আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রয়াত হলেন মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, অধ্যাপক ৮২ বছর বয়সে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক মানবেন্দ্র ১৯৩৮ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয় ও পোল্যান্ডের ভাশভি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায় অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজেকে সঁপেছিলেন অনুবাদের কাজে। ছোটদের জন্য বিদেশি গল্পের বাংলা অনুবাদ থেকে মার্কেজের বঙ্গানুবাদ– তাঁর বিস্তার বহুমুখী। বাংলা সাহিত্যে বিদেশি (শুধু ইংরেজি নয়) সাহিত্যরস জুগিয়েছিলেন এই মানুষটিই। এডগার অ্যালেন পো থেকে জুল ভের্ন– বাংলা শিশু সাহিত্যে তাঁর অবদান অনঃস্বীকার্য। শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘খগেন্দ্র মিত্র স্মৃতি পুরস্কার’, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ পেয়েছিলেন। পাবলো নেরুদা, লাতিন আমেরিকার উপন্যাস সমূহ, হুয়ান রুলফোর কথাসমগ্র, শার্ল পেরোর রূপকথা, মিরোস্লাভ হলুবেরের কবিতা, নিকানোর পাররার কবিতা, পিটার বিকসেল, একাধিক স্প্যানিশ গল্প ইত্যাদি অনুবাদের জন্য ভারতীয় সাহিত্য অ্যাকাডেমি তাঁকে ‘অনুবাদ পুরস্কার’ দিয়েছিল। শুধু অনুবাদই নয়। তিনি মৌলিক রচনার সম্রাট ছিলেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক স্যমন্তক দাস বললেন, ‘যঁারা ইংরেজি ভাষায় সড়গড় নন, তাঁরা বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্য বাংলা ভাষায় খুব অনায়াসেই পড়তে পেরেছেন। গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদের মধ্যে বলব, লাতিন আমেরিকার সাহিত্য, স্প্যানিশ সাহিত্য, ইত্যাদি। তাঁর একমাত্র কৃতিত্ব দিতে হয় মানবেন্দ্রবাবুকে।’ বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জয়দীপ ঘোষের মতে, ‘তাঁর সরাসরি ছাত্রছাত্রী না হলেও বলা যেতে পারে, তুলনামূলক সাহিত্যের প্রতিটি পড়ুয়া তুলনামূলক সাহিত্য কেমন করে পড়তে হয়, তা জেনেছেন মানবেন্দ্রবাবুর মাধ্যমেই। তাঁর দু’টি মৌলিক বই একারণে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল, ‘বাস্তবের কূহক, কূহকের বাস্তব’। এটি একটি প্রবন্ধ। ম্যাজিক রিয়্যালিজম, লাতিন আমেরিকার সাহিত্য নিয়ে লেখা। ‘আত্মহত্যার অধিকার এবং অন্যান্য সনদ’। ভারতীয় সাহিত্য ও বিদেশি সাহিত্যকে পাশাপাশি রেখে কীভাবে পড়তে হয়, তা নিয়ে এই দ্বিতীয় বইটি।’