণুপুরের অযোধ্যা, রামসাগর, নাকাজুড়ি, চূড়ামণিপুর, রতনপুর কিম্বা বাঁকুড়ার ছাতনা, শালতোড়া, হিড়বাঁধ, তালড্যাংরা সব জায়গাতেই ভোট হল শান্তিপূর্ন, অবাধ। সেকথা বলছেন ভোটাররা এবং দলের নেতারাই। প্রত্যুষ পাল, কলকাতা থেকে এসেছিলেন ভোট দিতে। বললেন, 'চারদিকে এত ভয়ের বাতাবরণ, আমাদের এখানে কোনও অশান্তি নেই।' নন্দ রায়েরও এক মত। কলেজ পড়ুয়া চন্দ্রিমা পাত্রর এটাই প্রথম ভোট। 'অশান্তি আর ভয়ের ভোট কাকে বলে'? প্রশ্ন করছেন ভোট দিয়েই। অন্যদিকে ভোট করাতে গিয়ে অল্প বিস্তর হাঁকডাক হলেও, কোনও সমস্যা নেই দুই দলের কর্মীদের মধ্যেও। তৃণমূলের রিন্টু ঘোষ আর বিজেপির মোহন পাল, সকালের ছোলা মুড়ির পর্ব মিটিয়ে, ভোট পার করলেন তেঁতুল তলায় বসে। এখন আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাতের মাংস-ভাতের জন্য।
ভোট পর্ব জুড়ে কর্মী সমর্থকদের বিবাদ সেভাবে প্রকাশ্যে না এলেও, বিষ্ণুপুর লোকসভার দুই প্রার্থীর ব্যক্তিগত বিবাদ বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। সুজাতা মণ্ডল এবং সৌমিত্র খাঁর ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে আপাতত। দু' জনের মিল একটা কথাতেই, ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ন। সৌমিত্র খাঁ বলছেন, 'শান্তিপূর্ন ভোট হয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি এত বড় ভোটে।' প্রচার-ভোট মিটল সব। এবার কতটা চিন্তায় রেজাল্টের অপেক্ষা? সৌমিত্র বলছেন, ' জয়ের বিষয়ে আশাবাদী একশ শতাংশ। চিন্তার কোনও কারণ নেই। ব্লক থেকে জেলা, সকল স্তরের কর্মীরা অসাধারণ টিম ওয়ার্ক করেছেন।' প্রচারের মতোই ভোটের দিনও কেন্দ্রের একাধিক জায়গায় ঘুরলেন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। ভোট মিটতেই জানালেন, ' গণতন্ত্রের সর্ববৃহৎ উৎসব আমার কেন্দ্রে মিটল শান্তিপূর্ন ভাবে। মারপিট-রক্তঝরার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে।' ভোট মিটতেই কি টেনশন শুরু? সুজাতা বলছেন, 'একটু ফাঁকা লাগবে। এতদিন টানা প্রচার করেছি। তবে আমাকে সবসময় সাধারণ মানুষের মধ্যেই পাবেন। আজও সারাদিন ঘুরেছি নানা জায়গায়। ৪ তারিখের আগেও আমাকে বিষ্ণুপুরের কোনও না কোনও জায়গাতেই পাবেন।'
অন্যদিকে, বাঁকুড়ায় এবার কড়া টক্কর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, বিদায়ী সাংসদ সুভাষ সরকারের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অরূপ চক্রবর্তীর। ভোট মিটিয়ে অরূপ চক্রবর্তী জানালেন, 'কিছু জায়গায় মেশিনে সমস্যা হয়েছিল। তবে শান্তিপূর্ন, অবাধ ভোট হয়েছে। মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন মন খুলে। আমি কৃতজ্ঞ।' প্রায় ২ মাসের প্রচার শেষে পরীক্ষা হয়ে গেল। ফলপ্রকাশের আগে কি চিন্তার ভাঁজ কপালে? বর্ষীয়ান নেতা বলছেন, 'আমি রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। কাজের আর ব্যস্ততার মাঝেই কেটে যাবে মাঝের কয়েকটা দিন।' বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী ভোটের দিনেও শালতোড়ায় জনতার রোষে পড়লেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়েও পড়েন। ভোট শেষে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও, বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রী শেখর দানা জানালেন, 'দিনের শুরুতে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হলেও, দিনভর ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ন। ভোটের আগের রাতে গঙ্গাজলঘাটিতে অশান্তি হয়েছিল অল্প। বাঁকুড়ায় ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা আশাবাদী, ৭ বিধানসভায় এগিয়ে থাকব আমরা।' অর্থাৎ লড়াই, ভোটের ফ্যাক্টর, খেলা ঘোরানোর নক্সা যাই থাক না কেন, প্রায় দু' হাজার বুথে, ১৭৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পুলিশের উপস্থিতিতে, রাঢ়ের রুক্ষ জেলায় ভোট মিটল অবাধে।