আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারা রাজ্য যখন আনন্দে মশগুল।
বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবে যখন মাতোয়ারা গোটা রাজ্য,তখন এরাজ্যেরই এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর কাছে দুর্গাপুজো হল শোকের সময়। ঝাড়খন্ড লাগোয়া পুরুলিয়া,পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জলপাইগুড়ির চা-বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাঁদের বাস। এরা
‘অসুর’ জনজাতি। ২০১১’র জনগননা অনুযায়ী, গোটা দেশে এইমুহুর্তে প্রায় চার হাজার অসুর জনজাতির মানুষের বাস। আলিপুরদুয়ারের একটি গ্রামের নামই ‘অসুর পাড়া’। দুর্গাপুজোর পাঁচদিন থেকে এরা শোক পালন করেন। বহু জায়গায় এরা ‘মহিষাসুর’ বা ‘হুদুরদুর্গা’র পুজোও করেন। অসুর জনজাতির লৌকিক জনশ্রুতি অনুযায়ী,অসুররা এই দেশের প্রাচীন জনজাতি। তাদের নেতার নাম ছিল ‘হুদুর দুর্গা’ বা ‘মহিষাসুর’। দুর্গা সাঁওতালি ভাষায় পুংলিঙ্গ। সাঁওতালি লোকসাহিত্য অনুযায়ী, তাঁদের রাজা দুর্গার কন্ঠস্বর ছিল বজ্রের মতো। ঝড়ের মতো ছিল তার গতি। সাঁওতালি ভাষায় ‘হুদুর’ কথার অর্থ প্রচন্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস বা ঝড়! আর্য সেনাপতি ইন্দ্র পরপর সাতবার হুদুর দুর্গাকে আক্রমণ করেও পরাজিত হন। অবশেষে ছলনা ও কৌশলের আশ্রয় নেন ইন্দ্র। তিনি বারাঙ্গনা দেবীকে হুদুরদুর্গার কাছে পাঠান। প্রথমে হুদুরদুর্গা দেবীকে প্রত্যাখান করলেও,পরে বিয়ে করেন।এবং বিবাহের নবমদিনে সস্ত্রহীন হুদুরদুর্গাকে হত্যা করেন ‘দেবী’। ‘হুদুরদুর্গা’কে হত্যা করার ফলে সেই নারীর নাম হয় ‘দেবীদুর্গা’। এসবই লোককথা। অসুর জনজাতির মানুষেরা এই লোককথাকে বিশ্বাস করেই শতকের পর শতক পুজোর চারদিন শোক পালন করে চলেছেন। এই শোক পালনেরই অঙ্গ ‘দাসাই’ নাচ। পুরুষেরা নারীর বেশে,শাড়ি পরে, মাথায় ময়ূরের পুচ্ছ লাগিয়ে বুক চাপড়ে ‘ও-হায়রে-ও-হায়রে’ আওয়াজ করে ‘ভুয়াং’ নাচের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে দুঃখের গান গেয়ে খুঁজে বেড়ান তাদের মহিষাসুর বা হুদুরদুর্গাকে। এমনকি দশমীর দিনে দেবীর ত্রিশূলের আঘাতে মহিষাসুরের শরীরের যে যে অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছিল, যেমন- নাভি,কান, নাক প্রভৃতি অঙ্গে তেল লাগান এই উপজাতির মানুষেরা। ঢাকের আওয়াজ কানে গেলে এখনো কানে আঙুল দেন অসুর জনজাতির প্রবীনেরা। গত ২০১১ থেকে পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার অন্তর্গত সোনাইজুড়ি গ্রামে ভূমিপুত্র আদিবাসীদের প্রতিষ্ঠান ‘দিশম খেরওয়াল বীর কালচারাল কমিটি’ হুদুরদুর্গা (মহিষাসুর) স্মরণ দিবস বা মহিষাসুরের পুজো শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই পুজো ছড়িয়ে পরছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী, উত্তরপবঙ্গের জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার চা-বাগান থেকে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। মূলবাসী ভূমিপুত্র এক নেতার কথায়,এই মুহুর্তে রাজ্যে প্রায় দেড়শো এলাকায় হুদুরদুর্গার পুজো হয়। ভারতের এই প্রাচীন জনজাতির লৌকিকগাঁথাকে সমর্থন জানিয়েছিল দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ। জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে লিফলেটও ছাপানো হয়। যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভারতের সাংসদ ভবন! কিন্তু সেসব জটিল বিষয়ে মন নেই, অসীম অসুর-বর্গী অসুরদের মতো ‘অসুর’ জনজাতির লোকেদের। তারা মহা ধুমধাম করে মেতেছেন, তাদের অসুর বাবার পুজোতে। যদিও আদিবাসী সমাজের অনেকেই এই মূর্তি বানিয়ে পুজো করার বিরোধী। তাঁদের মতে,আদিবাসীরা বরাবরই প্রকৃতি পুজো করে এসেছে।মূর্তি পুজো আমাদের সংস্কৃতি নয়। বরং দাসাই নাচের মাধ্যমে হুদুর দুর্গাকে খোঁজাটাই আমাদের রীতি। পুজোর পাঁচ দিন তাই দাসাইয়ের গানে এদেশের আদিবাসী ভূমিপুত্ররা বুক চাপড়াতে চাপড়াতে কান্নার সুরে খুঁজে চলেন ওদের 'রাজা' মহিষাসুরকে।দুর্গাপুজোর আনন্দ-উৎসবে যোগ দেয়না ওরা। আমাদের পূর্বপুরুষ মহিষাসুরকে হত্যা করার উৎসবে আমরা কেন যোগ দেব? ঝাঁঝিয়ে ওঠে যুবক বীরেন অসুর। ইতিহাসবিদ বা পুরানবিদরা হয়তো পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি দেবেন। কিন্তু প্রাচীন লোকগাঁথা বোধহয় এভাবেই থেকে বহু জনজাতির ডিএনএতে,শতাব্দীর পর শতাব্দী।
Sudipta Sen: ‘টাকা নিয়েছেন’, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এবার ‘ব্ল্যাকমেলের’ অভিযোগ আনলেন সুদীপ্ত সেন
Roddur Roy: কী কাণ্ড! কলকাতার পুজোয় এবার মহিষাসুরের জায়গায় রোদ্দুর রায়, মূর্তি গড়ার প্রস্তুতিও শুরু!
Patient Stuck in Carnish: হাসপাতালের কার্নিশ থেকে হাত ফসকে পড়ে গেলেন মানসিক রোগী! চাঞ্চল্য মল্লিকবাজারে
Jagdeep Dhankhar: ‘বাংলায় মাথা নিচু করে বাস করছেন’! দাবি রাজ্যপালের, পাল্টা দিল তৃণমূল