আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি! তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্যই রাখলেন না মমতা ব্যানার্জি। এই ঘটনায় রীতিমতো উত্তাল গোটা রাজনৈতিক মহল। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল বানর সেনা এই কাজ করেছে। ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান ভালো না খারাপ, এটা এই মুহূর্তে বিচার্য্য নয়। বিচার্য্য হল স্থান–কাল–পাত্র। নেতাজির জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে যে এই স্লোগান দেওয়া যায় না, এই শিষ্টাচার, সৌজন্য, নিয়ম–রীতিটুকু এঁরা জানেন না। আর এই কারণেই আমরা ‘বহিরাগত’ শব্দটা ব্যবহার করি। এটার অভিধানগত অর্থ ধরলে হবে না। যাঁরা বাংলার আত্মাকে আহত করছেন, যাঁরা এই ঘটনার পক্ষে কথা বলছে, এটা তাঁদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলায় যাঁরা এই অপসংস্কৃতি ঢোকাতে চাইছেন, তাঁদের রোখা যে কতটা জরুরি, সেটা বাংলার মানুষ নিজেরাই অনুভব করছেন। মু্খ্যমন্ত্রী যেভাবে প্রতিবাদ করেছেন, সঠিক কাজ করেছেন।’
এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেওয়ার জন্য চেয়ার ছেড়ে ওঠার পরই দর্শকাসন থেকে ধেয়ে আসে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান। তা শুনে ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘আমার মনে হয়, সরকারি অনুষ্ঠানের একটা শালীনতা থাকা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের সভা নয়। জনতার কর্মসূচি। এই অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু কাউকে ডেকে এনে অপমান করা উচিত হয়নি। আমি এই অনুষ্ঠানে আর কিছু বলতে চাই না। জয় হিন্দ! জয় বাংলা!’
ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীকেই আক্রমণ করে বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় টুইটারে লেখেন, ‘জয় শ্রী রাম ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে বলে এই বিষয়টাকে অপমান হিসেবে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা কী ধরনের রাজনীতি!’ পাল্টা জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, ‘এখন যদি কৈলাসবাবুর কাছ থেকে বাংলার সংস্কৃতির পাঠ নিতে হয়, তাহলে এই বাংলার আর কোনও ঐতিহ্য থাকবে না। গরিমা থাকবে না। সাহিত্য–সংস্কৃতির বাংলা থাকবে না। আজ যে ঘটনাটা ঘটেছে, তা গোটা জাতির পক্ষে লজ্জাজনক। বাংলার মাথা হেট করে দিয়ে গেছেন। মু্খ্যমন্ত্রী সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে প্রতিবাদ করেছেন। দর্শকাসনে বিজেপি নিজেদের লোক ঢুকিয়ে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে অপমান করার চেষ্টা করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। নেতাজি জন্মদিবসকে কালিমালিপ্ত করল বিজেপি। আয়োজকদের উচিত ছিল, এ ব্যাপারে সতর্কতা পালন করার।’
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এবং বাংলায় বিজেপির সহ–পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইটারে লেখেন, ‘বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে ভাষণ না দিয়ে তাঁকেও অপমান করলেন তিনি। বাংলা এটা বরদাস্ত করবে না।’ তবে গোটা ঘটনার বিরোধিতা করেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে জয় শ্রী রাম স্লোগান তোলা উচিত হয়নি, এটা ঠিকই। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। এখানে কাউকে ছোট বা বড় করার কিছু নেই!’ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এইরকম সরকারি অনুষ্ঠানে জয় শ্রী রাম স্লোগান তোলা খুব ভুল কাজ হয়েছে। যাঁরা মনে করেছেন, আমরা মোদিজিকে খুশি করার জন্য এই স্লোগান দিচ্ছি, আমার নিশ্চিত করে বলতে পারি, এইটা শোনার মোদিজি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যাননি।’ তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছেন তৃণমূল সংসদ সদস্য নুসরত জাহানও। টুইট করে তিনি লেখেন, ‘এমন ঘটনার আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান মেনে নেওয়া যায় না।’