বিদিশা রায়: কলকাতার জন্য সব সময় মন কেমন করে।
গত কদিনে সেটা আরো বেড়ে গেছে কারণ সোশ্যাল মিডিয়া-এ অনেক বন্ধু কলকাতার নীল আকাশের ছবি পোস্ট করছে। মন তো সর্বদা উড়ু উড়ু, শুধু উড়ে যাওয়ার উপায় নেই, এই যা। তবুও সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা ঝকঝকে দিন আর তকতকে আকাশ দেখলে মন খারাপটা একটু সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু আটলান্টিকের পারে আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে আপাতত সেটি হওয়ার জো নেই। বিগত কয়েক বছরে এখানকার আবহাওয়া এক্কেবারে রাজনীতিকদের মতোই পাল্টি খাচ্ছে।
হাতে আছে তো মাত্র চারখানা ঋতু। উইন্টার, স্প্রিং, সামার আর ফল। শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম আর পাতা ঝরার দিন। যদি ছটা ঋতুর হিসেবে মেলাতে চাও তবে বর্ষা আর শরৎকে এদিক ওদিক গুঁজে দাও। তা শিকাগোয় আসার পর এরকম গোঁজামিল দিয়ে দিব্বি চলছিল। শীতের কথা না বলাই ভালো। বসন্তের তো ক্ষণস্থায়ী হওয়ারই কথা, তার মধ্যে দিয়েই শরৎ একটু উঁকিঝুঁকি মেরে যায়। গ্রীষ্ম বড় মনোরম। ঘাম ঝরায় না, চাঁদি ফাটায় না। আর পাতা ঝরার দিনের শেষে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামে। নাই বা হলো বর্ষা, খিচুড়ি খেতে বাধা নেই। তারপর সেই বৃষ্টির জল যেদিন প্রথম বরফকুচি হয়ে নামে সেদিন আবার লেপ-কম্বল নামানোর পালা।
আমাদের স্কুল কলেজ জীবনে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর নিয়ে একটা ঠাট্টা খুব চালু ছিল - তা হলো আলিপুর যে পূর্বাভাস দেবে, হবে ঠিক তার উল্টো অর্থাৎ যদি বলে আজ বৃষ্টি হবে, তাহলে ধরে নাও ছিটেফোঁটাও ভাগ্যে নেই। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তর যাই বলুক না কেন, বাঙালিকে ছত্রপতি হওয়া থেকে কে আবার কবে আটকাতে পেরেছে? ব্যাগে টাকাপয়সা থাক না থাক, এক পিস্ ছাতা তো থাকতেই হবে। সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটাতে হলো শিকাগোয় এসে। গরমকালে দিব্বি কলকাতা স্টাইলে ছাতা মাথায় গটগট করে হাঁটছি, দেখি লোকজন কেমন করে যেন দেখছে। তারপর আবিষ্কার করলাম এখানে, রোদ্দুর থেকে বাঁচতে কেউ ছাতা ব্যবহার করে না। ওটা শুধু বৃষ্টির জন্য। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে স্মার্ট ফোনে পূর্বাভাস না দেখে বেরোনো ঘোর লজ্জার ব্যাপার। যদি দ্যাখো কারুর বগল থেকে ছাতার বাঁট উঁকি মারছে তার মানে আজ নির্ভয়ে খিচুড়ি চাপিয়ে দাও।
নিউ ইয়র্কে আসার পর এই সব হিসেবনিকেশ তালগোল পাকিয়ে পুরোপুরি খিচুড়ি হয়ে গেছে। ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে সেভাবে বরফ পড়লোই না, যেদিন সরকারি ভাবে বসন্ত এলো সঙ্গে এমন বরফ আনল যে কহতব্য নয়। গরমকালে সকালে নীল আকাশ দেখতে পাওয়া বিরল সৌভাগ্য। মেঘলা আকাশ, ফাটানো গরম, প্যাচপেচে ঘাম, যখন তখন বৃষ্টি, আবার হঠাৎ করে এমন ঠান্ডা যে জ্যাকেট চাপাতে হচ্ছে। স্মার্ট ফোনও ফেল মেরে যাচ্ছে হিসেব মেলাতে। আমি অবশ্য খুশি বাবা, মানে ব্যাগের ছাতা আবার ব্যাগে ফেরত এসেছে কিনা।