আজকালের প্রতিবেদন: আধুনিক টেনিসের সবথেকে চর্চিত, উপভোগ্য, সেলিব্রেটেড যুদ্ধ আবার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এটাই টেনিস বিশ্বের কাছে এই মুহূর্তে সবথেকে বড় সুখবর।
প্রায় দুই বছর টেনিস কোর্টে পরস্পরের মুখ না দেখা রজার ফেডেরার আর রাফায়েল নাদাল গত পাঁচ সপ্তাহে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হতে চলেছেন। এই দ্বিতীয় সাক্ষাৎটা হতে চলেছে আজ উইম্বলডনের সেমিফাইনালে। অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্ট শেষবার এই দ্বৈরথ দেখেছিল ২০০৮ সালের ফাইনালে। যে ম্যাচ আপামর টেনিসপ্রেমীর কাছে সর্বকালের সেরা চার বা পাঁচ ম্যাচের তালিকায় অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবে। যে ম্যাচ নিয়ে বই লেখা বা তথ্যচিত্র বানানোর জন্য লেখক, প্রযোজকদের হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে, ভবিষ্যতেও যাবে।
প্রায়ান্ধকার আবহে নাদাল সেবার পাঁচ সেটের রূপকথার নায়ক হয়েছিলেন। সেন্টার কোর্টে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটা ঠিকমতো দেখার জন্য ফ্ল্যাশ বাল্বের দরকার পড়েছিল। পুরুষদের টেনিসে মশাল হস্তান্তরের ম্যাচ হিসেবে দেখা হয়েছিল সেই ম্যাচ। ভাবা হয়েছিল, দীর্ঘদিন টেনিস বিশ্ব শাসন করা তৎকালীন ২৬ বছরের রজারের সেটাই বুঝি ২২ বছরের অপ্রতিরোধ্য রাফাকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করার সন্ধিক্ষণ।
কিন্তু ১১ বছর পর আজ জলের মতো পরিষ্কার যে, সেই ভাবনা ভুল ছিল। বাস্তবটা বরং অনেক বেশি সমৃদ্ধ, আরও বেশি উপভোগ্য। ৩৭ বছরের ফেডেরার আর ৩৩ বছরের নাদাল এই ১১ বছরে পরস্পরকে শুধুই আরও শক্তিশালী, আরও দর্শনীয় করেছেন। শ্রেষ্ঠত্বের কাছাকাছি পৌঁছতে পরস্পরকে আরও সাহায্য করেছেন। সত্যি কথা বলতে কী, ভাবনায় ভুল ছিল এই দুই মহারথীরও। হলফ করে বলা যেতে পারে, সেদিন তাঁরা নিজেরাও ভাবেননি, তাঁদের টেনিস জীবন অন্তত আরও ১১টা বছর দীর্ঘায়িত হবে।
এই ১১ বছরে দুজনে অনেক খেতাব জিতেছেন, অনেক বিত্তশালী হয়েছেন। দুজনের জীবনেই এসেছে উত্থান, পতন। নোভাক জকোভিচ নামক আরেক উল্কার আবির্ভাবে দুজনকেই খেলায় অনেক রদবদল করতে হয়েছে। এরপর অ্যান্ডি মারের আগমনে টেনিসে ‘বিগ ফোর’ কথাটা শোনা গেছে। হালে ফেডেরারের দেশের স্ট্যানিসলাস ওয়াওরিঙ্কাকেও একই ঘরানায় ফেলে দিয়ে কেউ কেউ সেটাকে ‘বিগ ফাইভ’–এ নিয়ে গেছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের টেনিস বিশ্ব আবার ব্যাক টু দ্য ‘বিগ থ্রি’।
ম্যাচের আগে ফেডেরারও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘শুধু আমি নয়, মনে হয় রাফা আর নোভাকও নিশ্চই ভাবেনি আমরা এত বছর পরেও একইরকম দৃঢ় থাকব। আমাদের তিনজনেরই সেই আগের দাপট থাকবে।’ হয়ত সেই কারণের ১১ বছর পরেও এই ম্যাচের আগে ফেডেরার বলতে পারছেন, ‘কঠিন ম্যাচ হবে। রাফা যেকোনও দিন যেকোনও কোর্টে যেকোনও কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। ও এতটাই ভাল প্লেয়ার। ওকে তো আর এখন শুধু ক্লে–কোর্ট স্পেশালিস্ট বলা যাবে না।’
জকোভিচের সামনে আজ স্পেনের রবার্তো বাউতিস্তা অগাট। ফাইনালে যাঁরাই উঠুন, এসডব্লু ১৯–এর সেন্টার কোর্টে লড়াই শুরু হওয়ার আগেই প্রমাণিত হয়ে গেছে রজা–রাফার দ্বৈরথের আকর্ষণ, রোমাঞ্চ অবিনশ্বর, অতুলনীয়। হোক না আরও একটা পৌনে পাঁচ ঘণ্টার নাটক। হোক না আবার সেই লড়াই, যা শেষ হোক মন চায় না। এবার তো আর লন্ডনের পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়লেও ভয় নেই। সেন্টার কোর্ট যে আজ ১১ বছর পূর্ণ করে আপন আলো জ্বেলেছে। সত্যিই ১১ বছরে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের অনেক কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু বদলায়নি এই দ্বৈরথ দেখার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকা। বদলাননি রজার ফেডেরার। বদলাননি রাফায়েল নাদাল।