সম্রাট মুখোপাধ্যায়: ● এক লেড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা। পরিচলনা: শেলি চোপড়া ধর। অভিনয়ে: অনিল কাপুর, জুহি চাওলা, রাজকুমার রাও, সোনম কাপুর, রেজিনা, বিজেন্দ্র কালা, সীমা পাওহা, মধু মালতি কাপুর।
ভালোবাসা কতদূর প্রান্তিক? এমনতর এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বোধহয় বানানো শেলি চোপড়া ধরের ‘এক লেড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা।’
মেগাহিট গানের কলি। সুপারহিট সিনেমা থেকে নেওয়া সে গান ওই ছবিতে পুনরব্যবহৃতও। কিন্তু ওই গানের স্মৃতিটুকুই আছে। এই ছবির মেজাজ, গল্প, লক্ষ্য সবই আলাদা।
আর সেটা ওই প্রশ্নটুকু। যে, ভালোবাসা কতদূর প্রান্তিক?
সন্দেহ নেই ছবি জুড়ে মূল ধারার জনপ্রিয় মোড়কগুলোকে একের পর এক ব্যবহার করেছেন শেলি। গান তো বটেই, স্টার কাস্ট, অনিল কাপুর–জুহি চাওলা–সোনম কাপুর– রাজকুমার রাও খচিত লাইন–আপ, ইয়ুথ–রোমান্সের ঝকঝকে পালিশ, লোকেশান, গ্ল্যামার–খচিত সিকোয়েন্সের পর সিকোয়েন্স। সবটাই আছে যেন বক্স–অফিস বাণিজ্যের অছিলায়। কিন্তু ছবির গল্পে এমন একটি বিধ্বংসী ‘অ্যাঙ্গেল’ সাজিয়ে রাখা আছে, যা শেষমেশ ধ্বংস করে দেবে এই সব সাজানো ছককে। বোঝা যায় নিছক আর একটি ‘বয় মিটস্ গার্ল’ গল্প শোনানোর জন্য শেলি আর বিধু বিনোদ ওই ছবি বানাননি। বরং সেই ছককে বাতিল করতেই ওই ছবি বানানো। এই ছবি ‘গার্ল মিটস্ গার্ল’–এর। ছবির শুরুতেই এই ঝাঁকুনিটি আনেননি শেলি। আস্তিনের এই তাসটি তিনি বার করেছেন ছবির দ্বিতীয়ার্ধে। তখন বোঝা গেছে প্রথমার্ধকে কেন তিনি মামুলি কমেডির মতো ব্যবহার করেছেন।
অবশ্য, সেখানেও যে প্রেমের প্রস্তাবনাটি তিনি করেছেন তার ভেতরেও একটা সামাজিক রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রস্তাবনা ছিল। হঠাৎই, খানিকটা নাটকীয়ভাবেই এক থিয়েটারের মহলায় দেখা হয়ে যায় বহিরাগত সুইটি চৌধুরীর (সোনম কাপুর) সঙ্গে নাট্যকার সাহিল মির্জার (রাজকুমার রাও)। কিছুক্ষণ পরে এক মেট্রো স্টেশনে আবার নাটকীয়ভাবে বিচ্ছেদও হয়ে যায় দু’–জনের। কিন্তু ঐটুকুর ভেতরেই ‘এক লড়কি কো দেখা তো‘ গানের সুর বেজে উঠে দর্শককে বুঝিয়ে দেয় সাহিল প্রেমে পড়ে গেছে সুইটি। নানাবিধ কায়দা–কানুন করে সে জানতে পারে সুইটির আদত ঠিকানা পাঞ্জাবের এই এক জেলা শহর। অতএব দিল্লি টু পাঞ্জাব পাড়ি জমায় সাহিল। তার সঙ্গী হয় নাটকের দলের এক ব্যর্থ ও যশোপ্রার্থিনী অভিনেত্রী সঙ্গে (জুহি চাওলা)। অভিনয়ে ব্যর্থ হলেও রান্নায় যে অমোঘ।
এই রান্নার ব্যাপারটা চিত্রনাট্যে বেশ বড় একটা উপাদান হিসাবে এসেছে। কারণ, সুইটির বাবা বলবীর চৌধুরি (অনিল কাপুর) একজন সফল ও বড়সড় পোশাক ব্যবসায়ি হলেও, ভেতরে ভেতরে দুঃখী, কারণ তাঁর ইচ্ছা ছিল বড় কোনও হোটেলের শেফ হওয়ার। বোঝাই যাচ্ছে, একে একে দুইয়ের মতো সহজ অঙ্কে বলবীর আর সত্তোর এক জুটি তৈরি হয় এই রান্না বিষয়ক সহমমীতা থেকে। তবে এটা ঠিক এই ‘কুকারি–কমেডি’টা ছবিতে যতটা দানা বাঁধতে পারত, তা পারেনি, ছবির ফোকাস অন্যদিকে চলে যাওয়ায়। বরং ছবিতে যেসব জায়গায় বাড়ির দুই চাকর–চাকরানীর বাজি ধরা নিয়ে ঝগড়ার অংশগুলো এসেছে দর্শক হেসে গড়িয়ে পড়েছে। দুই দক্ষ অভিনেতাকে এমন দুই পার্শ্ব–চরিত্রে নেওয়া হয়েছে তা বোঝা গেছে। আবার বলবীর–সত্তোর চরিত্র দুটোও কোথাও কোথাও বড্ড ‘স্কেচি’ হলেও অনিল কাপুর আর জুহি চাওলা তাঁদের জুটির পুরোনো বোঝাপড়া আর কমেডি টাইমিং–এ দু’জনের দক্ষতা দিয়েই উতরে দিয়েছেন।
এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে পাঞ্জাব এসে, সুইটির বাড়ি পৌঁছেও সাহিল জানতে পারে সুইটির প্রেম তার এক বান্ধবী কুহুর (রেজিনা) প্রতি। আশৈশব সুইটি লেসবিয়ান। সম্পর্ক নিয়ে ‘ট্যাবু’ আর তার ভন্ডামিগুলোর গালে ওই ভাবেই থাপ্পড় মেরেছে এছবি। রাজকুমার রাও আরেকবার প্রমাণ করেছেন কেন তিনি এই মুহূর্তে হিন্দি ছবির অন্যতম শীর্ষ অভিনেতা। সোনম কাপুরও উজ্জ্বল। তবে কোথাও কোথাও যেন একটু অভিব্যক্তিতে ‘প্রেডিক্টেবল।’