জীবনে যখন হাসি নেই, তখন প্রৌঢ়া শ্রীতমা সেন কৃত্রিম হাসির ক্লাস করতে রোজ সকালে পৌঁছে যায় লাফিং ক্লাবে। বাড়িতে তার ছেলে, বউমা, নাতনি। মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে। এমন ভরা সংসারেও বড়ই নিঃসঙ্গ স্বামীহীন শ্রীতমা। গম্ভীর মানুষ। লাফিং ক্লাবে যায়, কিন্তু মুখে তার হাসি নেই। সেই হাসিটা যেন ফিরিয়ে আনতে চায় আর এক প্রৌঢ়— প্রবীণ শর্মা (‌শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)‌। পাঞ্জাবি পরিবারে ভাইপোদের মানুষ করার দিকেই সব সময় নজর ছিল প্রবীণের। তাই বিয়ে করার ফুরসত হয়নি। এই অবেলায়, হাসির ক্লাবে হাসিহীন শ্রীতমাকে দেখে প্রেমে পড়ে যায় প্রবীণ। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিত্যদার (‌খরাজ মুখোপাধ্যায়)‌ রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে ভাঁড়ে চা খাওয়াতে শ্রীতমাকে নিয়ে আসে প্রবীণ। লাফিং ক্লাবের পরে এটাই তাদের রুটিন। একদিকে প্রবল উৎসাহী প্রবীণ, অন্যদিকে সংসারের জাঁতাকলে আটকে থাকা বিষণ্ণ শ্রীতমা। এবং প্রেমটা হয়। প্রবীণ বিয়ের প্রস্তাবটাও পেড়ে ফেলে। ফলে, বিস্ফোরণ ঘটে শ্রীতমার বাড়িতে।

এহেন এক কঠিন পরিস্থিতিকে সহজ ও গভীরভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন মানসী সিনহা। অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর নিজের পরিচয় যথেষ্ট। কিন্তু প্রথম ছবিতেই পরিচালক হিসেবে মানসী দেখালেন, বড়পর্দায় গল্প বলতে তিনি জানেন। এবং কোনও আঁতলামো নয়, এমনকী তথাকথিত কোনও ফর্মুলা অনুসরণ করাও নয়। অন্যরকম এক গল্প নিয়ে নতুন পথেই এগিয়েছেন মানসী এবং প্রথম ছবিতেই অনেকখানি সশেষ পর্যন্ত শ্রীতমা ও প্রবীণের বিয়েটা কেমন হবে, তার জন্য দর্শকদের আগ্রহকে ধরে রেখেছে এই ছবি।

দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন।এবং অভিনয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অসাধারণ। এবং অপরাজিতা আঢ্য অতুলনীয়। অপরাজিতার ট্রেডমার্ক তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত হাসির কোনও চিহ্ন এ ছবিতে নেই। অতি আবেগের কোনও কান্নাও দেখা যায় না তাঁর অভিনয়ে। বিষণ্ণ ব্যক্তিত্বের এক মায়া ছড়িয়ে পড়ে অপরাজিতার অভিনয়ে। পাশাপাশি খরাজ মুখোপাধ্যায়, সোহাগ সেন, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবদূত ঘোষ উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছেন। ভাল লাগে আর্য দাশগুপ্তকেও। অনির্বাণ মাইতির সম্পাদনা গতি দিয়েছে ছবিকে।

এক বিকেলে শ্রীতমাকে গঙ্গারঘাটে চা খেতে ডাকে প্রবীণ। অবসরপ্রাপ্ত শ্রীতমা কেমন করে বেরবে বিকেলে? ছেলে, বউমার পারমিশন নেওয়া হয়নি তো!‌ ফোনে প্রবীণ বলে ওঠে, বাড়িটা কি জেলখানা নাকি, জামিন না পেলে বেরতে পারবে না? এ ছবির মোক্ষম কথাটা এভাবেই বলে দেয় প্রবীণ। এটাই এ ছবির ধ্রুব সংলাপ। সেই সংসার নামক জেলখানার গরাদ ভাঙার গল্পই বলতে চেয়েছেন মানসী। একটা মুক্তির আলোবাতাস বয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। তাই এ গল্প ‘‌আমার’‌ নয়, হয়ে ওঠে ‘‌আমাদের গল্প"।