আজকালের প্রতিবেদন: কলকাতায় ফের হার্ট প্রতিস্থাপনের নজির। ৫২ বছরের মহিলার হৃদয় পেলেন ৪১ বছরের এক ব্যক্তি। শহর কলকাতা অঙ্গদানের ব্যাপারে ক্রমশই যে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে, এ ঘটনা তারই প্রমাণ। আগস্টের শেষ সপ্তাহের পর এক মাস পুরো না–হতেই ফের মঙ্গলবার রাতে মেডিকা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ব্রেনডেথ হয় দমদমের মতিঝিল কলোনির বাসিন্দা কৃষ্ণা মিস্ত্রির। অঙ্গদাতার হার্ট ছাড়াও দুটি কিডনি এবং কর্নিয়া দান করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। লিভার প্রতিস্থাপনযোগ্য ছিল না বলে নেওয়া হয়নি। তিনজন মুমূর্ষু রোগী নবজীবন পেলেন। রাজ্যে এ–পর্যন্ত মোট ১০টি হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হল। সকলের অস্ত্রোপচার সফল। তবে রোগীদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা।
ফর্টিস হাসপাতালে হার্টের সমস্যার চিকিৎসা চলছিল ৪১ বছরের ওই ব্যক্তির। তঁার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া বঁাচার কোনও উপায় ছিল না। বুধবার দুপুর আড়াইটের মধ্যে গ্রিন করিডরে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে হার্ট নিয়ে পৌঁছোন চিকিৎসকেরা। কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জেন ডাঃ তাপস রায়চৌধুরির নেতৃত্বে প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধেবেলায়। এ নিয়ে ফর্টিসে মোট পঁাচটি হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সফল হল।
কৃষ্ণাদেবীর একটি কিডনি পান মুকুন্দপুর আরএন টেগোর হাসপাতালের এক রোগী। আগের দিন রাতে খবর পাওয়ার পরই বর্ধমান থেকে হাসপাতালে চলে আসেন ৪৯ বছরের বংশী বনশল। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রনিক কিডনি ডিজিজে ভুগছিলেন। চলছিল ডায়ালিসিস। হাসপাতালে আড়াইটের পর কিডনি নিয়ে চিকিৎসকেরা পৌঁছোনোর পরই বেলা তিনটে থেকে অস্ত্রোপচার শুরু হয় নেফ্রোলজিস্ট ডাঃ দীপকশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে। সন্ধে পৌনে ছ’টা নাগাদ কিডনি প্রতিস্থাপন সফল ভাবে শেষ হয়। এখন আইসিইউ–তে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তঁাকে, যাতে কোনও সংক্রমণ না হয়। অঙ্গদাতার আরেকটি কিডনি পান এসএসকেএমে ৩১ বছরের এক যুবক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে রবিবার মেডিকা–তে ভর্তি হন কৃষ্ণা মিস্ত্রি। ইমার্জেন্সিতে যখন রোগীকে আনা হয়েছিল, তখন থেকেই কোমায় চলে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তঁাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সিটি স্ক্যান করে চিকিৎসকেরা দেখেন, মস্তিষ্কের ভিতরে বঁা দিকে ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমারেজ হয়েছে। রোগী ক্রমশই ব্রেনডেথের দিকে এগোচ্ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা প্রথম থেকেই অঙ্গদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। মঙ্গলবার চিকিৎসকেরা ব্রেনডেথ ঘোষণা করেন। কৃষ্ণাদেবীর স্বামী বিমান মিস্ত্রি সম্মতি দেওয়ার অঙ্গদানের যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়। যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য দপ্তরে সঙ্গে। মেডিকা–র চেয়ারম্যান ডাঃ অলোক রায় বলেন, ‘অঙ্গদানের মতো মহৎ কাজ কখনওই সম্পন্ন হত না, যদি না দাতার পরিবার রাজি হতেন।