মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

Education Policy: জাতীয় শিক্ষানীতি:‌ প্রাপ্তি

Rajat Bose | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০ : ২১


দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অভিমুখ নির্ধারণে ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। তিন বছর পেরিয়ে এসে প্রাপ্তি ও লক্ষ্যপূরণের হিসেব–নিকেশ করলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের ডেপুটি ডিরেক্টর কৌশিক সরকার


শিক্ষাই সার্বিক উন্নয়নের ভিত্তি। সেই কারণেই স্বাধীনতালাভের পরে ভারত সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিসাধন। স্বাধীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে মজবুত করার লক্ষ্যে বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং সুনির্দিষ্ট শিক্ষানীতি প্রণয়নও তারই একটা অংশ। শিক্ষা কমিশনের (‌১৯৬৪–৬৬)‌ সুপারিশ মেনে ১৯৬৮ সালে দেশের প্রথম শিক্ষানীতি প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬–তে জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষিত হয়, যা ১৯৯২–তে ফের সংশোধন করা হয়। এর দীর্ঘ সময় পরে ২০২০–তে ভারত একবিংশ শতকের দিকে তাকিয়ে দেশের প্রথম ও সার্বিক শিক্ষানীতি প্রকাশ করে।
বর্তমানে আমরা সকলেই মোটামুটি জেনে গিয়েছি, স্কুল ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির কারণে কী কী বদল আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। তবে, নতুন শিক্ষানীতি চালুর পরে তিন বছর পেরিয়ে এসে বুঝে নেওয়ার এটাই আদর্শ সময়, লক্ষ্যপূরণের পথে কতটা এগোনো গেল?‌ জাতীয় শিক্ষানীতি কি ঠিক পথে এগোচ্ছে?‌ আগামী দশকে এটি কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে?‌

প্রাপ্তির ভাঁড়ার
আসুন দেখি, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণার চল্লিশ মাস পরে এর থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা ঠিক কী কী পেয়েছি।
স্কুলশিক্ষা স্তরে
• পিএম শ্রী স্কুল:‌ গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে ‘‌রাইজিং ইন্ডিয়া স্কিম’‌–এর অধীনে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ অনুসারে ১৪,৫০০ স্কুলের উন্নতিকল্পে ২৭ হাজার কোটির তহবিল গড়া হয়েছিল। জাতীয় শিক্ষানীতির তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২৯ জুলাই, ২০২৩ এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৬৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
• নিপুণ ভারত:‌ শিক্ষা মন্ত্রকের স্কুলশিক্ষা ও সাক্ষরতা দপ্তর ৫ জুলাই, ২০২১ এই প্রকল্পটি চালু করে যার মূল লক্ষ্য ছিল ২০২৬–২৭ সালের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিটি পড়ুয়া যেন সাক্ষরতা ও নম্বর চেনার প্রাথমিক জ্ঞানটুকু অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিত করা। ২০২০–২২–এর ‘‌পারফরমেন্স গ্রেডিং ইনডেক্স ফর ডিস্ট্রিক্টস’‌ অনুসারে ২০১৯–২০–এর তুলনায় প্রায় ১৬৬টি জেলায় শিক্ষার্থীদের কুশলতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
• স্কুলশিক্ষার জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো (‌এনসিএফ–এসই)‌:‌ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০–এর সফল রূপায়ণে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক ২০২২ সালেই প্রাক্‌–প্রাথমিকের জন্য এনসিএফ–এফএস (‌ফাউন্ডেশন স্টেজ)‌ ঘোষণা করেছিল, তবে ২০২৩–এর ২৩ আগস্ট সম্পূর্ণ স্কুলশিক্ষার জন্য ঘোষিত এনসিএফ–এসই–এর সঙ্গে এটি মিশে গেছে। এই প্রকল্প অনুযায়ী পাঠ্য বিষয়বস্তু বাছার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের সামনে অনেক বেশি বিকল্পের সুবিধা থাকবে, ভারতীয় ভাষাগুলির ওপর আরও গুরুত্ব আরোপ করা হবে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২৪ অর্থাৎ, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এনসিএফ–২০২৩ অনুসারী পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। দুটি বোর্ডে পরীক্ষা দেওয়ার মতো বিকল্পও পরবর্তীতে চালু হবে।
• বিদ্যা প্রবেশ:‌ প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এনসিইআরটি ‘‌বিদ্যা প্রবেশ’‌‌ নামের তিন মাস মেয়াদি এই ‘‌খেলার মাধ্যমে শিক্ষা’‌ মডিউলটি চালু করেছে। ২০২২–২৩ থেকে এখন পর্যন্ত সিকিম, মণিপুর, কেরালা বাদে ৩৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এটি চালু করা গেছে।
• হোলিস্টিক প্রোগ্রেস কার্ড (‌এইচপিসি)‌:‌ সিবিএসই, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠন, নবোদয় বিদ্যালয় সংগঠন, রাজ্যগুলির প্রতিনিধি এবং জ্ঞান প্রবোধিনীর থেকে তথ্য নিয়ে এটি চালু করা হয়। ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ফাউন্ডেশন ও প্রিপারেটরি পর্যায়ে এটির প্রয়োগ হচ্ছে।
• ইন্টিগ্রেটেড টিচার এডুকেশন প্রোগ্রাম (‌আইটিইপি)‌:‌ জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই সামগ্রিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর জন্য ৪১টি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে আইআইটি, এনআইটি, আরআইই এবং সরকারি কলেজও রয়েছে।
• উল্লাস:‌ এটি একটি মোবাইল অ্যাপ এবং এর পুরো কথাটি হল ‘‌আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ লাইফলং লার্নিং ফর অল ইন সোসাইটি’‌ যা ২৯ জুলাই, ২০২৩ থেকে চালু হয়েছে, ব্যয়বরাদ্দ ১০৩৭.‌৯০ কোটি টাকা। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কোনও নিরক্ষর ব্যক্তিকে শিক্ষাদানে সহায়তা করাই এর লক্ষ্য।
উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে
• ন্যাশনাল ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক:‌ স্কুল, দক্ষতা ও উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সম্মিলিত প্রয়াসে ১০ এপ্রিল, ২০২৩ এটি চালু হয় যার মাধ্যমে শিক্ষাগত গ্রেড, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি ও প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণটাই একসঙ্গে পাওয়া যাবে। বহুমুখী শিক্ষা, জীবনভর প্রশিক্ষণ, পূর্ব–প্রশিক্ষণের স্বীকৃতির পাশাপাশি বহুমুখী প্রবেশ বা নিষ্ক্রমণ, বিভিন্ন স্ট্রিমের মধ্যে আরও সহজ অভিগমনে এটি সহায়ক হবে।
• ন্যাশনাল হায়ার এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক:‌ আন্ডারগ্র‌্যাজুয়েট স্তরের প্রথম বর্ষ থেকে ডক্টরাল প্রোগ্রামের মধ্যে (‌লেভেল ৪.‌৫ থেকে ৮)‌ যোগ্যতার উন্নয়ন, শ্রেণিবিভাগ ও স্বীকৃতির হাতিয়ার এটি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোর্স বা শিক্ষার তুলনা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এটি দারুণ সহায়ক হবে।
• অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট (‌এবিসি)‌ রেগুলেশন:‌ ২০২১–এর ২৯ জুলাই চালু হওয়ার পরে সেই বছরেই ২৮ ডিসেম্বর এটি ফের সংশোধন করা হয়। এবিসি হল একটি ডিজিটাল, ভার্চুয়াল বা অনলাইন স্টোর–হাউস যেখানে স্বার্থধারক হিসেবে প্রতিটি শিক্ষার্থী–সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। এখনও পর্যন্ত ১.‌১০ কোটি এবিসি আইডি সমেত ১৪১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
• উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বহুমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের নির্দেশিকা:‌ ২০২২–এর ২ সেপ্টেম্বর এটি চালু করা হয়। মূল লক্ষ্য, একক স্ট্রিমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বড় মাপের বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত করা এবং বহুমুখী শিক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো মজবুত করা।
• একইসঙ্গে দুটি অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম চালানোর নির্দেশিকা:‌ নির্দেশ জারির তারিখ ১৩ এপ্রিল, ২০২২। প্রচলিত ও অপ্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি, উভয় উপায়েই শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বহুমুখী পথনির্দেশ হিসেবে এটি কাজে আসবে।
• উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কর্মসূচিতে বহুমুখী প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ:‌ নির্দেশিকা জারির তারিখ ২৯ জুলাই, ২০২১। এর ফলে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ডিগ্রি প্রদানকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আন্তঃ বা অন্তঃ, যে কোনও কোর্স বাছা ও পরে অন্য বিষয়ে চলে যাওয়া সহজতর হবে। এই উদ্যোগ ড্রপ–আউটের হার কমানো, পাঠ্যবিষয়ের নমনীয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীর ক্রেডিট পাওয়া এবং উচ্চশিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও (‌জিইআর)‌ বাড়াতেও সহায়ক হবে। এখনও পর্যন্ত বহু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশিকা মেনে নিয়েছে।
• আন্ডারগ্র‌্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য কারিকুলাম ও ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক:‌ নির্দেশ জারির তারিখ ১২ ডিসেম্বর, ২০২২। এতে রয়েছে চয়েস–বেসড ক্রেডিট সিস্টেম, মাল্টিপল এন্ট্রি ও এগজিট অপশনের মতো বহুমুখী চিন্তাভাবনা যা এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যেতে, এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে কিংবা শিক্ষার বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিতে (‌অফলাইন, ওডিএল কিংবা অনলাইন, সঙ্গে হাইব্রিড মোড)‌, সার্টিফিকে
ডিপ্লোমা কিংবা ডিগ্রিস্তরে মাল্টিপল এন্ট্রি ও এগজিট অপশন, আগ্রহের যে কোনও ডিসিপ্লিনে যে কোনও কোর্স বাছার ক্ষেত্রে সহায়ক।
• প্রফেসরস অফ প্র‌্যাকটিস নিয়োগের নির্দেশিকা:‌ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ জারি হওয়া এই নির্দেশিকা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রয়োজনীয় প্রথাগত শিক্ষা ও প্রকাশনা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট শিল্পক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের শিক্ষাদানে নিযুক্ত করতে পারবে, যাঁদের বলা হচ্ছে ‘‌প্রফেসরস অফ প্র‌্যাকটিস’‌। এঁদের জন্য ইউজিসি–র তরফে একটি পোর্টাল চালু করা হয়েছে যেখানে ইতিমধ্যেই ১৫২টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৬৭১১ জন বিশেষজ্ঞের নাম নথিভুক্ত হয়ে গেছে।
• চার বছরের আন্ডারগ্র‌্যাজুয়েট প্রোগ্রাম:‌ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ১০৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে (‌যার মধ্যে ১৯টি কেন্দ্রীয়)‌ এই প্রোগ্রাম চালু হয়ে গেছে। এতে কোনও পড়ুয়া নির্দিষ্ট কোনও ডিসিপ্লিনে কোন বর্ষের পঠনপাঠন সম্পন্ন করেছে, সেই অনুযায়ী শংসাপত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
• ভারতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস:‌ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কোন শর্তে এদেশে তাদের ক্যাম্পাস চালু করতে পারবে, সেই সম্পর্কিত চূড়ান্ত নির্দেশিকা (‌খসড়াটি ২০২৩–এর জানুয়ারি সরকারি পোর্টালে দেওয়া হয়েছে)‌ খুব শিগগিরই প্রকাশিত হবে। এবিষয়ে ইতিমধ্যেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মউ স্বাক্ষরের কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
• এছাড়াও রয়েছে ইউজিসি (‌ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক ফর অনলাইন লার্নিং কোর্সেস থ্রু স্টাডি ওয়েবস অফ অ্যাক্টিভ লার্নিং ফর ইয়ং অ্যাসপায়ারিং মাইন্ডস)‌ রেগুলেশন, ২০২১ যার মাধ্যমে স্বয়ম প্ল্যাটফর্মে এমওওসিএস কোর্সগুলিতে ক্রেডিট ট্রান্সফার নিয়ন্ত্রণের শতকরা হার ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২৮৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রেডিট ট্রান্সফারের জন্য স্বয়ম কোর্স বেছে নিয়েছে।
এটা স্পষ্ট, জাতীয় শিক্ষানীতির শুরুটা বেশ ভালই হয়েছে। প্রয়োগ যথাযথ হলে জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে ভারত বিশ্বমানের জ্ঞান ও শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হবে, সেবিষয়ে সন্দেহের অবকাশ  





বিশেষ খবর

নানান খবর

রজ্যের ভোট

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া