আবির রায়,দুর্গাপুর: স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড নিয়ে গিয়েও কোনও হাসপাতালে রোগী ভর্তি না নিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রয়োজনে থানায় অভিযোগ, জেলাশাসক এবং বিডিও–কে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে সেই সব হাসপাতালের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলেছেন, ‘এমনিতেই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কোটা আছে গরিবদের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তারা দিচ্ছে না। সরকার থেকে বারোশো কোটি টাকা বিমার জন্য দিচ্ছি। টাকা দেওয়ার পর রোগী ফিরিয়ে দিলে তা মানা যাবে না। আমরা কিন্তু মানবিক। সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড দিয়েছি। স্বাস্থ্যসাথীর রোগীকে যেন কেউ ফিরিয়ে না দেয়। এই জেলায় ৩৫টি হাসপাতাল আছে। ইতিমধ্যে ৩০০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। রোগী ফেরত এলে জরিমানা নেওয়া হবে।’ স্বাস্থ্য সচেতনতায় ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগানোর কথাও বলেছেন তিনি। অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরের অগ্রগতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিমানবন্দর অনেক বড় মাপের হবে। এখানে বিমান চলাচলে আমরা করমুক্ত জ্বালানি দিই। রাতের দিকে যদি বিমান চালানো যায়, তা হলে ভাল হবে। অন্ডাল থেকে দমদম পর্যন্ত যাতে হেলিকপ্টার চালু করা যায়, তার চিন্তাভাবনা চলছে। এই বিমানবন্দরের সঙ্গে স্পিড বাস চালু করে ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম জেলাকে যুক্ত করা হবে। বিভিন্ন জেলা শহরকে সংযুক্ত করা হবে এই বিমানবন্দরের সঙ্গে।’ রেল মন্ত্রকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে তো দুরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা উচিত। কিন্তু ওরা করবে না, সুতরাং আমাদেরই অন্ডাল থেকে জেলা শহরে সংযুক্তিকরণ করতে হবে।’
পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে পুকুর এবং জলাধার খননের কাজ করতে হবে। আসানসোলকে বাঁচাতে হবে পানীয় জলের অভাব থেকে। বারাবনিকেও বাঁচাতে হবে। চারিদিকে কয়লাখনি রয়েছে কিন্তু ইসিএল গাছ লাগায় না। কাঁকসা ব্লককে এবার সহযোগিতা করতে হবে সরকারি পরিষেবা পাওয়ার জন্য। কাঁকসায় সরকারি জমি অথবা বাড়িতে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের একটি সাব অফিস গড়ে তোলা হবে। এলাকার গরিব এবং আদিবাসী মানুষ সেখান থেকে সরকারি সাহায্য এবং বিভিন্ন পরিষেবা পাবে। আদিবাসী পরিবারগুলি যেন পেনশন পায়, তা দেখতে হবে। এলাকায় ভাল করে সমীক্ষা করতে হবে। ৬০ বছর বয়স হলেই বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন তাঁরা।’ তিনি সাবধান করে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে অনেকে ব্যাঙ্ক আর পোস্ট অফিসের নাম করে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তথ্যসংগ্রহ করছে। এটা হতে দেবেন না। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এভাবে তথ্যসংগ্রহ করছে। সেদিকে নজর রাখুন। পুর কর্তৃপক্ষকে বলছি, নো এনআরসি, নো ক্যা, নো এনপিআর। এসব হবে না। নজর রাখবেন। আমরা কোনও ধর্মান্তকরণ করতে দেব না। পুলিশ দরকার হলে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট করবে এলাকায় রূপসী প্রকল্পের সহায়তায়। মালদাতে আদিবাসী ধর্মান্তকরণের চেষ্টা হচ্ছিল, বাধা পেয়েছে। দেখছি দিল্লিতে গুলি চালিয়ে দিচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে দেখছি মেয়েকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, মাকে গুলি করছে, আবার বাবাকে মেরে দিচ্ছে। অভিযোগ নথিভুক্ত হচ্ছে না থানায়। কিন্তু বাংলায় এরকম হয় না। প্রতিটি অভিযোগ এখানে জমা নেওয়া হয়। ভুল হতে পারে। পুলিশ পরে তদন্ত করে দেখবে। পুলিশ কেস ডায়েরি তৈরি করতে না পারায় অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। তাই কেস ডায়েরি যাঁরা লেখেন, তাঁদেরকে আইনটা ভাল করে জানতে হবে।’
শিল্পাঞ্চলের কলকারখানার ট্রেড ইউনিয়নের দেখাশোনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন সভায় মেয়র পারিষদ প্রভাত চ্যাটার্জিকে তিরস্কার করেন। ধমক দিয়ে বলেন, ‘আপনি ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিকের বিষয় দেখবেন না। কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিল্পের অগ্রগতির জন্য ইতিমধ্যেই পানাগড় শিল্পতালুকে ৭৮১ একর জমি দেওয়া হয়ে গেছে। গোটা রাজ্যে ১০০ ক্ষুদ্র শিল্প পার্ক তৈরি করা হবে এবার। এখানকার কাঁকসা ব্লকেও পার্ক হবে, সেখানে ক্লাস্টার করা হবে। মাদুর, মোড়া শিল্প হবে।’ সাংবাদিকরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান ক্লাব ভবনের জমি রেজিস্ট্রেশনের অর্থ মুকুবের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী তার উত্তরে বলেন, ‘আমার বইয়ের রয়্যালটির টাকা থেকেই তোমাদের প্রেস ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেওয়া হবে।’ আর সাংবাদিকদের বাসস্থানের জন্য এডিডি–এর চেয়ারম্যান তাপস ব্যানার্জিকে তিনি বলেন, এক একর জমি দিতে। সমবায়ের মাধ্যমে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে সেই জমিতে।
দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। ছবি: আজকাল
Aajkaal © 2017