আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানসিক অবসাদ কিংবা বিষণ্নতার মতো বিষয়গুলিকে একসময় ‘বড়লোকের অসুখ’ বলে অভিহিত করতেন অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে অনেকটাই। তাই এখন অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। এতো দিন মনে করা হত, মূলত মস্তিষ্কের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের ভারসাম্য বিগড়ে গেলেই মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়। সেই ধারণা থেকেই মনোবিদ্যার চিকিৎসকেরাও ওষুধ পত্র দিতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমন একটি তথ্য উঠে এসেছে যেটি বদলে দিতে পারে এই সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ।
আরও পড়ুন: ‘ভুল রাস্তায়’ সঙ্গম! বিয়ের চার বছরেও সন্তান না আসার পর সঠিক পদ্ধতি জানতে পারলেন দম্পতি
গবেষণা অনুযায়ী, ‘রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতা’র সঙ্গে আদৌ মানসিক অবসাদের সরাসরি যোগসূত্র আছে কি না তার পক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এমনই বিস্ময়কর দাবি উঠে এসেছে লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের নেতৃত্বে পরিচালিত এক যুগান্তকারী সমীক্ষায়। ‘মলিকিউলার সাইকিয়াট্রি’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই ‘আমব্রেলা রিভিউ’তে গত কয়েক দশকের নানা গবেষণা খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে উঠে এসেছে, এতদিন মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের হরমোনের ঘাটতি বা এর কার্যকারিতা হ্রাসকেই বিষণ্নতার মূল কারণ বলে মনে করা হত। কিন্তু এই প্রচলিত তত্ত্বের পক্ষে দৃঢ় বৈজ্ঞানিক কোনও প্রমাণ নেই। অথচ এই ধারণাকে ভরসা করেই তৈরি হয় বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ওষুধ। এই ওষুধগুলি সেরোটোনিনের অভাব পূরণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপযুক্ত প্রমাণ না থাকলেও এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ব জুড়ে বেড়েছে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ব্যবহারের প্রবণতা।
আরও পড়ুন: ছেলের শুক্রাণুতে সন্তানধারণ করলেন ৭০-এর অভিনেত্রী! সন্তান না নাতি? তুমুল বিতর্ক
গবেষণায় আরও একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গিয়েছে, মানসিক অবসাদ সম্পর্কে সচেতন প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, বিষণ্নতার নেপথ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভুল ধারণা রোগমুক্তির আশা কমিয়ে দেয়। অন্য দিকে থেরাপি বা জীবনধারায় পরিবর্তনের মতো ওষুধবিহীন চিকিৎসার পথ থেকেও মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়।
এর ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে দীর্ঘদিন অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ব্যবহার উল্টে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে গবেষকদের সতর্ক বার্তা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনা জরুরি। তাঁদের পরামর্শ, বিষণ্নতা মোকাবিলায় ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাত্রার চাপ, মানসিক আঘাত ও সামাজিক সমস্যার মতো দিকগুলিও খতিয়ে দেখা দরকার। প্রথমেই ওষুধের দিকে ঝোঁকার বদলে থেরাপি, চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ এবং জীবনধারার ইতিবাচক বদল আনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব কি না সেদিকটিও তলিয়ে ভাবা দরকার।

তথ্যসূত্র: মনক্রিফ, জে., কুপার, আর. ই., স্টকম্যান, টি., আমেনডোলা, এস., হেঙ্গার্টনার, এম. পি., ও হোরোভিৎজ, এম. এ. (২০২২)। মলিকিউলার সাইকিয়াট্রি।