সৌগত চক্রবর্তী: • শুরু হয়ে গেল জিৎ চক্রবর্তীর পরিচালনায় আপনার নতুন ছবি ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর শুটিং। এই ছবিতে আপনার অভিনীত চরিত্র কীরকম?
•• আমি এখানে আবগারি দপ্তরের ঘুষখোর অফিসার (হাসি)। কিন্তু কোনও একদিন হঠাৎই তার মনে হয় অনেক ঘুষ খেয়েছি, আর নয়। আসলে তার বিবেক জেগে উঠেছে তখন। আর তার ফলেই শুরু হয় নানা বিপত্তি। ছবির বিষয়ভাবনা ও চিত্রনাট্য আমার বেশ ভাল লেগেছে।
• ‘স্বচ্ছ ভারত’ নাম শুনলেই একটা শ্লোগানের কথা মনে আসে। এই ছবি কি সেই শ্লোগানকেই তুলে ধরছে?
•• একদমই নয়। কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে বলবে না এই ছবি। এতে শুধুমাত্র আজকের কিছু সমস্যার কথা আছে। তার সমাধান করতে গিয়ে আরো কী কী সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে তাই দেখানো হয়েছে কমেডির আদলে।
• এই যে একের পর এক ছবি করে চলেছেন, তার মধ্যে বেশ কিছু ছবি তো হারিয়ে যাচ্ছে। কোনও কোনওটা তো মুক্তিই পাচ্ছে না। এতে আপনার নিজের ইমেজের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয় না?
•• দেখুন, কোন ছবি ভাল হবে তা তো সবসময় আমার ধারণার সঙ্গে মেলে না। এই যেমন জিৎ নতুন পরিচালক। ওর আগের ছবি ‘শেষের গল্প’ আমার খারাপ লাগেনি। ওর বিষয়ভাবনা বা চিত্রনাট্যও ভাল লেগেছে। তাই ছবিটা ভাল হবে বলেই আমার ধারণা। ছবি মুক্তি পাওয়ার পর বোঝা যাবে সে ধারণা ঠিক কি না। আর, কিসের ইমেজ বলুন তো? ইমেজ যদি সত্যিই থাকে তাহলে ইন্ডাস্ট্রির এমন অবস্থা কেন? বাছবিচার করে কেই বা ছবি করেন? বছরে যাঁরা একাধিক ছবিতে অভিনয় করছেন তাঁরাও বেছে ছবি করেন না, আর বছরে যাঁরা একাধিক ছবি পরিচালনা করছেন তাঁরাও বেছে ছবি করেন না। সত্যজিৎ রায় তাঁর সারা জীবনের কেরিয়ারে ক’টা ছবি করেছেন? আবার অনেকে ৫০-৬০টা ছবি করে ফেলেছেন, কেউ মনেও রাখেনি।
• এই যে অসংখ্য ছবিতে অসংখ্য চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন, তাতে অভিনীত চরিত্রগুলো সম্পর্কে হোমওয়ার্ক করার সময় পান?
•• সেরকম করে হোমওয়ার্ক আমি করি না। আমি একজন অভিনেতা। তাই নানারকম চরিত্র আমার কাছে আসবে, এবং সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের আশেপাশে নানারকম মানুষ আছেন। আমাকে শুধু চোখ আর কান খোলা রাখতে হয়। তাতেই অভিনীত চরিত্রগুলো আমার রাডারে ধরা পড়ে যায়। তাই আলাদাভাবে হোমওয়ার্ক করার দরকার হয় না।
• আপনার অভিনয় জীবন শুরু থিয়েটার থেকে। ‘চার্বাক’-এ অভিনয় করতেন আপনি। এখন আর থিয়েটার করছেন না কেন?
•• আসলে থিয়েটার করতে গেলে যে সময়টা দিতে হয় সেটা আপাতত আমার কাছে নেই। আর অভ্যেসটাও চলে গেছে। অভ্যেসের মধ্যে থাকলে কাজটা অবশ্য খুবই সহজ। কিন্তু অভ্যেসের মধ্যে না থাকলেই কঠিন। ধরুণ, দুম করে যদি আগামীকালই আমাকে মঞ্চে উঠে অভিনয় করতে বলা হয়, দ্যাট উইল বি ভেরি ডিফিকাল্ট। তবে ইচ্ছাটা কিন্তু যায় নি। আসলে অভ্যেসের মধ্যে ঠুকতে গেলে আবার সময়টা মাস্ট।
• কলকাতায় তো এখন ‘বব বিশ্বাস’-এর শুটিং চলছে। এই চরিত্রের শুরুটা হয়েছিল তো আপনার হাতেই। আবার কেন অভিনয় করলেন না আপনি? প্রস্তাব আসেনি? না কি অন্য কোনও কারণ আছে?
•• প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমিই ডেট দিতে পারিনি।
• খারাপ লাগছে না?
•• কেন খারাপ লাগবে? আমার বরং বেশ মজাই লাগছে। স্বয়ং ‘শাহেনশা’ পরিবারের রাজকুমার এই চরিত্রে অভিনয় করছেন। আমার তো গর্ব হচ্ছে তার জন্যে। ‘কাহানি’ ছবিতে মোট পাঁচদিনের কাজ ছিল আমার। স্ক্রিন প্রেজেন্স সাকুল্যে নয় মিনিট। তার মধ্যেই ভারতীয় দর্শকের চোখে এতটাই ধরা পড়েছিলাম যে, আবার সেই চরিত্রকে কেন্দ্রিয় চরিত্র করেই তৈরি হচ্ছে ‘বব বিশ্বাস’। (হাসতে হাসতে) ওর মধ্যেই আমি যা করার করে দিয়েছি। আমি তো ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে গেছি। এবার অভিষেকের পালা।
• সিনেমায় আপনার সেরা অভিনয় কোনটা বলে মনে করেন?
•• নীলকণ্ঠ বাগচী। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে। ঋত্বিক ঘটকের জীবনের ছায়া অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল চরিত্রটা। এখনও পর্যন্ত আমার সবচেয়ে কাছের চরিত্র ওটাই। বেশ কঠিন চরিত্র। ফার্স্ট ক্নাস ফার্স্ট হয়েছিলাম চরিত্রটায় অভিনয় করে।
ছবি: সুপ্রিয় নাগ