নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রয়াত প্রবীণ অভিনেতা অমরনাথ মুখোপাধ্যায়।
বয়স হয়েছিল ৯০। গত তিন-চার মাস ধরে ফুসফুসে ফ্রাইব্রোসিস হয়েছিল। ফলে, শ্বাসকষ্টে ভুগতেন অভিনেতা। ফুসফুসে নিউমোনিয়ার প্যাচও ধরা পড়ে। খবর ছড়াতেই আর্টিস্ট ফোরাম শোকপ্রকাশ করে অভিনেতার আত্মার শান্তি কামনা করে। ব্যক্তিগত ভাবে আজকাল ডট ইনের কাছে শো জানান ফোরামের দিগন্ত বাগচী। আজকাল ডট ইন যোগাযোগ করেছিল একমাত্র সন্তান চন্দ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তিনিই তাঁর বাবার অসুস্থতার খবর জানান। প্রয়াত অভিনেতার স্ত্রী কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায় রয়েছেন। চন্দ্রদীপের কথায়, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই বাবার কষ্টটা শুরু হয়। গত এক মাস বেশি ভুগেছেন। সাত দিন তিনি হাসপাতালের বিশেষ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাতটায় বাবা আর নেই।’’ শুক্রবার সকালে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এদিন বিকেলে চন্দ্রদীপ প্রবীণ অভিনেতার অস্থি বিসর্জন দেন।
আরও পড়ুন: EXCLUSIVE: মণিরত্নমের ছবিতে প্রসেনজিৎ? গুঞ্জন, শুটিং করতে মুম্বইয়ে টলিউড ‘ইন্ডাস্ট্রি’?
বাবার কথা বলতে গিয়ে অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন চন্দ্রদীপ। ১৯৩৩-এর ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম। তাঁর বাবা হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও তাঁর আমলে জনপ্রিয় অভিনেতা। সাতের দশকে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন প্রয়াত অভিনেতা। চন্দ্রদীপের স্মৃতিতে বাবার অভিনয় এখনও স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, অভিনয় দুনিয়ার দিকপাল ব্যক্তিত্ব তাঁদের আত্মীয়। মা কৃষ্ণাদেবীর আপন মাসি-মেসো ছিলেন শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র। অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ের মামা আর এক কিংবদন্তি অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায়। সাল ২০০৫ থেকে প্রবীম অভিনেতা মুম্বইয়ের বাসিন্দা। অমরবাবুর শেষ অভিনয় ২০১১-য়। তরুণ মজুমদারের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ ধারাবাহিকে। পর্দায় তাঁর শেষ কাজ তরুণ মজুমদারের ‘আলো’। ধারাবাহিক ‘জননী’তেও তাঁর অভিনয় দেখার মতো ছিল। পরে ছেলের অনুরোধে এবং বার্ধক্যজনিত কারণে অভিনয় থেকে সরে আসেন।
বাবার কথাপ্রসঙ্গে চন্দ্রদীপ এও জানান, বাবা দুই যুগের অভিনেতা এবং অভিনয়কে খুব কাছে থেকে দেখেছিলেন। তিনি উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। তালিকায়, মেঘ কালো, হার মানা হার, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘ছিন্নপত্র’, ‘স্ত্রী’, ‘বসন্ত বিলাপ’
‘স্বয়ংসিদ্ধা’, ‘অগ্নিশ্বর’, ‘বিদ্রোহী’, ‘গায়ক’, ‘দেবীবরণ’-এর মতো ছবি। আবার বলিউডে দিলীপকুমার, অমিতাভ বচ্চন তাঁর সহ-অভিনেতা ছিলেন। পাশাপাশি তিনি একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন। তালিকায় ‘ব্যারিস্টার বিনোদ’, রমেশ সিপ্পির ‘কিসমত’। অমরনাথ মুখোপাধ্যায় একাধিক ছবিতে দাপুটে খলনায়কও ছিলেন। বাবাকে ওই চরিত্রে দেখে কেমন লাগত? চন্দ্রদীপের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে আলাদা করে কোনও ছাপ পড়ত না। জানতাম, সবটাই অভিনয়। আর দিনের শেষে উনি আমার বাবা। বরং, ওই ধরনের চরিত্রে বাবাকে সরু গোঁফে দারুণ লাগত।’’
এখনকার টলিউডের সঙ্গে কতটা যোগাযোগ ছিল তাঁর? চন্দ্রদীপ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন মু্ম্বইয়ে। এই প্রজন্মের সঙ্গে তাই কোনও সখ্য ছিল না। ফোনে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, চিত্রা সেন, দীপঙ্কর দে, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ বসু— এঁদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলতেন। শেষের দিকে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফুসফুসে সমস্যার কারণে কথা বলতেই কষ্ট হত তাঁর।