Operation: শিশুর পিত্তনালীতে জটিল অস্ত্রোপচার এন আর এস–এ

‌‌বিভাস ভট্টাচার্য: সমস্যাটা শুরু হয়েছিল তিন বছর বয়স থেকে।

মাঝে মাঝেই জ্বরে ভুগত হাওড়া রাজাপুরের বাসিন্দা সাত বছরের অদ্রিজা চাউলি। সঙ্গে পেটে ব্যথা, খিদে না থাকা। অথচ রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছিল সে জন্ডিসে আক্রান্ত নয়। ওষুধ খেয়ে সাময়িক রোগ চাপা পড়ত। আবার ক‌‌’‌দিন বাদেই সমস্যা দেখা দিত। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে অদ্রিজার অভিভাবকরা তাকে নিয়ে আসেন এন আর এস হাসপাতালে। পরীক্ষার পর তাকে পাঠানো হয় হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে। সেখানে ইউএসজিতে ধরা পড়ে অদ্রিজার সমস্যা। দেখা যায় অদ্রিজার পিত্তনালি দিয়ে পিত্ত বেরোতে পারছে না। নালি ফুলতে শুরু করেছে। যার জন্য পেটে ব্যথা–সহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।‌ চিকিৎসার ভাষায় এই রোগটিকে বলা হয় ‘‌কোলেডোকাল সিস্ট’‌। দীর্ঘদিন ধরে থাকলে যা লিভারকে পুরোপুরিভাবে নষ্ট করে দেয় এবং রোগী সিরোসিস অফ লিভারে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। 
এবিষয়ে এনআরএস–এর পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা: কল্যাণী সাহা বসু বলেন, ‘‌একটা ধারণা চালু আছে সিরোসিস অফ লিভার শুধুমাত্র বড়দেরই হয়। যেটা আদৌ ঠিক নয়। বাচ্চাদেরও এই রোগ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে যদি পিত্ত না বেরোতে পারে তবে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ক্ষতিটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে সেখান থেকে সিরোসিস অফ লিভারের দিকে এগোয়।’‌ গত ২৫ জানুয়ারি এনআরএস–এর চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে পিত্তনালিটি বাদ দিয়ে দেন এবং ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে সামান্য অংশ নিয়ে পিত্ত বের হওয়ার জন্য একটি নালি তৈরি করে দেন। এই অস্ত্রোপচার সময় সাপেক্ষ এবং যথেষ্টই ঝুঁকিবহুল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রোগী এখন সুস্থই আছে। ডা: কল্যাণী সাহা বসুর নেতৃত্বে এই অস্ত্রোপচারে ছিলেন ডা: সামন্ত্যক বসু, ডা: দেবলীনা কর্মকার এবং ডা: দেবযানী দাস। ছিলেন দুই অ্যানেসথেটিস্ট ডা: মৌসুমী খাঁড়া এবং ডা: জয়ন্ত চক্রবর্তী। 
এই রোগের কারণ কী? পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান বলেন, ‘‌কোনও কারণ নেই। জন্মগত ত্রুটি। বাচ্চার যদি জ্বর, খিদে না থাকা, পেট ব্যথা বা জন্ডিসের মতো রোগ হয় তবে অবশ্যই ইউএসজি করে দেখতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি এই ধরনের কোনও সমস্যা ধরা পড়ে তবে দেরি না করে পেডিয়াট্রিক সার্জেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দেরি হয়ে গেলে কিন্তু সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।’‌ জানা গেল, গত ১৮ জানুয়ারি এখানেই মুর্শিদাবাদের আয়েশা খাতুন নামে এক বছর দুই মাসের একটি শিশুরও এই অস্ত্রোপচার হয়েছে। ভাল হয়ে সে এখন ‘‌ফলো আপ ট্রিটমেন্টের’‌ মধ্যে আছে। একটি পিত্তনালীর মাপ সাধারণত থাকে ১ সেমি। অদ্রিজার ক্ষেত্রে সেটা ফুলতে ফুলতে হয়ে গেছিল ১০ সেমি। ফলে অপারেশন ছিল যথেষ্ট জটিল। এই সাফল্যে হাসি ফুটেছে অদ্রিজা, আয়েশা আর তাদের বাড়ির লোকেদের মুখে।

আরও পড়ুন:‌ ধূপ থেকে আগুন, পুড়ে ছাই দোকান

আকর্ষণীয় খবর