Mamata Banerjee: নিজের দেশকে ভুলবেন না, প্রবাসী ভারতীয়দের অনুরোধ মমতার

রিনা ভট্টাচার্য, বার্সিলোনা: প্রবাসী ভারতীয়দের ভালবাসায় বাঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

শুধুই বাংলা নয়, ভারতের প্রতিনিধি হয়ে হাজির হলেন বার্সিলোনায় বসবাসকারী ভারতীয়দের কাছে। দর্শকাসনে তখন বিশিষ্ট বাঙালি, সিন্ধ্রি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি মানুষজন। এক কথায়, এল্‌ প্যালেস হোটেলের গ্রান ভিয়া হল তখন যেন মিনি ভারত। অনু্ষ্ঠানের শুরুতেই ভারতের পক্ষ থেকে, বাংলার পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শোনালেন সুসংবাদ, আজই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন। করতালিতে ভরে গেল হল। সমাপতনই বোধ হয়, অনুষ্ঠানে প্রবাসী ভারতীয় শ্রেয়সী নাগের পরিচালনায় পাঞ্জাবি, সিন্ধ্রি, গুজরাটি কন্যারা পরিবেশন করলেন সেই রবীন্দ্রনাথেরই গান, ‘‌আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’‌ এবং ‘‌যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’‌। শ্রেয়সী নাগ তো ‘‌প্রধানমন্ত্রী’‌ বলে তাঁকে সম্বোধনই করে ফেলেন। মুখ্যমন্ত্রীও হেসে ফেলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক। বার্সিলোনার ভারতীয় সমাজের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় দাশগুপ্ত।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বার্সিলোনায় বসবাসকারী ভারতীয়দের কাছে একটাই দাবি করলেন, এই শহরে পড়াশোনা করুন, চাকরি করুন, ব্যবসা করুন। কিন্তু ভুলবেন না নিজের দেশকে, নিজের রাজ্যকে, আমাদের বাংলাকে। তিনি বলেন, ‘‌বাংলা এখন বদলে গিয়েছে। শিক্ষা থেকে শিল্প, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যে উন্নতি হয়েছে তা বিশ্বমানের। বিশ্বের দরবারে পর্যটন ক্ষেত্রে বাংলা এখন প্রথম সারিতে। বাংলার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে। ইউনেস্কো বাংলাকে আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল হিসেবে ঘোষণা করেছে। এদিন প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে বাংলার ক্রীড়ার উন্নয়নের দিকগুলি তিনি তুলে ধরেন। এর পরেই তিনি সভাকক্ষে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডানের তিন কর্মকর্তা দেবাশিস দত্ত, রূপক সাহা ও ইস্তিয়াক আহমেদের সঙ্গে তঁাদের পরিচয় করান। হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাকক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের কথা বলেন। জানান, বাংলায় মেসি–‌রোনাল্ডো তৈরি করার জন্য উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। কলকাতায় লা লিগা অ্যাকাডেমি গড়ার কথাও জানান তিনি। ফের করতালিতে ফেটে পড়েন ফুটবলের শহরে বসবাসকারী ভারতীয়রা। অ্যাকাডেমির জন্য ইতিমধ্যেই যে সরকার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামকে চিহ্নিত করে ফেলেছে, সে কথাও এই মঞ্চে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েককে অনুরোধ করেন, তিনি যেন সেটি লা লিগা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব তঁাদের প্রতিনিধিদলকে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ভাষাভাষী ভারতীয়দের উদ্দেশে তিনি যে–‌বার্তা দিলেন, তাতে রাজনীতির ছিটেফোঁটা গন্ধও ছিল না। দুঁদে কূটনীতিকের মতো তিনি বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয় অভিবাসীদের কাছে তিনি বাংলার হলেও, ভারতেরই দূত। তাঁর কথায়, ‘‌আমি নিজেকে যত–‌না বাঙালি ভাবি, তার থেকেও বেশি ভারতীয় হিসেবেই ভাবতে ভালবাসি। ধর্মভেদ, জাতিভেদে যে তিনি বিশ্বাসী নন, তাও জানান। বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্যের বার্তাই ছিল তাঁর কথায়। বলেন, ‘‌কোনও অঙ্গ বাদ গেলেই মানবতা পূর্ণতা হারায়। আমি সম্পূর্ণ মানবতায় বিশ্বাসী।’‌ আবার হাততালির ঝড়। তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানান পরবাসী মানুষেরা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর সরকারের কৃতিত্বও তুলে ধরেন। নারী ক্ষমতায়নের বিষয়টি বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব পায়। তিনি কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা তুলে ধরেন শ্রোতাদের সামনে। জানান, নারীর ক্ষমতায়ন না–‌হলে সমাজ ঋদ্ধ হয় না। বলেন, ‘‌ভারতে এখন লোকসভা ও বিধানসভায় এক–তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের দাবি উঠছে। অবশ্য সংরক্ষণ ছাড়াই আমাদের দলের সাংসদদের ৩৫ শতাংশ মহিলা। বিধানসভা, পুর ও পঞ্চায়েতে এই হার আরও বেশি।’‌ সর্বধর্ম সহিষ্ণুতার ওপরেও তিনি জোর দেন। বলেন, ‘‌আমি চার্চেও যাই, ইদের নমাজেও যাই, মন্দিরে তো যাই–‌ই।’‌ রাজনীতি–‌ক্ষেত্রে পারস্পরিক সৌহার্দে যে তিনি বিশ্বাসী, সে কথাও জানান। বলেন, ভোটের সময় আমরা লড়াই করলেও অন্য সময়ে আমাদের পারস্পরিক সৌজন্যে কোনও ঘাটতি নেই।
এদিন গণিতবিদ কেশব চন্দ্র নাগের প্রপৌত্র অভীক নাগ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন, ফুটবলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিশু–কিশোরদের শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যাপারে তিনি সহায়তা করতে চান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান। একই সঙ্গে তাঁর পরিচয় জানার পরে বলেন, ‘‌হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কে সি নাগের বাড়িটি যাতে হেরিটেজ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা যায়, তার জন্য আপনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’‌ সব শেষে তিনি উপস্থিত ভারতীয়দের মধ্যে যাঁরা শিল্পপতি, তাঁদের কাছে বাংলায় বিনিয়োগের আবেদন জানান। আগামী বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান। 

আকর্ষণীয় খবর