সময়ের সঙ্গে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, অনিয়মিত জীবনধারা, শরীরচর্চা অভাব সহ বিভিন্ন কারণে অল্প বয়সিদের মধ্যেও বাসা বাঁধছে বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ। তবে জানেন কি এক বিশেষ খনিজ রয়েছে যা হৃদযন্ত্রকে প্রাণঘাতী সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে সেই তথ্য। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, শরীরে  পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। 

ডেনমার্কে পরিচালিত পটকাস্ট ট্রায়ালে প্রায় ১,২০০ জন হৃদরোগীকে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকের শরীরে ইমপ্ল্যাটেবল কার্ডিওভার্টার ডিফিব্রিলেটর (আইসিডি) বসানো ছিল, যা হঠাৎ হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে ব্যবহৃত হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই গবেষণায় দেখা যায়, যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা ৪.৫ থেকে ৫.০ এমএমওএল/এল-এর মধ্যে ছিল, তাদের হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা তুলনামূলক ভাল ছিল এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকিও কম দেখা গেছে।

আরও পড়ুনঃ আচমকা হার্ট অ্যাটাকের আগে জানান দেয় জিভ! কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন হৃদরোগের ঝুঁকি?

সাধারণত মানব দেহে খাবারই হল খনিজ উপাদানের উৎস। খনিজের চাহিদা মাত্র চার শতাংশ হলেও শরীরের জন্য তা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পটাসিয়াম কেন দরকার? আসলে পটাশিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ ও ইলেকট্রোলাইট। এটি হার্টের বৈদ্যুতিক সংকেত স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর অভাব হলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, পেশিতে টান, এমনকী অনিয়মিত হৃদস্পন্দন দেখা দিতে পারে। এছাড়াও পটাসিয়াম স্নায়ুতন্ত্র, পেশির গঠন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পটাশিয়ামের দৈনিক চাহিদা ২০০০ মিলিগ্রাম।


গবেষকদের মতে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখলে হৃদযন্ত্র অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারে। তবে সঠিক মাত্রা বজায় রাখার প্রয়োজন। কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়ামও সমানভাবে ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনি রোগীদের জন্য শরীরে বাড়তি পটাশিয়াম বিপদ ডেকে আনতে পারে। 


কোন খাবারে মেলে পটাশিয়াম

কলা, আলু ও মিষ্টি আলু, পালংশাক ও শাকসবজি, ডাল,অ্যাভোকাডো, কমলা ও লেবু জাতীয় ফল

এছাড়া প্রয়োজনে পটাশিয়াম সাপ্লিমেন্টও খাওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে সাপ্লিমেন্ট খেলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা সবসময় ভারসাম্যে রাখা জরুরি। অতিরিক্ত নুন খেলে যেমন হার্টে চাপ বাড়ে, তেমনি পটাশিয়ামের অভাব বা আধিক্য—দুটোই বিপজ্জনক। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস অথবা হৃদরোগীদের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।