ডা. মৃণাল মুখার্জি, প্রীতম কংসবণিক: আদি-জনজাতির মানুষেরা আধুনিক শিল্পসভ্যতার বিকাশের শুরু থেকে আজ অবধি বিবিধ কারণে তাদের বাসভূমি থেকে উৎখাত হয়েছে।
তথাকথিত উন্নয়নের প্রাথমিক খেসারত দিতে হয়েছে কেবল এই জনজাতির মানুষকেই। আদিম জনজাতির জীবন, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ধ্বংসের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে আমাদের সভ্যতা। একমুখী উন্নয়নের জয়যাত্রায় এগিয়ে চলেছে মানুষ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উন্নয়নের অভিযানের পেছনে এক সুসংগঠিত প্রয়াসে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ও কর্পোরেট পুঁজির যুগলবন্দি। সত্যিই কি এই উন্নয়নের জয়যাত্রা সব মানুষের জন্য? উন্নয়নের এই রোলমডেল কি বেশিরভাগ মানুষের জীবনের সমস্যার সুরাহা করছে? নাকি কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থসিদ্ধি করছে?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে জন-জাতির সংখ্যা প্রায় ৩৭ কোটি। যারা অন্তত কয়েক হাজার জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই জনজাতি হল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪-৫ শতাংশ। এই মানুষেরাই পৃথিবীর ভূভাগের এক-চতুর্থাংশ রক্ষা করে। আগলে রাখে ১১ শতাংশ বনভূমি, ৮০ শতাংশ জীব–বৈচিত্র্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৮৫ শতাংশ। আজ উন্নয়ন, জলবায়ুর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ফলে তারাই বিপন্ন বাস্তুহারা হচ্ছে।
ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যনেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ তাদের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যে পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ ভূভাগ এবং সমুদ্রের ৬৬ শতাংশ মানুষের আগ্রাসনে বিপন্ন। ১০ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তি মুখে দাঁড়িয়ে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের দি ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট-২০২০–র আশঙ্কা, ২০৫০ সালের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হবেন। আফ্রিকা, মেক্সিকো, চীনে এই বাস্তুচ্যুত প্রান্তিক মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে ভারত উপমহাদেশেও সঙ্কট রয়েছে।
শুধু মানুষের কার্যকলাপ নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারিও প্রান্তিকদের বিপাকে ফেলছে। ঘরছাড়া করছে। ভারতের বিভিন্ন দ্বীপে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ। প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ২০২০ সালের মধ্যে শুধু ভারতেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এদেশে মানুষের বাস ও চাষযোগ্য ভূমির ১০ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে বা নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে অসমে ৪০ শতাংশ জমি বিলীনের পথে। ২০১৭ সালে ভুরগাঁও অঞ্চলে ৪০টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদের ভাঙনপ্রবণ এলাকাতে জীবন-জীবিকা থেকে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন অসংখ্য প্রান্তিক মানুষ।
হিমালয়, কারাকোরাম এবং হিন্দুকুশ পর্বতে প্রায় ৫৫,০০০ হিমবাহ আছে। এই হিমবাহ থেকে সৃষ্ট গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্রের তীরে বাস করে ৭৫ কোটি মানুষ। হিমবাহে গলন শুরু হলে বাস্তুচ্যুত হবে কোটি কোটি মানুষ। নতুন করে বহু মানুষ হবেন জলবায়ু শরণার্থী।
২০০৯ সাল থেকে আয়লা, বুলবুল, আম্ফান ও অতি সম্প্রতি ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় রাজ্যের বিভিন্ন উপকূলবর্তী জেলার নিম্নবিত্ত প্রান্তিক মানুষের জীবনে চরম অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছে। ২০২১ সালের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে এই অঞ্চলের ঘোড়ামারা দ্বীপ পুরোপুরিভাবে জলের তলায়। গৃহহীন হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝাপ্রবণ এক দেশ। সমাজ-গবেষক ব্রাউন জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বন্যার কারণে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতবর্ষে চলে আসতে বাধ্য হন। ব্রাজিলের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের গবেষণায় উঠে এসেছে, দরিদ্র অঞ্চলগুলি তুলনামূলকভাবে বড় শহরগুলির থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতবর্ষে প্রধানত দুই ধরনের অভিবাসন হতে পারে। প্রথমত, খরার প্রবণতা, ভূমিভাগের মরুভূমিতে রূপান্তর, সমুদ্রপৃষ্ঠে জলস্তরের বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়া ইত্যাদি। দ্বিতীয় আর এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে পারে। যেমন, প্রতিবেশী দেশ থেকে অভিবাসনের হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে যেতে পারে। আনুমানিক তিন লাখ শ্রমিক প্রতি বছর ওড়িশার খরাপ্রবণ এলাকা বলাঙ্গির জেলা থেকে বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়।
শুধুমাত্র সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভারতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মুম্বই ও কলকাতার মতো ভারতের বড় শহরগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ার কারণে ঝুঁকির মুখে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের ৩২ শতাংশ ভূমিভাগ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। আশঙ্কা, জলোচ্ছ্বাস ও অতি প্লাবনের কারণে প্রতিবছর ৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
এবার এই প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন দিলে তাঁদের সঙ্গেই একটা দীর্ঘ ইতিহাস, সংস্কৃতি অবলুপ্ত হবে। একইভাবে তারা ঘরছাড়া হলেও তাঁদের ইতিহাস মাটিচাপা পড়ে যাবে।
Mir Afsar Ali: এত বছরের 'জার্নি' শেষ! মির্চি ছাড়লেন মীর
Roddur Roy: কী কাণ্ড! কলকাতার পুজোয় এবার মহিষাসুরের জায়গায় রোদ্দুর রায়, মূর্তি গড়ার প্রস্তুতিও শুরু!
Thief In Kalighat: রথযাত্রার দিন কালীঘাটের এই বাড়িতে চুরি করতে এসেছিল চোর, তারপর যা হল...
ছোট্ট গ্যারাজে পথচলা শুরু টেকনো ইন্ডিয়ার, ২৫ বছরে স্বপ্নের স্বপ্নপূরণ নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের